তিনি যদি ঘোষণা দেন যে নকল সিনেমাতে আর কাজ করবেন না, কারো ক্ষমতা আছে তাকে সেসব সিনেমাতে কাস্ট করার? নিজেকে সুপারস্টার দাবি করা একজন নায়কের সাথে আমি নেতা হতে চাই টাইপ সিনেমা তো একেবারেই যায় না...

ঢাকায় প্রথমদিন এসে ছেলেটা মাথার নিচে ইট দিয়ে ঘুমাচ্ছিল। সদরঘাটের এক কুলি ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, 

-ইটের ভাড়া দিসিস, ঘুমাচ্ছিস যে?

-ইটের আবার ভাড়া আছে?

- অবশ্যই আছে, এক টাকা ভাড়া। 

-ভাড়া এক টাকা হইলে ইটের দাম কত?

- ইটের দাম দশ টাকা!

-ইয়ে মানে, আমার কাছে দশ টাকাই আছে। ভাবসিলাম ভাত খামু সকালে। এখন ভাবতেসি ইটটা কিনা নেই। আজকে থাইকা তাইলে এই ইট আমার? এই নেন ১০ টাকা।

-হ, আজকে থেকে এই ইট তোর। 

ঘটনা দেখে সদরঘাটের আরেক কুলি হাসে। ভাতের টাকা দিয়ে কেউ ইট কেনে? সেই ছেলেটা তখন বলে, তার মন আসলে সম্রাট শাহজাহানের মত, এমনকি সম্রাট শাহজাহান আসলে তার মিতা। একদিন সেও নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য শাহজাহানের মত তাজমহল বানাবেন। সেটা বানানোর জন্য সেই ভবিষ্যত তাজমহলের একটা ইট আজকে কিনে নিলেন।

শাকিব খান অভিনীত খুনি শিকদার সিনেমার প্রথমদিকের দৃশ্য এটি। হলে গিয়ে দেখেছিলাম একবার, আর দেখা হয়নি তবে দৃশ্যটা এখনও আমার মাথায় গেঁথে আছে। পুরো সিনেমা ইউটিউবে আছে, কিন্তু সেখানে না দেখেও এই সিনেমার বেশিরভাগ দৃশ্য আমার মুখস্ত। আমার এখনও ভাবলে অবাক লাগে শাকিব একসময় এই ধরনের অন্যরকমের বানিজ্যিক সিনেমাও করেছেন। সিনেমার শুরুতে শাকিব চোর থাকেন, গায়ে তেল মালিশ করে মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে চুরি করতে যান আর এরপরে ধরাও খান। চুরি করার আগে তিনি সমানে গায়ে তেল মালিশ করতে থাকেন, তখন তার শরীরে লুংগি কাছা দেয়া ছাড়া আর কোন সুতা পর্যন্ত ছিল না। এটাই তো দরকার! চোরের ক্যারেক্টার তো এমনই হয়! 

এই শাকিব খানকে আমি প্রচন্ড মিস করি। একটা ন্যাচারাল ব্যাপার ছিল তখন তার মাঝে, হিরোইজম ছিল, তবে এক্সট্রা হিরোইজম ছিল না। সেই শাকিব পেটের ভাতের চাইতে, শাহজাহানের মত তাজমহল বানানোতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। শাকিব খান এখন যে পর্যায়ে আছেন, তার আর পেটের ভাতের অভাব নেই বা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে মাত্র ১০ টাকার ইট দিয়ে বিরাট তাজমহল বানানোর আকাশ কুসুম কল্পনা করা সেই শাকিবকে আমি খুবই মিস করি। 

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নবাব- এ শাকিবের লুক

শাকিবকে কে দিয়ে কতটা উপভোগ্য বানিজ্যিক সিনেমা সম্ভব, সেটা কলকাতার সিনেমাতে আমরা দেখেছি। কিন্তু দেশে এসে আবার যেই লাউ সেই কদু। নবাবের ডায়লগ ডেলিভারি আর বীরের ডায়লগ ডেলিভারির তখন আকাশ পাতাল পার্থক্য, সেই আগের লাউড এক্টিং। নকল সিনেমার কথা বললে তিনি বলেন- বাধ্য হয়ে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়। তবে ক্রমাগত ঢেঁকি গিলতে থাকলে, একটা সময় ঢেঁকির বদলে রাইস মিল গেলানোও অসম্ভব কিছু না।

অথচ তিনি যদি ঘোষণা দেন যে নকল সিনেমাতে আর কাজ করবেন না, কারো ক্ষমতা আছে তাকে সেসব সিনেমাতে কাস্ট করার? আমার তো মনে হয় না। খুব আশা করেছিলাম, অমিতাভ রেজার রিকশাগার্লে তাকে দেখব, সেটাও পূরণ হল না। অথচ আমি চাই এফডিসির বস্তাপচা সিনেমা থেকে বের হয়ে তিনি অমিতাভ রেজা আর দীপংকর দীপনের সাথে কাজ করুন। বানিজ্যিক সিনেমা যত ইচ্ছে করুন, তবে সেটা যেন সুনির্মিত আর উপভোগ্য হয়। পাসওয়ার্ডও বেশ এঞ্জয় করেছিলাম। কিন্তু নিজেকে সুপারস্টার দাবি করা একজন নায়কের সাথে আমি নেতা হতে চাই টাইপ সিনেমা একেবারেই যায় না। অনেক বছর থেকেই তিনি বলে আসছেন যে শরীরের দিকে মনোযোগ দেবেন, কিন্তু সেটা দেখছি না। অথচ খুনী শিকদারে শরীরে তেল মালিশ করার সময় দেখবেন, তার ঐ সময়কার শরীর বর্তমানের চেয়ে কী পরিমাণ সুগঠিত! 

আমার কথায় কোন কাজ হবে বলে আশা করি না। শাকিব বিরাট সুপারস্টার হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বেশিরভাগ সিনেমা আমি হলে গিয়ে দেখেছি। আলেকজান্ডার বোয়ের সিনেমাতে সেকেন্ড হিরো হয়েও তাকে জানপ্রাণ দিয়ে খাটতে দেখেছি,হলের ছাড়পোকার কামড় খেতে খেতে। নামের দিক থেকে সে আমার মিতাও বটে! তাই একজন দর্শকের জায়গা থেকে কিছু বলার চেষ্টা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা