তোমরা যারা নেটফ্লিক্সের এক্সট্র্যাকশনকে অবাস্তব বলেছিলে, নেটফ্লিক্স বর্জনের ডাক দিয়েছিলে, তারা এখন কেমন বোধ করছো? টিনের চশমাটা কি এখনো চোখেই আছে? এখন কি দেশ বর্জনের ডাক দিবে না?

একজন ধূমপায়ী পত্রিকায় লেখা দেখলো ধূমপানের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে। ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগলো না। সে ঠিক করলো পরদিন থেকে বাদ দিয়ে দিবে। তা কী বাদ দিবে? অবশ্যই পত্রিকা পড়া বাদ দিবে। খুব সস্তা কৌতুক, তাই না? তবে এর চাইতেও সস্তা হচ্ছে এদেশের বাস্তবতা। বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে চলুন একটা সাম্প্রতিক ঘটনা জেনে নেয়া যাক। তারপর না হয় ফেরা যাবে সস্তা বাস্তবতায়।     

ঘটনটা গত ২৫শে মে সকালের। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যেই সেদিন সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দুই জন যাত্রী নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

গণমাধ্যমগুলোর সূত্র মতে, এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যাওয়া এই দুই ‘মুমূর্ষু রোগী’ হলেন— সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার। তারা দুই জনই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ইস্যুতে দুই শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত। সিকদার গ্রুপ ব্যাংকটির কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাব দিলে এর বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান ব্যাংকের ঐ দুই কর্মকর্তা। 

মিঃ হাইজিন জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

সিকদার গ্রুপের এমডির দাবি তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম ছিল। এরপর ঐ ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হয় ও সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়। গত ১৯ মে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, লোনের জন্য ব্যাংকটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে গুলি করার চেষ্টা ও নির্যাতন করেছে এই দুই ভাই। এরপরই তারা আলোচনায় আসে।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, কেবল শুরু। এই টুইস্ট পুরোটা বুঝতে হলে আরেকটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। ঐ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিলো থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস।

এবং ঐ দিনই তাদের অনুমোদন দেওয়া হলে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে দুই জনকে মেডিকেল ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ২৪ মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন ২৫ মে তারা ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই হচ্ছে এদেশের বাস্তবতা, যা সস্তা কোনো কৌতুকের চাইতেও কম হাস্যকর নয়।  

আপনারা যারা ধন ধান্য পুস্পে ভরা বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন নেটফ্লিক্সে, সেটা দেখতে না পেয়ে নেটফ্লিক্স বর্জনের ডাকও দিয়েছিলেন, তারা এখন কেমন বোধ করছেন? টিনের চশমাটা কি এখনো চোখেই আছে? এখন কি দেশ বর্জনের ডাক দিবেন?

এদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা যে মাফিয়াদের চাইতেও কোনো অংশে কম নয়, সেটা কিন্তু এখন প্রমাণিত সত্য। এই সত্যটাই যখন সিনেমার পর্দায় উঠে আসে, সেটা আপনাদের কাছে অবাস্তব লাগে। নেটফ্লিক্সকে গালি দেবার আগে, একটু কষ্ট করে একবার আয়ানার দিকে তাকান। যে কুৎসিত প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন, সেটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা। মাদক, সন্ত্রাস কিংবা দূর্নীতি- কোনোকিছুতেই পিছিয়ে নেই বীর বাঙালি। নেটফ্লিক্স নয়, দেশকে অপমান করার জন্যে আমরা নিজেরাই যথেষ্ট! 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা