এই বঙ্গদেশে সেক্স নামের বস্তুটা বিশাল এক ট্যাবু। এমনকি নিজেদের শারীরিক বিন্যাসের কথাও ট্যাবু করে রেখেছি আমরা। আরে ভাই কি শরম, ইশ কি লজ্জা! নিজেদের শরীরটা নিয়েও আমরা এখন লজ্জা পাই, কি করবে লজ্জা না পেয়ে! কি করারই বা আছে আমাদের?
বাসায় ছোট্ট মেয়েটা একটু বড় হলে, মানে যখন তার বয়ঃসন্ধি শুরু হয়, শরীরের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন শুরু হয়। কী যে অত্যাচার শুরু করে বাড়ির মা, খালা, চাচি, ফুপু, দাদি, নানিরা! আর ইনারা কি না এই যুগের হয়েও যা নয় তা আচরন করেন। এই শোন এখন তোর এটা খাওয়া মানা, এই শোন এখন থেকে বাহিরে কম যাবি, কোনো ছেলেদের সঙ্গে খেলবি না, বেশি দৌড়ঝাঁপ করবি না, তোর কাপড় চোপর আলাদা রাখবি, ঐগুলো অপবিত্র, জায়নামাজ ধরবা না দাদির, তোমার শরীর নাপাক,তোমার ছোট ভাইকে একটু কম ছোঁবা, এখন বড় হচ্ছো তুমি, বাথরুমে এত সময় নিবা না, বারান্দায় বেশি যাবা না, এটা তুমি আর করবে না, সেটা তুমি করবে না- আরো কত বাধা নিষেধ।
এইযে কু-মুরুব্বিগণ, একটু যদি দয়া করে থামেন, আপনারা শুধু বাধা নিষেধের দেয়ালই তুলে যাচ্ছেন, একটিবারও তো স্পষ্ট করে বলছেন না তারা কেন সেগুলো করবে না, ঠিক বেঠিক বিচারে না গেলেও তো বলা উচিৎ যে কেন তাদের উপর এতো নিষিদ্ধকরণ।
এমনিতেই বয়ঃসন্ধির শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনে তাদের যে অভ্যন্তরীণ ও শারীরিক গঠনের যে তারতম্য হচ্ছে সেটা নিয়েই বেচারিরা এই ছোট্ট বয়সে কনফিউজড। তারা তো তাদের শরীরের আচরণ ঠিকঠাক মতন বুঝতেই পারছে না। তার উপর আপনারা এত নানান রকম বিধিনিষেধ দিয়ে, পাপ-নাপাক দিয়ে তাদের দেহ বিন্যাসটাকেই ঘেন্না ধরিয়ে দিচ্ছেন! তাদের শারীরিক বিকাশটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছেন!
শারীরিক পরিবর্তনকে বলছেন সমস্যা, তাদের শরীর বিন্যাসকে লজ্জা হিসেবে দেখাচ্ছেন, আপন মায়ের পেটের ছোট ভাইকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন! কেন, ভাইকে কি সে তার দেহের নতুন আবির্ভাব হওয়া মাসিকের রক্তে গিলে ফেলবে? এটা কি সঠিক শিক্ষা, তাদের অঙ্গ বিন্যাস হচ্ছে এটা মুখ ফুটে বাড়ির সবার সামনে বলুন। দরকার হলে ভাই, বাবা তাদেরকেও সামনে রাখুন। একটা একটা করে তার দেহের অঙ্গ গুলোর সাথে তার পরিচয় করানোটা মা-বাবা হিসেবে আপনাদের দ্বায়িত্ব, আর যদি লজ্জা পান প্লিজ বাচ্চা পয়দা দিয়েন না, আবারও বলছি প্লিজ বাচ্চা পয়দা দিয়েন না।
স্টুপিডিটি আপনারা মেইনটেইন করে আসছেন, এটা কন্টিনিউ করতে করতে এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে অধিকাংশ মেয়েই তাদের শরীর নিয়ে খুবই লজ্জাবোধ করে। আর এত 'চমৎকার' ব্যবহার তারা পায় এ সময়, যার জন্য তারা আজীবন নিজেদের শরীরকে সুন্দর আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য নিজেদের জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে ফেলে, পরিশেষে সেই চমৎকার ব্যবহারের দরুন সারাজীবন মানসিক অতৃপ্তিতেও ভোগে। লজ্জা সেসব বাবা-মায়েদের জন্য।
আর এ ব্যাপারে ছেলেরা যা শিক্ষা পায়, আসলেই এক আনার সামান্য বেশি কেউ পায়-ই না। ছেলেদের বয়ঃসন্ধিতে পরিবর্তনটা শারীরিক থেকে মানসিকভাবেই বেশী হয়। যেমন তাদের বয়ঃসন্ধিতে গলার স্বরে পরিবর্তন আসে, পিউবিক হেয়ার আসে, ঠোঁটের উপর পশমের রেখা উঁকি দিয়ে আসে, আরেকটা যেটা হয় তাদের অমেরুদণ্ডী যৌনাঙ্গে জোয়ারের সাথে এক্সট্রা ভাটাও আসে, ছেলেদের বেলায় সব থেকে বেশি পরিবর্তন আসে তাদের মনে সে সময়। আর যথারীতি আমাদের মা-বাবা, উনারা তো ভীষণ লাজুক খুবই লজ্জা পান, তাই ছেলেরাও বিশেষ করে সে সময় কোনো প্রোডাক্টিভ কথা তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে পায় না। তাদেরকে আর তাদের বাবা মা মেয়েদের সাথে খেলাধুলা করতে দেয় না, মিশতে দেয় না (আদিম কর্ম করার ভয়ই তার কারণ)।
আরে ছেলে বড় হয়েছে মেয়েদের সাথে এত ঘষাঘষি কিসের, শেয়ানা ছেলে যতই কাজিন হোক এক ঘরে রাখা যাবে না, এই হাফপ্যান্ট পড়া যাবে না গুনাহ, পায়ের লোম দেখানো যাবে না গুনাহ, বোগলের লোম দেখানো লজ্জা, এত বড় ছেলে মায়ের সাথে শোয় এখনও- সর্বনাশ! আমি ভাবতাম আমরা পর্নোগ্রাফি দেখা জেনারেশন খালি ডার্টি মাইন্ড নিয়ে ঘুরি, আমাদের মা-বাপ, খালা-চাচি, মামা-মামিদের মেন্টালিটিও উন্নত কিছু নয়। কারণ তাদের ধারণা সবাই বুঝি রসময় গুপ্তের বইয়ের চরিত্রের মতোই।
আগুন জ্বালানো শেখার বেশ কিছু দিন পর থেকেই তো মেয়েদেরকে ভোগের বস্তু বানিয়েছে সবাই মিলে, আর ছেলেগুলোকে সব মেশিনম্যান বানিয়েছে। একটাও বলতে পারে না ঠিকমতো তাদের অঙ্গের কার্যকারিতা, কিন্তু দেখেন আদিম সেই যৌন মিলনের যে 'ম'টাও বুঝে না তারা সেগুলো করে ফেলছে এটাই প্রকৃতি। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অল্প বয়সেই এবোরশনের এত কেইস পাবেন যেটা ভয় জাগায় খুব। কিন্তু ভ্রুন নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই, বরং আশ্বস্ত কারণ বেজন্মা পরিচয় থেকে মুক্তি পেয়েছে একটা বাচ্চা। খারাপ লাগে যে মেয়েটা ভ্রুন নষ্ট করছে, তার উপর কি পরিমাণ মানসিক আর শারীরিক প্রেশারটা যাচ্ছে? গরু ধান পাঁকার গন্ধ দূরে বাঁধা থাকলেও পায়, তাই দড়ি ছিড়ে ধান ক্ষেত খাওয়ার কেইসও অনেক। কিন্তু যেনে শুনে এই আদিম মিলনে একটু সোচ্চার হলেই এমন বিপর্যয় ঘটে না। ট্রাই টু ইউস কনডম।
অনেক কিছুর শেষ কিছু, আসুন এবার যৌনমিলন নিয়ে কথা বলি বা সঙ্গম নিয়ে কথা বলি। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হচ্ছে সেক্স, অথচ এই সেক্স হয়ই না কোথাও, আপনি এক প্রকারের মানুষের কাছে যদি জিজ্ঞেস করেন তারা এটাই বলবে যে সেক্স! ছিঃ! লজ্জা! আরেকদিকে জনসংখ্যাটা একটু খেয়াল করেন, দারুন প্রগ্রেসিভ।
জনসংখ্যার হিসেব দেখেই বোঝা যায়, আমরা যেই কাজই করি না কেন, ফাঁকা যে সময়টা পাই সেটা শুধু সেক্স নিয়েই চিন্তা করি। শুধু শরীর চাই শরীর, খোয়াবে আসমানের মালিক। এটাকে দোষ দিচ্ছি না কারণ, পারিবারিকভাবে যখন নিজেদের শারীরিক শিক্ষাটা পাচ্ছি না, তার উপর স্মার্ট দেশের স্মার্ট ধর্মভীরুতা, এর ফলে সেখানে নিজেরাই নিজেদের আদিম যন্ত্র পরিচালনা এবং ইহা কোথায় কয় ঘন্টা ব্যবহার করতে হয় শিখেছি, এবং মেয়েদের ছেলেদের যে একটা আলাদা আলাদা করে রাখার চর্চা তার উপর ছেলেদের নৈতিক কোনো শিক্ষাই দেয়া হয় না- সেখানে সেক্স নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।
কারন আমি পর্নোগ্রাফি দেখে শিখছি সেক্সের মজা কোন জায়গায়, মেয়েরা যত লাউড চিৎকার দিবে ততই মজা, দুনিয়া ফাঁটিয়ে হার্ডকোর না করলে আপনি একজন লুলা পুরুষ, মেয়েরা যত বেশি চিৎকার করবে, বুঝবেন তারা তত বেশি পুলকিত হচ্ছে, ছেলেরা যত কিউট হয় তত বেশি পুলক হয়, পর্ন থিউরি এক দেড় ঘন্টা স্ট্যামিনা ধরে রাখতে না পারলে সে একটা ধজভঙ্গ! কি পরিমানের কুশিক্ষা পেলে এরকম বিকৃত যৌনাচার শিক্ষা এরা পায়, তার উপর এগুলো দিয়েই জীবন কাটায়। কি করবে, যে দেশের সব কিছুতেই সেক্স, কিন্তু সেটা সামনে বলা যাবে না ভুল শুদ্ধ শিখানো যাবে না সেখানে এগুলোই তো ঘটবে।
বাজি ধরেন বেশিরভাগ ছেলেই জানে না উনি উনার এই দশ বিশ মিনিটের বাহাদুরি দিয়ে নিজেকে যে বাহাদুর প্রমান করে সঙ্গিনীর উপর, তার পুরোটাই নাটক, সঙ্গিনী যখন সম্ভোগের সময় শিৎকার করছে ওগুলো তো তাকে প্রশমিত করার জন্য করেছে, কার, কে চায় গাধাকে বারবার বুঝাতে সে কখনো ঘোড়া ছিলো না, কারন উনি তো জেনিটিক্যালি হতে পারবেন না সেটা।
আর সঙ্গিনীরাও সে পর্নোগ্রাফি থিউরি ঘন্টা পর্যন্ত স্ট্যামিনা ধরে রাখতে না পারলে তুমি ফেইল- এমন ধারণা পোষণ করেন। প্লিজ নিজে ঘোড়া হয়ে আরেকজন গাধাকে ঘোড়ার মতন আচরণ করতে বললে সে কি করে পারবে ম্যাম? আপনাদের জেনেট্যিক মেকানিজম বলে আপনারা এই ব্যাপারে স্বয়ং ঈশ্বর। এসব আজে বাজে শিক্ষায় দিন শেষে তারা শরীরও বোঝে না, মন তো বোঝেই না খালি বোঝে কাম! আর ভালোবাসা বোঝে নাকি সেটাও সন্দেহ। বোঝে শুধু দেহ আর বিছানা!
একটা জাতি যাদের প্রত্যেকের মাথায় শুধু সেক্স কিলবিল করে তাই তাদের দেশে নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার হয় না কারণ, অফিসে সেক্স, গাড়িতে সেক্স, পোস্টে পোস্টে সেক্স, চেম্বারে সেক্স, হাসপাতালে সেক্স, ট্রেনে সেক্স, লঞ্চে সেক্স, অভিনয় করতে গেলে সেক্স, বিজ্ঞাপন মানেই সেক্স, মডেল মানেই সেক্স, কোচিং সেক্স, স্কুল সেক্স, ইউনিভার্সিটি সেক্স, বন্ধুত্ব সেক্স, গাড়ি, বাড়ি, আটা, ময়দা, ফ্রিজ, টিভি, চানাচুর সবকিছুতেই সেক্স আমাদের।
সেক্স অবশ্যই থাকবে, এটা না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাপারটাকে ট্যাবু করে রেখে আমরা দেশটাকে দিনকে দিন নোংরা বানিয়ে ফেলছি, সম্পর্কগুলো সত্যি সত্যিই ট্যাবু হয়ে যাচ্ছে, নিজের জন্মদাতা বাপ থেকে শুরু করে সকলেই ধর্ষকামী মনোভাবের হয়ে যাচ্ছে, মা থেকে শুরু করে সকলেই মর্ষকামী হয়ে যাচ্ছে। আমরা নরপশু তাই বলে অযাচিতভাবে জীবন যাপন করতে পারি না। নূন্যতম জ্ঞান আমাদের শরীর এবং শরীরের কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিৎ। বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ এই চাহিদাটা মেটানো হোক অজ্ঞতাকে দূর করে।
আরও পড়ুন-
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন