২০১০ সালের পুজোয়, হুল্লোড়, অ্যাকশন ব্যতিরেকে একটা ছবি 'অটোগ্রাফ' যেন বিস্ফোরণে ঘুরিয়ে দিল ভারতীয় বাংলা ছবির গতিপথ। শুরু হলো এক নতুন যুগ...

Mahan Maity:

- তোমার ইউনিট?
- নেই, স্যার।
- তুমি ছবিটা ডিরেক্ট করবে?
- ইয়েস স্যার।
- প্রোডিউসার পেয়েছো?
- না স্যার।
- তার মানে তুমি চাইছো, আমি ফিল্মটা প্রোডিউস করি? 
- হ্যাঁ, স্যার।

শুভব্রত মিত্রকে মনে আছে নিশ্চয়ই। ফিকশানে  কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা এক একরোখা যুবক? পরিচালক হয়ে বাংলা সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিতে চাওয়া এক দুর্দমনীয় স্বপ্নকে পাণ্ডুলিপি করে, একটা হলুদ ক্যাব- এ চড়ে যিনি এসে দাঁড়িয়েছিলেন 'অরুণ চ্যাটার্জি'র বাড়ির সামনে। যিনি অবলীলায় আইটেম নাম্বার আর মাশালদার ক্লাইম্যাক্সকে 'সম্ভব নয়' বলে দিতে পেরেছিলেন নিজের প্রথম ব্রেক-এর বদলেও!

আবার সেই শুভই 'মার্কেটিং' আর 'হাইপ' শব্দ দুটোর সামনে বিকিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বাস, ভেঙে যেতে দেখেছিলেন স্বপ্ন। যার প্রথম কাজ 'আজকের নায়ক' তো আসলে ছিল 'নায়কের রিমেক' থুড়ি দ্য গ্রেট সত্যজিতের প্রতি ট্রিবিউট, শুভ'র গুরুদক্ষিণা।

দশ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল অটোগ্রাফ সিনেমাটা

শুভর 'শুটিং' শুরু হয়েছিল আজ থেকে এক দশক আগে আজকের দিনে ১৪ই অক্টোবর, ২০১০। বদলে গেল বাংলা ছবির চলতি স্রোত, অনুপম রায়ের বেসিক-ফিল্ম মিউজিক তাতে যোগ করল অন্য দ্যোতনা।

আধুনিক কবি-সাহিত্যিক সৌভিক  বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন, 'কিন্তু কি জানেন?... আমি এক ঋজু মুখার্জিকে চিনতাম, যে সব ছেড়ে, চাকরি... বিবাহ ছেড়ে, স্বপ্ন ছুঁতে এসেছিল...’

আজ থেকে ১৬ বছর  আগে দুটো এক্সপেরিমেন্টাল কাজ 'ফেলুদা ফেরত' আর 'চেকমেট' মঞ্চস্থ করার পর তাঁর মাথায় চেপে বসে পরিচালনার রোখ। প্রায় মজে যাওয়া, সম্ভাবনাহীন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি এলেন, তাঁর স্বপ্নের পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী খুঁজে নিলেন 'অরুণ চ্যাটার্জি'কে। ইন্ডাস্ট্রি শব্দটার সাথে প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠা, আজকের দিনে  'নায়ক' এর জন্য যিনি একবারে সঠিক নির্বাচন- প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি, ঠিক তাঁর কথা ভেবেই লেখা চরিত্র। এতদিনের অভিজ্ঞতা আর চরিত্রের খিদে থেকে অবিসংবাদী ১নং হয়ে ওঠার জন্য যে লড়াই, জেদ আর আবেগের হিমশৈল তাঁকে পেরোতে হয়েছে, যে সংযম আর দূরদৃষ্টি তাঁকে 'প্রথম' রেখে দিয়েছে দশকের পর দশক দর্শক হৃদয়ে, সেটার নির্যাস দিয়েই বুনলেন 'অরুণ চ্যাটার্জি'কে। 

দশ বছর ধরে বাংলা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করছেন সৃজিত

২০১০ এর পুজোয়, হুল্লোড়, অ্যাকশন ব্যতিরেকে একটা ছবি 'অটোগ্রাফ' যেন বিস্ফোরণে ঘুরিয়ে দিল ভারতীয় বাংলা ছবির গতিপথ। শুরু হলো এক নতুন যুগ। তারপর একে একে 'বাইশে শ্রাবণ', 'চতুষ্কোণ', 'হেমলক সোসাইটি', 'জাতিস্মর', 'নির্বাক', 'জুলফিকার', 'মিশর রহস্য' , 'রাজকাহিনী', 'এক যে ছিল রাজা', 'ইয়েতি অভিযান', 'বেগম জান', 'উমা', 'ভিঞ্চি দা', 'গুমনামি', 'দ্বিতীয় পুরুষ'.... আসছে 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' ও 'ফেলুদা ফেরত' (ওয়েব সিরিজ)।

এক দশক ধরে তিনি বাংলা ছবিকে সমৃদ্ধ করছেন, দর্শককে হলমুখী করেছেন। এক কথায় মরা গাঙে বান এনেছেন প্রায় এক হাতে। তাই তর্কাতীতভাবে তিনিই পুরোহিত, অন্যধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির কৌলিন‍্য উদ্ধারের এক দশক।

সৃজিত মুখার্জি। সৃজিত মুখার্জি, থ্যাংক্স ফর ট্রিমেন্ডাস টেন ইয়ারস!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন

আরও পড়ুন-

সৃজিত মুখার্জী: সৃষ্টি আর জয়ের গল্প

প্রসেনজিত: আশ্চর্য এক রুপান্তরের গল্প


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা