এমন সন্তান ঘরে ঘরে জন্ম নিক। আর কোনও অসহায় মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়। অসহায় অবহেলিত হয়ে যেন কোনও মা ধুকে ধুকে না মরে। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

মা। একটি শব্দ মাত্র। অথচ কী তার বিশালতা। পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যার সামনে ফিকে পড়ে যায়।  সেই মায়ের যখন কিছু হয় তখন যেন আর কোনোভাবেই স্থির থাকা যায় না। সন্তানের প্রতি মায়ের কিংবা মায়ের প্রতি সন্তানের এই টান আসলে সৃষ্টিকর্তার বায়োলজিকাল প্রোগামিং। কোনোভাবেই এটাকে খন্ডানো যায় না।

দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২০। কে জানতো কী মঙ্গল অপেক্ষা করছিলো ছেলেটার জন্য। মায়ের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ফেললেন তিনি। চিকিৎসক জানালেন ছেলেটির মায়ের সুস্থতার জন্য দরকার লিভার প্রতিস্থাপন। তাৎক্ষণিক কোন কিছু না ভেবেই নিজের লিভারের কিছু অংশ মাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো সেই ছেলে। ডাক্তার প্রথমে একটু চিন্তিত হলেও মায়ের প্রতি ছলের অসীম ভালোবাসা দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলেন। বারডেম হাসপাতালে পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটারে ছেলেটি ও তার মা। দীর্ঘ ১১ ঘন্টায় ৩০ সদস্যের চিকিৎসক দলের প্রচেষ্টায় একটি সফল অপারেশনের মাধ্যমে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে যাওয়া গর্ভধারীনিকে জিতিয়ে দিলো ছেলেটা।

সেই ছেলেটা হচ্ছেন এডভোকেট শরিফুল ইসলাম। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেইজ থেকে আত্মতৃপ্তি সহকারে প্রশংসা করা হয় শরিফুলের জন্য। তারা গর্ব করেছে তাদের শিক্ষার্থীর এমন সিদ্ধান্তে। তারা বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি শুধু পাঠ্য পুস্তকের শিক্ষা দিয়েই শিক্ষিত করে তোলা যায় না। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক আমাদের শিক্ষার্থীরা। অতঃপর তাদের পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের কল্যানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এডভোকেট শরিফুল ইসলাম

বর্তমানে শরিফুল এবং তার মা এখন সুস্থ আছেন। এর চাইতে আনন্দের ঘটনা আর কিবা হতে পারে। পুরো জীবন দিয়ে দিলেও তো মায়ের ঋণ পূরণ সম্ভব না। যে উদারতা শরিফুল দেখিয়েছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। মুখে বা হাতে অনেক কিছুই বলা যায়, তবে কাজে সেটা করে দেখানো অতটা সহজ নয়। আমরা তো প্রায়ই মা বাবাকে বৃদ্ধাস্রমে পাঠিয়ে দেয়ার করুণ ঘটনা ঘটতে দেখি আশেপাশেই। অনেকে তো রাস্তাতেই ফেলে চলে যায়। এমন একটা প্রেক্ষাপটে, যে গর্ভে জন্মেছেন তার প্রতি এমন কৃতজ্ঞতা আসলেই বিরল।

শরিফুলের এই ত্যাগ ছড়িয়ে পুড়ক আমাদের মাঝে। অনেক ছোট ব্যাপার নিয়েও আমরা মা বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকি। কিডনি-লিভার-হার্ট দিয়ে দেয়া তো বহু পরের ব্যাপার। এ ঘটনাটি জেনে বুঝে শুনে যদি একটু পরিবর্তন আসে আমাদের মাঝে তবে এখানেই সার্থকতা। এদশের বুকে দলে দলে শরিফুলেরা জন্মাক। বেঁচে থাকুক মায়ের আচল তলে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিরন্তর।

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা