সোলায়মান সুখন থেকে হবু-উদ্যোক্তারা যা শিখতে পারেন
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে সোলায়মান সুখনকে এই সময়কার মানুষরা নামে চেনেন। পেশাজীবনে কর্পোরেট দুনিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও যারা সামনে নিজের কোন উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামতে চান তারা সোলায়মান সুখনের কাছ থেকে দারুণ কিছু বিষয় ইতিবাচকভাবে শিখতে পারেন।
"আপনার পণ্য কে কিনবে তা কি জানেন?"
বিভিন্ন বিজনেজ কেস কম্পিটিশন কিংবা যে উদ্যোগের শুরুতে সব কিছুই রঙিন মনে হয়। দারুণ আইডিয়া দিয়ে দুনিয়া কাপানোর চেষ্টা থাকে সবারই। কিন্তু খুব কম সময়েই আমরা জানি না আমাদের পণ্য বা সেবা কে কিনবে? কিংবা কে আপনাকে সামনে নিয়ে যাবেন।
সোলায়মান সুখন তার সোশ্যাল মিডিয়ার যত মেসেজ রাখেন সব কিন্তু ১৭ থেকে ২২ বা ২৫ বছরের তরুণদের উদ্দেশেই দেন। কারণ এই মানুষরা বয়সে তরুণ, তারা সোলায়মান সুখনের মত পারফেক্ট কেউ হতে চান বলেই সোলায়মান সুখনের ভিডিও কিংবা পোস্টে হামলে পড়েন। সোলায়মান সুখনও কিন্তু তার এই গ্রুপ সম্পর্কে জানেন, তিনি কিন্তু বিদেশপড়ুয়া কিংবা আইবিএ বা হাই-ক্যারিয়ার স্কোপ যাদের আছে তাদেরকে প্রাথমিক টার্গেট করে কনটেন্ট ডেভলপ করেন না।
সোলায়মান সুখন ইচ্ছে করলেই কর্পোরেট দুনিয়ার তরুণ পেশাজীবিদের জন্য ভাইরাল কনটেন্ট বানাতে পারতেন, সেদিকে কিন্তু তিনি নেই। তার ফলোয়ার কারা এটা তিনি জানেন, সেভাবেই তিনি কনটেন্ট ডিজাইন করেন। আপনার পণ্যটি যাদের জন্য তাদের জানার চেষ্টা করুন। কাস্টমার ছাড়া আসলে যে কোন উদ্যোগই কাগজে কলমে হিট, বাস্তবে নাই।
মার্কেটিং শিখুন
কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং আর ব্র্যান্ডিং করতে হয় তা সোলায়মান সুখনের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করা যায়। এক সময় এলিট মোবাইল কয়েক মাসের জন্য আলোচিত হয়েছিল, তার পেছনে ছিলেন সোলায়মান সুখন। এরপরে আমরা নেটওয়ার্কসের উই মোবাইল দিয়ে সাড়া ফেলেছেন। আমরা নেটওয়ার্কসকে এর আগে কর্পোরেট দুনিয়ার বাইরে কয়জনই চিনত? এখন জায়গায় জায়গায় ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে আমরার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানোর আইডিয়া তার।
You বনাম My
আইপড স্টিভ জবস কিভাবে বিক্রি করতো তা খেয়াল করলে দেখা যায়, 1000 Songs in Your Pocket। আইপড বাজারে আনার সময় অ্যাপল কিংবা স্টিভ জবস কি নতুন এমপিথ্রি প্লেয়ার, নতুন পণ্য কিংবা হার্ডডিস্কে মেমরি দিয়ে বিজ্ঞাপন কিংবা হাইপ তোলার চেষ্টা করতে পারতো না? সাইমন সিনেকের স্টার্ট উইথ হোয়াই’তে আমি পড়েছি মানুষ আগে নিজের প্রয়োজনটাই সবার-সবার আগে বোঝার চেষ্টা করে। Your Pocket শব্দদুটো দিয়ে স্টিভ কিন্তু আপনাকে-কাস্টমারকে ফোকাস করেছে।
সোলায়মান সুখনের বিভিন্ন ভিডিওতে এমনভাবে বাক্য ব্যবহার করেন যেন বিষয়টা You মানে আপনি কেন্দ্রিক থাকে। ফানেলের উপর থেকে কথা বলার স্টাইলে মানুষকে প্রভাবিত করা যায় না। হবু-উদ্যোক্তারা যখন পণ্য বা আইডিয়া নিয়ে কাজ করেন সেখানে কাস্টমাররা কি পাবেন-পাচ্ছেন সেটাই সবার আগে ফোকাস করা উচিত।
Quora তে একটা ডিবেইটে পড়েছিলাম Your Account শব্দটা My Account-এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী! You-কে ফোকাস করুন।
নেটওয়ার্ক দিয়ে ডমিনো অ্যাপ্রোচ তৈরি করুন
সোলায়মান সুখন গত ৩/৪ বছর ধরে টেলিকমিউনিকেশন দুনিয়াতে যুক্ত। খেয়াল করলে দেখবেন তার নানান প্রচার প্রচারণায় তারই নেটওয়ার্কের লোকজনকে তিনি প্রভাবক হিসেবে কাজে লাগান। অন্যান্য ইউটিউবার কিংবা আলোচিত তরুণদের দিয়ে নানা ভাবে তার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করেন তিনি। আমরা যারা হবু-উদ্যোক্তা তারা সব সময় আইডিয়া অন্যদের কাছে লুকানোর চেষ্টা করি। চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে চুপচাপ থাকি।
বিষয়টা আসলে অন্যভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, আমরা যত বেশি একটা আইডিয়া নিয়ে যত বেশি যত মানুষের সঙ্গে কথা বলবো তত বেশি তথ্য আর উপাত্ত পাবো, বাজার সম্পর্কে ধারণা পাবো। মনে রাখা উচিত, একেক জন চুলে একেক স্টাইলের সিঁথি করে। সবার ভাবনার দুনিয়া আলাদা, কেন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না? যত ভাবনা তত কিন্তু পথ।
মনোযোগি ফলোয়ার হউন
আমরা হুট করেই কিছু না ভেবেই মাঠে নেমে যাই। মাঠে নেমে যাওয়ার পরে হুতাশ শুরু হয়। এটা থেকে মুক্তির একটা উপায় হচ্ছে মাঠে নামার আগে মাঠে যারা নেমেছিলেন তাদের পরামর্শ নেয়া। জিই’র সিইও জ্যাকের বায়োগ্রাফিতে পড়েছি, ভালো ফলোয়াররাই নাকি দারুণ নেতা হয়। অন্যকে অনুসরণ করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। অন্যকে অনুসরণ করে তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। সোলায়মান সুখন কিন্তু মাঝেমধ্যে তার ব্যবসা দুনিয়াতে যাদের ফলো করেন তাদের নিয়ে কথা বলেন। অন্যকে অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যান, অনুকরণ নয়।
“পরিবারকে সময় দিন!”
স্টার্টআপ করার সময় নাকি অনেকেই প্রেমিকাকে ছেড়ে দেন!-এমনটা পড়তে ভালো লাগে, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা শকিং কিন্তু! সোলায়মান সুখনের শত ব্যস্ততায় কিন্তু তার পরিবারের পেছনে সময় দেয়ার চেষ্টার ছবি তার ফেসবুকেই দেখা যায়। সব কিছুই ব্যালেন্স করে সামনে এগিয়ে যান।
যা পারেন না তা করবেন না
সোলায়মান সুখন কিন্তু ভিডিও কনটেন্টে দারুণ হলেও লেখালেখিতে সম্ভবত তেমন শক্ত নন। সে কারণেই কিন্তু তিনি ভিডিও দিয়েই তার ফলোয়ারদের সঙ্গে কানেক্টেড হন। আমাদের মধ্যে জ্যাক অব অল ট্রেডস হওয়ার প্রবণতা আছে। যা পারি না, তাই বলার চেষ্টা করি, শো-অফটাই বেশি। হবু-উদ্যোক্তাদের জন্য এ বিষয়টা গুরুত্ব দেয়া উচিত। যা পারেন না, তা না শিখে কিছু না করাই ভালো! এক্ষেত্রে উপায় হচ্ছে, কোফাউন্ডার খুঁজে মাঠে নেমে পড়া। একা তেমন কিছু করা যায় না, কিন্তু ২-৩জনের গ্রুপেই মোটামুটি দারুণ অনেক কিছু করা যায়।
সব ধরার চেষ্টা করলে ধরা খাবেন!
চীনে একশ কোটির বেশি লোক। কেউ যদি চিন্তা করেন একশ কোটি লোকের জন্য দুশ কোটি জুতো দরকার, আর কালকেই জুতা বানানো শুরু করেন তাহলে কি হবে! নাইকির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইটের বইয়ে এই লাইনটাই পড়েছিলাম! ১শ কোটি লোক, ২শ কোটি পা! ২শ কোটি পায়ের জুতো তৈরি কত বড় হাঙামা তা কি জানেন! সোলায়মান সুখনসহ আমরা যাদের অনলাইনে ইনফ্লুয়েনশিয়াল হিসেবে দেখি তারা কিন্তু দুনিয়ার সব কিছুতেই মতামত দেয়ার চেষ্টা করেন। সব কিছু নিয়ে কথা বলার কারণেও কিন্তু মাঝেমধ্যে গণরোষে পড়েন তারা। সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে, টুকরো টুকরো মার্কেট সেগমেন্ট ধরে প্রোডাক্ট ডেভলপমেন্ট, তারপরে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
সামাজিক কাজে যুক্ত থাকুন
শুধু নিজেকে নিয়ে কিংবা নিজের ছোট দুনিয়া নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি। এটা ঠিক না, অসুস্থতা। ফরিদপুর থেকে হেলিকাপ্টারে করে ঢাকায় একটা বাচ্চাকে আনার দারুণ একটা কাজ করেছিলেন সোলায়মান সুখন গত বছর। শুধু নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকলে এসব করা যায় না, নেটওয়ার্ক বড় হয় না।
শিখুন
সোলায়মান সুখনের সঙ্গে একবার কথা বলার সময় তার নতুন অফিসের টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে একটি অভিজ্ঞতা শুনেছিলাম। টেকনিক্যাল বিষয় না বোঝার কারণে বেশ বিপদে পড়ার সম্ভবনা ছিল তার, পরে ইউটিউব আর অনলাইন থেকে তা শিখে বিপদ পার করেন। হবু-উদ্যোক্তারা অনেক কিছুতে আটকে থেমে যায়। অনলাইনে কোর্সেরা-এডএক্স থেকে অনেক কোর্সের শুধু ভিডিও দেখেই অনেক ধারণা পাওয়া যায়। শিখলে লস নাই আসলে!