উত্তম কুমার যদি মহানায়ক হয়ে থাকেন, তাহলে সৌমিত্র অবশ্যই তার একমাত্র যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। মোহনবাগান-ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে যেমন গোটা পশ্চিমবঙ্গ দুইভাগ হয়ে যায়, ঠিক তেমনটাই বিশ-ত্রিশ বছর আগে হতো উত্তম-সৌমিত্রকে নিয়েও! অথচ সৌমিত্রের কিন্ত অভিনেতা হবার কথা ছিল না!
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়- একটা নাম, একটা ইতিহাস! পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল একটা অধ্যায়ের নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। টালিগঞ্জের সিনেমাপাড়ায় যখন পা রেখেছিলেন, তখন উত্তম কুমারের অবিসংবাদিত রাজত্ব সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে। কলকাতা তখন মজে আছে উত্তম-সুচিত্রায়, ষাটের দশকের ঠিক আগমূহুর্তে সত্যজিৎ রায় নামের ক্ষ্যাপাটে এক ভদ্রলোকের হাত ধরে ফিল্মি দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন বনেদী পরিবারের ছেলে সৌমিত্র।
বাংলাদেশের শিলাইদহে ছিল তার পূর্বপুরুষের নিবাস, সিনেমায় আসার আগে অভিজ্ঞতা বলতে মঞ্চের ছোটখাটো দুয়েকটা কাজ, তাও পার্শ্বচরিত্রে; আর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কাজ করা- এটুকুকে সম্বল করেই এই কঠিন দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন মানুষটা। তারপর মেঘে মেঘে কত বেলা গড়িয়ে গেল, গঙ্গা হয়ে কত পানি চলে এলো পদ্মায়, ফারাক্কার প্রভাবে সেই পানির ধারা কমেও গেল, কিন্ত বদলায়নি একটা জিনিস- টালিগঞ্জের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
১৯৫৯ থেকে ২০২০, একষট্টি বছরের জার্নিটা চলেছে বিপুল বিক্রমে। পঁচাশি বছর বয়সেও তেইশের টগবগে যুবকের মতোই প্রাণবন্ত সৌমিত্র, অভিনয় নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততা তার। সেই 'অপুর সংসার' থেকে শুরু করে আজকের বেলাশেষে-প্রাক্তন-পোস্ত কিংবা ময়ূরাক্ষী- সৌমিত্র নামের নক্ষত্রের তেজ কমেনি এতটুকুও।
উত্তম কুমার যদি মহানায়ক হয়ে থাকেন, তাহলে সৌমিত্র অবশ্যই তার একমাত্র যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। মোহনবাগান-ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে যেমন গোটা পশ্চিমবঙ্গ দুইভাগ হয়ে যায়, ঠিক তেমনটাই বিশ-ত্রিশ বছর আগে হতো উত্তম-সৌমিত্রকে নিয়েও! অথচ সৌমিত্রের কিন্ত অভিনেতা হবার কথা ছিল না। বাংলায় অনার্স করার পরে পারিবারিক পরম্পরা মেনে ওকালতি পড়তে ঢুকেছিলেন, প্র্যাকটিসও শুরু করেছিলেন। কিন্ত কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা রয়ে গিয়েছিল মনের গহীন কোণে। তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না একদম, নিজের স্বকীয়তা, সৃজনশীলতা প্রকাশের জায়গা কোর্ট-কাছারি নয়, এটা বুঝে গিয়েছিলেন। অপূর্ণ হৃদয় পূর্ণ করার তাগিদে প্র্যাকটিস ছেড়ে আবার চলে এলেন কলকাতায়। কৃষ্ণনগরের মানুষ তিনি, তার ওপর বনেদী পরিবার; সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার অভ্যাসটা ছোট থেকেই তৈরী হয়েছিল। আকাশবানীতে ঘোষক হিসেবে যোগ দিলেন তিনি, পরে সেটা ছেড়ে গেলেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। কিন্ত অভিনয়? সে তখনও অনেক দূরের পথ!
পরিবারে অভিনেতা ছিলেন না কেউ, কিন্ত ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন বাবা-চাচাদের শিল্পের প্রতি ভালোবাসাটাকে। সেটাই সময়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে তার ভেতরেও। বাবা শখের বশে আবৃত্তি করতেন, সিনেমা দেখতেও খুব পছন্দ করতেন। আবৃত্তি আর সিনেমা, এই দুটো জিনিস বাবার কাছেই পেয়েছেন সৌমিত্র। এই দুই জিনিসের হাতেখড়ি বাবার কাছেই। তবে ফিল্ম লাইনে নাম লেখাবেন, এমনটা তখনও ভাবনার সীমারেখাতেও ছিল না, কারণ নিজেকে নিয়ে খুবই হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি, ভাবতেন, এমন বেঢপ চেহারা মানুষকে কে ফিল্মে নেবে!
সেই ধারণাটা আরও পাকাপোক্ত হলো সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার অডিশনে বাদ পড়ার পরে। সৌমিত্র তখন কাজের পাশাপাশি এম.এ পড়ছেন কলকাতায় এসে। সত্যজিৎ রায় নতুন সিনেমা বানাবেন, 'অপরাজিত' তার নাম। এক সহকারীর মাধ্যমে রায়সাহেব খোঁজ পেলেন সৌমিত্রের, তাকে ডাকা হলো সত্যজিতের অফিসে। সৌমিত্র গেলেন হাজিরা দিতে, তাকে দেখেই পথের পাঁচালীর পরিচালক বলে উঠলেন, 'আরে না না, তোমার তো বয়স বেশী মনে হচ্ছে, তোমাকে দিয়ে চলবে না!'
সত্যজিৎ সেই দফায় বাতিল করে দিলেও, সৌমিত্রের চেহারাটা কিন্ত ভোলেননি তিনি। কী দেখেছিলেন তিনি সৌমিত্রের মধ্যে, তিনিই ভালো জানতেন। পাকা জহুরী চোখ তাঁর, হীরে চিনে নিতে ভুল হয়নি একটুও। বছরখানেক বাদে তিনি যখন 'অপুর সংসার' নির্মাণে হাত দেবেন ভাবছেন, তখন অপু চরিত্রের জন্যে প্রথমেই তার মাথায় এলো শ্যামলামতোন হালকা গড়নের সেই ছেলেটার কথা! আবার ডাকলেন তাকে, এবার আর প্রত্যাখ্যান নয়, কেন্দ্রীয় চরিত্র দিয়েই সেলুলয়েডের পর্দায় অভিষেক ঘটলো সৌমিত্রের।
কেমন অবাক করা ব্যপার না, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী পরিচালক খুঁজে বের করেছিলেন বাংলা সিনেমার সবচেয়ে মেধাবী অভিনেতাদের মধ্যে শীর্ষে থাকা একজনকে! এভাবেই তো কিংবদন্তীদের হাত ধরে নতুন কিংবদন্তীরা উঠে আসে!
প্রথম দেখায় যাকে চরিত্রের খাতিরে উপযুক্ত মনে হয়নি, সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সত্যজিৎ রায় বানিয়েছেন চৌদ্দটি সিনেমা! অন্য কোন অভিনেতা এর অর্ধেক সিনেমা করার সুযোগও পাননি সত্যজিতের সঙ্গে। রাজকপাল না বলে বলুন মেধা আর পরিশ্রমের ফসল। তিনকন্যা, অভিযান, চারুলতা, কাপুরুষ, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেতের পর সৌমিত্রকে নিয়েই সত্যজিৎ বানিয়েছেন ফেলুদা সিরিজ, জয়বাবা ফেলুনাথ কিংবা সোনার কেল্লার মতো দুর্দান্ত সিনেমা অভিনয় দিয়েছেন এই জুটি। আবার ওরাই নিয়ে এসেছেন হীরক রাজার দেশের মতো ব্ল্যাক কমেডি, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নিয়ে তৈরী হয়েছে চারুলতা বা ঘরে বাইরে।
সত্যজিৎ তো সৌমিত্রের কাছে শুধু পরিচালক ছিলেন না, ছিলেন পরমপূজ্য গুরুজন, ছিলেন সবচেয়ে বড় মেন্টর। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নতুন সিনেমার অফার এলে রায়বাবুর কাছে ছুটতেন সৌমিত্র, কোন সিনেমাটা তার করা উচিত, কোনটার গল্পের সঙ্গে তিনি মিশে যেতে পারবেন, এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতো। সত্যজিৎ রায় জীবদ্দশায় নিজের সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতার খেতাবটা দিয়ে গেছেন সৌমিত্রকে।
আশির দশকের কথা, অসুস্থ হয়ে একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সত্যজিৎ, কয়েকদিন থাকতে হয়েছিল সেখানে। ফুলটুল নিয়ে সৌমিত্র গেলেন তাকে দেখতে, সৌমিত্রকে দেখেই চেঁচিয়ে নার্সদের ডাকা শুরু করলেন সত্যজিৎ। বলতে লাগলেন, 'এরা সবাই কয়দিন ধরে আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে, আপনার প্রিয় অভিনেতা কোথায়, সে কেন আসে না- এসব বলে বলে। এখন ডাকো সবাইকে, এসে দেখে যাক!'
সত্যজিতের সঙ্গে সম্পর্কটা তার অন্যরকম ছিল, তার মানে এই নয় যে বাকী পরিচালকদের সঙ্গে তিনি কাজ করেননি। তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমাটাই তপন সিংহের, রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষুধিত পাষাণ' অবলম্বনে। মৃণাল সেন থেকে শুরু করে অজয় কর, অজিত লাহিড়ী, সলীল দত্ত, সলীল সেন, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ হয়ে আজকের অঞ্জন দত্ত-শিবপ্রসাদ-নন্দিতা, কার সঙ্গে কাজ নেই তার?
নিজেকে কখনও একটা ফ্রেমে বা একটা নির্দিষ্ট ঘরাণায় বেঁধে রাখেননি, কখনও চাননি লোকে তাকে শুধু রোমান্টিক হিরো হিসেবে জানুক, কিংবা ফেলুদার পরিচয়ের আড়ালে হারিয়ে যাক তার নামটা। ষাট কিংবা সত্তরের দশকে উত্তম কুমারের দাপটের ভীড়ে তিনি একটুও ফিকে হয়ে যাননি, কারণ তিনি নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন, নিজের সামর্থ্যকে বারবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। আর একারণেই ছয়টা দশক ধরে দর্শক তাকে ভালোবেসেছেন, হৃদয়ে জায়গা দিয়েছেন।
বয়স তার প্রতিভার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কখনও। আশির দশকে মধ্যবয়স্ক সৌমিত্র, নতুন শতকে প্রৌঢ়ত্ব প্রাপ্তি কিংবা পঁচাশি বছরের 'বৃদ্ধ' সৌমিত্র, কুঁচকে আসা গাল কিংবা জড়িয়ে যাওয়া কথার মধ্যেও দর্শকেরা এক চিরতরুণ সৌমিত্রকে খুঁজে পান প্রতিনিয়ত। সামর্থ্যের নতুন একটা দিগন্ত উন্মোচিত করেছেন তিনি, ব্যস্ততাকে বানিয়েছেন নিজের ভালো থাকার মূলমন্ত্র। ইগো জিনিসটাই তার মধ্যে জন্ম নেয়নি কোনদিন। নায়কের চরিত্র থেকে সরে যাওয়াটা লীড রোলে অভিনয় করা শিল্পীরা মেনে নিতে পারেন না অনেকসময়, সৌমিত্রের সেই সমস্যাটা হয়নি কখনও। কারণ নিজেকে নায়ক ভাবেনইনি তিনি, আর সেই বয়সটা কাছে আসার আগেই তিনি নিজেকে নিয়ে এতবেশী এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলেছেন যে, অন্যান্য চরিত্রেও মানিয়ে গেছেন বরাবর; সেটা ফাটাকেষ্টের মূখ্যমন্ত্রীই হোন, কিংবা প্রাক্তনের বৃদ্ধ রেলযাত্রী!
জীবনের ঘড়িতে পঁচাশি পার করেও তীব্রভাবে অনুভব করতেন অভিনয়ের ক্ষিধেটা, সেজন্যেই তিনি ছুটে যেতেন মঞ্চে, ছুটে যেতেন যাত্রায়। উত্তম কুমারের সঙ্গে যে মানুষটার নাম উচ্চারিত হয়, সেই সৌমিত্র যাত্রার দল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে, মঞ্চের তরুণ উদীয়মান শিল্পীদের ভরসার আরেক নাম ছিল সৌমিত্র জেঠু। ফিল্ম তো সৌমিত্রের সেরাটা দেখেছেই, তবে কলকাতার থিয়েটারে তার কিং লিয়র যারা দেখেছেন, তারা জানেন সৌমিত্র কী জিনিস। রাজা লিয়রের চরিত্রের সৌমিত্রকে একবার যে দেখেছে, সে না ভুলতে পারবে লিয়রকে, না ভুলবে সৌমিত্রকে। এমনই জাদুকরী মোহাবিষ্ট সে অভিনয়! আবৃত্তিটাকেও ছাড়েননি তিনি, রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে অ্যালবাম বেরিয়েছে তার, 'প্রাক্তন' সিনেমায় তার কণ্ঠে 'হঠাৎ দেখা' কবিতাটার আবৃত্তি শুনে বুক কেঁপে ওঠেনি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না বোধহয়।
জীবনে তিনি কী করেননি! পত্রিকা বের করেছেন, বামপন্থী আন্দোলনে সমর্থন জুগিয়েছেন একটা সময়ে, নায়ক হয়ে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বা মিছিলে নেমে গেছেন মেহেনতি মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কফি হাউজে বসেছেন, আড্ডা দিয়েছেন সমানে, চায়ের কাপে ঝড় তুলেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার, উত্তম প্রায়ই নিষেধ করতেন তাকে এসব করতে, বলতেন- সমু, যা করছিস সেগুলো কোন স্টারের কাজ না। নিজের ওজনটা ধরে রাখিস, গ্ল্যামারটাই নায়কের সবকিছু, এটা হারিয়ে ফেললে লোকে তোকে ভুলতে সময় নেবেন না।'
উত্তমদার কথা সৌমিত্র শুনতেন, বিরোধিতা করতেন না। তবে কাজের বেলায় নিজের মনের চাহিদাটাই প্রাধান্য পেয়েছে তার কাছে। উত্তম কুমার ভুল ছিলেন, লোকে সৌমিত্রকে ভুলে যায়নি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ভোলাটা সম্ভব নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ জুটির নাম নিলে উত্তম-সুচিত্রার নামটা অবিসংবাদিতভাবে সবার আগে আসবে।
কোন নায়িকার সঙ্গে সেভাবে সৌমিত্রের জুটি গড়ে ওঠেনি, ওই যে, নিজেকে একঘেয়ে করে ফেলতে চাননি কখনও, তাই স্রোতে গা'ও ভাসাননি। মোটামুটি সব নায়িকার বিপরীতেই তিনি কাজ করেছেন, সাফল্য পেয়েছেন। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে 'সাত পাকে বাঁধা' বা 'দত্তা' দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল, দুজনের অনবদ্য অভিনয় চোখে লেগে আছে সেই সময়ের দর্শকদের। সাবিত্রী-সুপ্রিয়া বা অপর্ণারাও তার সঙ্গে কাজ করেছেন চুটিয়ে। আবার হাল আমলের তন্বী তরুণী রাধিকা আপ্তের সঙ্গেও তিনি কি দারুণ মানানসই!
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ভূষিত হয়েছেন পদ্মশ্রী আর পদ্মভূষণে। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লিজিওন অব অনারে তাকে সম্মানিত করেছে সেদেশের সরকার। ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ রায় পেয়েছিলেন এই সম্মাননা, তাঁর ত্রিশ বছর বাদে একই সম্মান পেয়েছেন সৌমিত্রও। তবে তার কাছে সবচেয়ে বড় সম্মানটা মানুষের ভালোবাসা, মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারাটা। সত্যিই তো, প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কাজ করছেন, লোকের ভালোবাসা তার সঙ্গী না হলে তো তিনি টিকে থাকতে পারতেন না। আবার তার কাজ ভালো না হলে লোকেও ভালোবাসতো না। ব্যাপার দুটো আসলে একে অন্যের পরিপূরক।
কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা মানুষটা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলোর একটি হিসেবে পরিণত করেছিলেন নিজেকে, যে নক্ষত্র অনন্তলোকে হারালো আজ। তিনটে প্রজন্মকে অদ্ভুত একটা মুগ্ধতায় সেলুলয়েডের পর্দায় মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন সুঠামদেহী এই চিরতরুণ। সৌমিত্র মানেই অদ্ভুত একটা শিহরণ, সৌমিত্র মানে অন্যরকম একটা কিছু, সৌমিত্র মানে চিরাচরিত পথে হেঁটেই গৎবাঁধা অভিনয়ের বাইরে ভিন্নরকমের নতুন কোন এক্সপেরিমেন্ট। সৌমিত্র মানেই নায়ক না হয়েও শুধু দুর্দান্ত অভিনয়ের ক্যারিশমা দিয়ে গোটা পর্দাটা দখল করে রাখা। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের অনেক স্মৃতি উপহার দেয়া এই মানুষটা পরলোকে শান্তিতে থাকবেন, এটাই কামনা করি...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন