তিনি ঋণখেলাপী নন, সরকার ও ব্যাংক থেকে কোন সুবিধা নেননি। তার অধীনে চাকরী করেন প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। সবাইকে দুই মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে ৩৫ দিনের ছুটি দিয়েছেন। এদেশে এমনও শিল্পপতি হয়...
মঞ্জুরে খোদা টরিক: পত্রিকায় দেখলাম ল্যাব এইডের মালিক করোনায় হাসপাতালে রোগী না মেলায় চাকুরেদের অর্ধেক বেতন দিয়েছে, কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। বকেয়া বেতন চাওয়ায় কানিজ গার্মেন্টসের মালিক ৮০ শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। এমন সংবাদ কয়টা শুনবেন? কলমে কুলাবে না। কিন্তু সবাই কষাই না। এখানে মানুষ আছে, মানবতাও আছে।
মানুষের ধারণা আমরা শুধু গার্মেন্টস মালিকদের সমালোচনা করি, তাদের মধ্যে ভাল কিছু দেখি না। বিষয়টা একপেশে, ভুল। মানুষের মধ্যে যেমন ভাল-মন্দ আছে, শিল্প মালিকেও তাই। এই সত্য কোন সংকটে অধিক স্পষ্ট হয়। তেমনি এক মহৎপ্রাণ মালিকের কথা বলছি। যিনি খুব ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে, সংগ্রাম করে নিজেকে বড় শিল্পপতিতে পরিণত করেছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
যার কথা বলছি, তিনি নারায়নগঞ্জ এসপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবোল চন্দ্র সাহা। তার অধীনে চাকরী করেন প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। করোনার তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে, ২৬ মার্চ থেকে ৩৫ দিনের ছুটি দিয়েছেন। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে তিনি সবাইকে বিকাশে ঈদ বোনাস পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পরিস্থিতি খারাপ হলে, প্রয়োজনে সবার ছুটি বাড়িয়ে দেবেন বলেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। করোনায় কারো চাকুরি যাবে না। তার কারখানায় আছে শ্রমবান্ধব পরিবেশ ও শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের মানবিক সুবিধা। অনান্য গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের প্রতি তার কর্তব্য পালনের বিষয়টি ভাল ভাবে দেখেন না। এগুলো তাদের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ তারা তাদের শ্রমিকদের এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন।
আমি তাকে কিভাবে জানি? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আইনজীবী ডঃ বিপ্লব কুমার সাহা আমার ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু। এসপি’র মালিক সুবোল সাহার একমাত্র মেয়ে সোমা সাহার জীবনসঙ্গী হচ্ছে আমার এই বাল্যবন্ধু বিপ্লব। ওর প্রেম-বিয়ে জীবনের অনেক কিছুতেই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। অস্টেলিয়াতে ফোন করে সোম-বিপ্লবের খবর নিতেই এই মানবিক সংবাদটি জানলাম।
তখন মনে হলো এটা শেয়ার না করা অন্যায় হবে। যখন চারিদিকে শুনছি শ্রমিকদের প্রতি গার্মেন্টস মালিকদের নিষ্ঠুর আচরণের কথা, তখন মনে হয়েছে এ উদাহরণটা সামনে নিয়ে আসা উচিত। এমন একটি সংবাদ কোন পত্রিকায়তেও আসেনি। তিনি যদি ব্যবস্যা করে শ্রমিকদের প্রতি কর্তব্য পালন করতে পারেন, তাহলে কেন অন্যরা পারেন না?
সুবোল সাহা ঋণখেলাপী নন, তিনি সরকার ও ব্যাংক থেকে কোন সুবিধা নেননি। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তার একমাত্র মেয়ে সোমা অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলে সাধারণ চাকুরী করে। তার বাবার যা আছে, কয়েক পুরুষ বসে খেলেও শেষ হবেনা, তবু সে চাকুরী করে, সাধারণ জীবনযাপন করে। শিল্পপতির মেয়ে হিসেবে ফুটানি নেই। তার এক ছেলে সজলও সেখানে ব্যবসা করে।
সুবোল সাহা কেবল ব্যবসায়ী নন, একজন দানশীল সমাজসেবকও। তিনি পাবনার ডায়াবেটিক হাসপাতালে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করে একটি ফিজিওথেরাপি সেন্টার করে দিয়েছেন। চাটমহর, বেলকুচি ও ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, আশ্রম ও ধর্মপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান প্রদান করেন। দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীর চাকুরী-বিয়ে-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মে সহযোগিতা করেন। অনেক ছেলেমেয়েকে বিদেশে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এসপি গ্রুপের চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী প্রয়াত সবিতা রাণী সাহাও অনেক পরোপকারী ছিলেন, নীরবে শ্রমিকদের নানা ভাবে সহযোগিতা করেছেন।
সুবোল চন্দ্র সাহার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।