আপনার সঙ্গিনী আপনার প্রতিপক্ষ না, বরং বিষয়টা প্রচণ্ড মিউচুয়াল যত্নের। সেখানে সমস্ত আবেগ, অনুভূতি কাজ করে। একজন যদি অস্বস্তি বোধ করে, আর অন্যজন সেটা না বোঝে- তখন বিষয়টা প্রচণ্ড তিক্ত হয়ে যায়।
আমার ইনবক্সে গত তিন বছরে মেয়েদের সমস্যা সংক্রান্ত যত মেসেজ এসেছে, তার মধ্যে একটা খুব কমন সমস্যা হল যৌন অত্যাচার! বাঙালী মেয়েরা যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে এখনো কথা বলে না, তাই তারা নিজের ভেতরেই এই অসহনীয় কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
এই বিষয়টা এতটা স্পর্শকাতর যে এই বিষয়ে লেখার জন্য আমাকে বহুদিন ভাবতে হয়েছে। আমি নিজেও যেহেতু রক্ষণশীল সমাজেই বেড়ে উঠেছি, তাই যৌনতার এই কালো দিকটি নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে, আমার নিজের ভেতরে জড়তা কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগেছে। বেশীরভাগ বাঙালী পুরুষের যৌনতা সম্পর্কিত জ্ঞান যেহেতু চটি এবং পর্ণ মুভি থেকে প্রাপ্ত তাই তারা ধরেই নেয়, যৌনতা মানে ফিফটি সেড অফ গ্রে! খাট না ভাঙলে কীসের কী!
তারা ধরেই নেয়, যৌনতার সময় যত বেশি শারীরিক জোর খাটানো যাবে, সঙ্গিনী ততই উপভোগ করবে! এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা যৌনতাকে অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে যায়। মেয়েটা যেহেতু তার সারা জীবনের লজ্জা ভেঙে কিছু বলতে পারে না, তাই পুরুষটি সন্তুষ্টির ঢেঁকুর তুলে ধরেই নেয়- তার পৌরুষত্ত্বের কারিগরীতে মেয়ে বুঝি আনন্দে আটখানা!
শরীরে সামান্য আঁচড় লাগলে সেই ব্যথা সহ্য করা কষ্টকর। সেখানে শারীরিক যন্ত্রণাটাকে উপভোগ্য ভাবাটা কত বড় বেকুবি, সেটা বেশীর ভাগ বাঙালি পুরুষ বোঝেই না। মাস তিনেক আগে এক মধ্য বয়সী কলেজ শিক্ষিকা আমাকে লিখেছিলেন,
// তের বছরের বিবাহিত জীবনে বহুবার আমাকে শুনতে হয়েছে আহা তুমি তো দেখি স্বামী সোহাগী, অথচ কাউকে বোঝাতে পারিনি আমার শরীরের রক্তাক্ত দাগগুলো আমাকে কতটা যন্ত্রণা দেয়... //
সদ্য বিবাহিত এক মেয়ে লিখেছে-
// আপু বিয়ের আগে যত ফ্যান্টাসি ছিল, বিয়ের পরে বুঝলাম ওসব ফালতু কথা । মানুষটা কি কখনো বুঝবে না , এটা একটা রক্ত মাংসের শরীর, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই অথচ বলতে পারি না //
এটা যে শুধু পারিবারিক ভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে ঘটে, তা না। প্রচণ্ড ভালবেসে বিয়ে করেছে। কিংবা দুজনার মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক তাদের মধ্যেও বিষয়গুলো ঘটে। শারীরিক সম্পর্কে যাবার আগে ছেলেটা তার মাইন্ড সেটআপ করে রাখে, যে কোন মূল্যে তাকে প্রমাণ করতে হবে সে শারীরিকভাবে অতি সক্ষম। এই সক্ষমতার প্রমাণের একমাত্র উপায় হল, তার শারীরিক জোর কত বেশী সেটা দেখানো ! আর মেয়েটা যেহেতু কিশোরী বয়স থেকে শুনে এসেছে, যৌনতার সময় রক্তাক্ত হওয়া আনন্দের, তাই সে চুপ থাকটাই কর্তব্য হিসেবে ধরে নেয়।
দুঃখিত, যৌনতা মানে কুস্তি না, রেস্লিং না। আপনার সঙ্গিনী আপনার প্রতিপক্ষ না, বরং বিষয়টা প্রচণ্ড মিউচুয়াল যত্নের। সেখানে সমস্ত আবেগ, অনুভূতি কাজ করে। একজন যদি অস্বস্তি বোধ করে, তবে বিষয়টা প্রচণ্ড তিক্ত হয়ে যায়।
তাই লজ্জা, সঙ্কোচ ভেঙে সঙ্গিনীর/সঙ্গীর সাথে আলাপ করুন। যত্ন করতে শিখুন, বুঝতে শিখুন, ভুল ধারণা থেকে বের হন, দুজনেই ভাল থাকবেন।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন