শাইখ সিরাজ : মাটি ও মানুষের প্রকৃত কণ্ঠস্বর
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শাইখ সিরাজকে টেলিভিশনে সবসময় একরঙা একটি শার্টে দেখা যায়। এই একটি শার্ট দেখে অনেকে জিজ্ঞেস করতেন তাঁর কি আর কোন শার্ট নেই! কেউ কেউ তো তাকে শার্টও সেধেছেন। কিন্তু এর পেছনে আছে মজার একটি গল্প...
টেলিভিশনের চকচকে দুনিয়ায় যখন সবাই নাটক, ম্যাগাজিন, সিনেমা কিংবা বিনোদনধর্মী হরেক আয়োজনে ব্যস্ত তিনি তখন বেছে নিলেন ভিন্ন এক পথ। ভাবলেন বাংলার মাটি ও মানুষের কথা, সাধারণ কৃষকের কথা। যে কৃষক দেশের অন্যতম চালিকাশক্তি। অথচ তাদের খোঁজ নেবার কেউ নেই। বলছি সেই আশির দশকের কথা, যখন দেশের কৃষকের হাতে ছিল না উন্নত প্রযুক্তি। নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে যে ফসল উৎপাদন করতেন তার প্রকৃত মূল্য পেতেন না। ফলে কৃষকের ঘরে অভাব লেগে থাকতো সারা বছর।
সেই কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তিনি নেমে গেলেন মাইক্রোফোন আর ক্যামেরা নিয়ে। তার নাম শাইখ সিরাজ। মাটিকে ভালোবেসে একজীবনে তিনি হয়ে ওঠেছেন কৃষকের প্রকৃত বন্ধু। যার কর্মপরিধি দিন দিন বিস্তৃত হয়েছে কৃষি ও কৃষকের জন্য। বিটিভিতে 'আমার দেশ' ও পরে 'মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠান দিয়ে সেই যে পরিবর্তনের ডাক দিলেন তা এখনো চলছে। বর্তমানে তার 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনের অলঙ্কার। তার অনুষ্ঠান দেখে হাজারো মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা কৃষিখাতে নিজেদের নিয়োজিত করে বদলেছেন নিজের ভাগ্য, করেছেন অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। তার প্রতিবেদন মানুষকে বিজ্ঞানসম্মত চাষ শিখিয়েছে। দেখিয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশের চাষাবাদ,কৃষি প্রযুক্তি, কৃষি পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ, কৃষি গবেষণা, কৃষি সাফল্য আরো কতো কী!
টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠান যে অনেক কিছু বদলে দিতে পারে সেটার জ্বলজ্বলে উদাহরণ একজন শাইখ সিরাজ। যার হাত ধরে এখনো স্বপ্ন দেখে হাজারো তরুণ৷ একটা সময় ছিল যখন শিক্ষিত মানুষজন কৃষিখাতে আসতেন না। সময়ের পরিক্রমায় এখন শিক্ষিত জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে কৃষিতে। তারা নানা গবেষণার মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানসম্মত ফসল উৎপাদন করছে।
কৃষকের জন্য এখন অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। আগে যা চিন্তাও করা যেত না, এখন তা বাস্তব। দু-তিন দশকের ব্যবধানে এই ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হবার পেছনে কোচের ভূমিকায় ছিলেন এই কৃষকের বন্ধু। তিনি কাদামাখা পথে হেঁটে মানুষকে দেখিয়েছেন পথ, দিয়েছেন প্রেরণা। শাইখ সিরাজকে টেলিভিশনে একটি শার্টে দেখা যায়। এ নিয়ে একটি মজার গল্প আছে।
শুরুর দিকে যখন তিনি রঙ বেরঙের শার্ট, প্যান্ট, জুতা পরিধান করে কৃষকের কাছে যেতেন তখন কৃষক কেমন যেন দূরে দূরে থাকতো। এভাবে বেশ কিছুদিন যাবার পর তিনি বিষয়টি খেয়াল করলেন। এরপর ভাবলেন কৃষকের জন্য কাজ করতে হলে তো তার খুব কাছে যেতে হবে। তার মতো করে মিশতে হবে। সেই থেকে একটি রঙের শার্টই বেছে নিলেন৷ কৃষক তাকে আপন করলো।
তবে এই একটি শার্ট দেখে অনেকে জিজ্ঞেস করতেন তার কি আর কোন শার্ট নেই! কেউ কেউ তো তাকে শার্টও সেধেছেন। শাইখ সিরাজ হেসে মূল বিষয়টি বলেছেন তাদের। এইতো মাটি ও মানুষের একজন, যিনি নিবেদিত কৃষকের জন্য। তার হাত ধরে শহরে ছাদকৃষিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। শহরের ছাদে সবুজের ক্যানভাস - বিষয়টি ভাবতেই ভালো লাগে। এই ছাদকৃষি ফল, ফসলের পাশাপাশি সরবরাহ করছে অক্সিজেন। এর ফলে প্রতিটি বাড়ি যেন হয়ে ওঠছে এক একটি অক্সিজেন কারখানা৷ শহরে দূষিত বাতাস দূর করতে ছাদকৃষি রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সকাল বা বিকেলে ছাদে সবুজের মাঝে সময় কাটানোও প্রশান্তির। শাইখ সিরাজ তার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকের কথা পৌঁছে দিয়েছেন দেশের নীতি নির্ধারণী মহলে। শুধু সম্ভাবনাতেই নয় তিনি ছুটে গেছেন কৃষকের বিভিন্ন সমস্যায়।
সারাদেশ ঘুরে ঘুরে তুলে এনেছেন প্রান্তিক কৃষকের হাহাকার, দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। যা নাড়া দিয়েছে। কৃষক উপকৃত হয়েছেন। তিনি 'কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের মন্ত্রীদের সরাসরি কৃষকের মুখোমুখি করেছেন। সেই কৃষকরা প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছে। উঠে এসেছে বিভিন্ন সমাধান। কৃষকের জন্য তাদের অংশগ্রহণে করেছেন 'কৃষকের ঈদ আনন্দ'। যেটি তাদের জন্য এক অপার আনন্দের মুহূর্ত এনে দিয়েছে। একজীবনে এই মানুষটি অর্জন করেছেন দেশ-বিদেশের নানা সম্মাননা। পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ পদক। কৃষকের জন্য যিনি জীবনভর কাজ করে গেলেন তিনি প্রকৃত অর্থেই অসাধারণ। আজ তার জন্মদিন। তাকে অনেক শুভেচ্ছা। তার হাত ধরে কৃষকের জন্য আসুক আরো অনেক আনন্দের মুহূর্ত।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন