এই ভারী বস্তুটা খালি জমিতে না পড়ে কারো গায়ের ওপর পড়লে কি হতো, সেটা কল্পনা করেই শিউরে উঠেছে এলাকার মানুষ।
দুপুর দুটো নাগাদ আকাশ থেকে মাটিতে এসে পড়লো বস্তুটা। সীতাকুন্ডের যে জায়গাটায় ধাতব বস্তুটা এসে পড়লো, সেখানকার লোকে আকাশ থেকে শিলাবৃষ্টির চেয়ে বড় আর কিছু কখনও পড়তে দেখেনি আকাশ থেকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই, চমকে উঠেছে তারা, দলে দলে ছুটে গেছে যেখানে জিনিসটা পড়েছে সেখানে। গিয়ে দেখেছে, প্রায় পনেরো ফুট গভীর একটা গর্ত হয়ে গেছে জায়গাটায়। খবর রটেছে সঙ্গে সঙ্গেই, দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছে এই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হতে।
খবর পেয়েছে পুলিশও, সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ এসেছে ঘটনাস্থলে, চট্টগ্রাম থেকে এসেছে পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল এন্ড কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। মাটি খুঁড়ে তুলে আনা হয়েছে প্রায় তিন ফুট লম্বা সেই ধাতব বস্তু, যেটার কারণে পুরো এলাকাজুড়ে হইচই। ওজন মেপে দেখা গেল, সেটা প্রায় পঞ্চাশ কেজি ওজনের। এই ভারী বস্তুটা খালি জমিতে না পড়ে কারো গায়ের ওপর পড়লে কি হতো, সেটা কল্পনা করেই শিউরে উঠেছে এলাকার মানুষ।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, শনিবার দুপুর দুই টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পূর্বহাসনাবাদ গ্রামের মিত্র বাড়ির পাশেই ধাতব বস্তুটি এসে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি, এটি আকাশ থেকেই পড়েছে। সীতাকুণ্ড থানায় সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেয়া হয়েছিল, পুলিশ এসে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে তখন। এরপর সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রামে, ধাতব বস্তুর রহস্য উন্মোচনের জন্যে ছুট লাগায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের-সিএমপি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার পলাশ কান্তি নাথ বলেছেন- আমাদের বলা হয়েছিল, এটি আকাশ থেকে পড়েছে। তাই ধারণা করেছিলাম, হেলিকপ্টারের কোনো অংশ হতে পারে। এমনকি বিমানের যন্ত্রও হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে মাটির নিচ থেকে তোলার পর দেখা গেলো একটি লোহার খণ্ড। কিন্তু কোথা থেকে এসে এই খণ্ডটি এখানে পড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ধাতব বস্তুটির আকার অনেকটা জাহাজের নোঙ্গরের মতো, লাল আফ সাদা রঙের ছোপ আছে সেখানে। তাই অনেকেই ধারণা করেছেন, আশেপাশের কোন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে বিস্ফোরণের ফলে এই বস্তুটি উড়ে এসেছে। সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায় বেশ কটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আধ কিলোমিটার দূরেও একটি ইয়ার্ড আছে। কিন্তু বড় ধরণের কোনো বিস্ফোরণ না হলে এত বড় ধাতব বস্তু উড়ে আসতে পারে না বলে মত দিয়েছে স্থানীয়রা। আর ওই সময় শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কোনো বিস্ফোরণের তথ্যও নেই পুলিশের কাছে। কাজেই জল্পনার ডালপালা মেলছে এখনও।
আকাশ থেকে পঞ্চাশ কেজি ওজনের কোন বস্তু পড়লে সেটা মাটির পনেরো ফুট নিচে ঢুকে যাওয়াটা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার, যদি না সেটা কাদামাটি হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, কি পরিমাণ গতি নিয়ে মাটিতে পড়েছে সেটা। বড় কোন বিপদ যে হয়নি, সেটাই রক্ষা! পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্যে ধাতব বস্তুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ড থানায়, সেখানেই রাখা হয়েছে সেটিকে।