সুবর্ণের বাবার দাবি, খুব শীঘ্রই নোবেল জিতবে সে। আমরাও চাই সে যেন একদিন সত্যি সত্যিই নোবেল জেতে। কিন্তু সেজন্য তাকে আগে মুক্ত করতে হবে এই উন্মাদ-প্রায় বাবার করালগ্রাস থেকে।

"ড. ইউনূস ৬৬ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, কিন্তু সুবর্ণ আইজ্যাক ৬ বছর বয়সে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু সমস্যা হলো, ড. ইউনূসের রাশীদুল বারী ছিল, কিন্তু সুবর্ণ আইজ্যাকের কেউ নাই।"

কথাগুলো সুবর্ণ আইজ্যাকের বাবা রাশীদুল বারীর। কেউ কেউ হয়ত প্রথমবারের মতো সুবর্ণ আইজ্যাকের নাম শুনছেন। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলতে পারি, এই 'কেউ কেউ' এর সংখ্যা খুবই কম। কারণ রাশীদুল বারী নামক ভদ্রলোক তার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট ও তার পরিচালিত 'বারী সাইন্স ল্যাব' নামের পেজটির মাধ্যমে নিজের ছেলে সুবর্ণ আইজ্যাককে নিয়ে ইতিমধ্যেই এত বেশি পরিমাণে প্রচারণা চালিয়ে ফেলেছেন যে, এখন কোনো বাংলাদেশী ফেসবুকার যদি দাবি করেন যে তিনি সুবর্ণ আইজ্যাকের নাম শোনেননি, তবে তার ফেসবুকিং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তবে সে যাইহোক, ধরে নিচ্ছি রাশীদুল বারীর এত প্রচার-প্রচারণা আর ফেসবুকে গলা ফাটানোর পরও অনেকেই এখনও সুবর্ণ আইজ্যাককে চেনেন না। তাদের জন্য সুবর্ণের ব্যাপারে কিছু জরুরী কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। 

বছর তিনেক আগে সুবর্ণের ব্যাপারে প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো দৈনিক পত্রিকায়। সেটি ছিল দৈনিক ইত্তেফাক। 'বাংলার খুদে বিজ্ঞানী' নামে একটি ফিচার ছাপিয়েছিল তারা, যেখানে সুবর্ণ আইজ্যাককে তারা পরিচয় করিয়ে দেয় 'খুদে আইনস্টাইন' হিসেবে। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল জন্ম সুবর্ণের। তার বাবা-মা দু'জনই বাংলাদেশি, বর্তমানে বসবাস করছেন আমেরিকায়। মাত্র দুই বছর বয়সেই রসায়নের পর্যায় সারণী মুখস্ত করে ফেলে সুবর্ণ। তখনও সে স্কুলেও ভর্তি হয়নি। কিন্তু তখনই কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই অঙ্ক শাস্ত্র, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় সমানভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠে সে, দিতে থাকে এসব বিষয়ে সমাধানও। 

প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছাড়াই অনর্গল ইংরেজি বই পড়তে শুরু করে সুবর্ণ, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ হইচই পড়ে যায়। আর সাড়ে তিন বছর বয়স থেকেই সে বাবার ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে লেবুর সাহায্যে ব্যাটারি তৈরি, যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক সার্কিট বানিয়ে পোটেনশিয়াল ডিফারেন্সের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো যায়। মাত্র তিন বছর বয়সে অর্থাৎ ২০১৫ সালে এটি আবিষ্কার করে সে। শুধুমাত্র ৪টি লেবু, ৪টি পেরেক, ৪টি মুদ্রা ও ৫টি এলিগেটর কিপ ব্যবহার করেই বানানো হয় এ ব্যাটারি।

এসবের কল্যাণে আমেরিকার গণমাধ্যমেও তাকে নিয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা দেয়। মাত্র দুই বছর বয়সেই সে ভয়েস অফ আমেরিকায় সাক্ষাত্কার দেয়। সাবরিনা চৌধুরী ডোনা তার সাক্ষাত্কার নেন এবং যেটি ছিল এ যাবতকালে ভয়েস অফ আমেরিকায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ জনের সাক্ষাত্কার। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি অনলাইন টেলিভিশন 'টাইম টেলিভিশন'-এ প্রচারিত হয় তার একটি সাক্ষাত্কার। নিউইয়র্কের মেডগার এভারস কলেজের (Medgar Evers college) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেরল্ড পোসম্যান ছোট্ট এ শিশুটির রসায়নের পর্যায় সারণীর ওপর দখল দেখে বেশ মুগ্ধ হন। নিজেই কিছু রাসায়নিক সঙ্কেত জিজ্ঞেস করেন, আর সুবর্ণ সেগুলোর খুব দ্রুত উত্তর দেওয়ায় অবাক হন তিনি।

সুবর্ণ আইজ্যাক

অপরদিকে লিমন কলেজের ফিজিক্সের চেয়ারম্যান ড. ড্যানিয়েল কাবাট সুবর্ণর বানানো ব্যাটারি দেখে মুগ্ধ হন। আর সুবর্ণ দেখছে মাত্র ১০ বছর বয়সেই হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। আর এ জন্যই উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যে SAT পরীক্ষা দিতে হয়, সেই প্রস্তুতি নেওয়ার অপেক্ষায় আছে সুবর্ণ। সবমিলিয়ে সুবর্ণ এক অসাধারণ প্রতিভা। এত অল্প বয়সে বিস্ময়কর প্রতিভা সত্যিই ভাবা যায় না। তাই তো নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. লিসো কোইকো তাকে অভিহিত করেন 'আমাদের সময়ের আইনস্টাইন' নামে। এমনকি ২০১৫ সালে সুবর্ণকে স্বীকৃতিসূচক চিঠি দেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। ব্রিটেনের পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার স্যার জন সাইমন বারকোর কাছ থেকেও স্বীকৃতি পায় সুবর্ণ। 

এগুলো সবই চার বছর আগের ঘটনা। আমরা ধরে নিতেই পারি, বর্তমানে সাত বছর বয়সী সুবর্ণ নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে, অন্যান্য সমবয়সী শিশুদের সাথে হাসি-আনন্দ করছে, এবং একই সাথে ঈশ্বরপ্রদত্ত মেধার জোরে গণিত-পদার্থবিজ্ঞান-রসায়নেও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে হয়ত সত্যিই আইনস্টাইন বা নিউটনের মতো বিশাল বড় একজন বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে সে। তবে সমস্যার বিষয় হলো, আমাদের চিন্তার দৌড় খুবই সীমিত। তাই তো আমরা কেবল সুবর্ণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাই ভাবছি।

কিন্তু তার বাবা এখনই তাকে নিয়ে দেখে ফেলেছেন নোবেল জয়ের স্বপ্ন। সুবর্ণ নাকি বিজ্ঞানের বিভিন্ন নতুন নতুন সূত্র আবিষ্কার করেছে, যা নিয়ে সে এখন একটি বইও রচনা করছে। সেই বইটি প্রকাশিত হলে পদার্থবিজ্ঞানে তার নোবেল জয় আর ঠেকায় কে, এমনটাই অভিমত তার বাবা রাশীদুল বারীর। শুধু যে অভিমত, তা নয়। রীতিমত এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাসও করেন তিনি। সেজন্য নিজের ফেসবুক একাউন্ট আর পেজ থেকে কিছুক্ষণ পরপর পোস্ট দিতে থাকেন তিনি। সব জায়গায় ঘুরেফিরে একটাই কথা, সুবর্ণের মাত্র ছয় বছর বয়সেই নোবেল জয় করা উচিৎ। কিন্তু এ জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা সে পাচ্ছে না।

তার সবচেয়ে বড় রাগ হলো বাংলাদেশী গণমাধ্যমের উপর। বাংলাদেশী গণমাধ্যম কেন তার মতোই সুবর্ণকে নিয়ে মাতামাতি করে না। মূলত বাংলাদেশী গণমাধ্যম নাকি তার ছেলের অভাবনীয় সাফল্যকে সহ্যই করতে পারে না। তাই বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রতি প্রায়ই বিদ্বেষ পোষণ করেন তিনি। এছাড়া তার বিদ্বেষ রয়েছে স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও। শেখ হাসিনা নাকি সুবর্ণের সাথে বসে অংক করার অনুরোধ রাখেননি। কেবল দুইজন সচিবকে সুবর্ণের কাছে দূত হিসেবে পাঠিয়েই নিজের দায়িত্ব সেরেছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, বিশ্বের অন্য বড় বড় নেতারা যেখানে মুখিয়ে আছেন সুবর্ণের দেখা পাওয়ার জন্য, সেখানে শেখ হাসিনা কীভাবে পারলেন এত বড় সুযোগ হেলায় হারাতে! তাই এখন শেখ হাসিনা নিজে থেকে সুবর্ণের সাথে দেখা করতে চাইলেও, তাতে সাড়া দিচ্ছে না সে, এমনটাই দাবী রাশীদুল বারীর! 

সুবর্ণের সাথে বাবা রাশীদুল বারী

এখানে আরেকটি কথা এখন না বললেই নয়। ২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শান্তিতে নোবেল জয় করেন ড. ইউনূস। নোবেলপ্রাপ্তির আগে তাকে নিয়ে দশটিরও বেশি বই লিখেছিলেন রাশীদুল বারী। সেই সাথে ছিল বেশ কিছু গানও। তিনি মনে করেন, তার এইসব প্রচারণাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল ড. ইউনূসের নোবেল জয়ের পিছনে। সুতরাং, এখন ড. ইউনূসেরও উচিৎ সুবর্ণ যাতে নোবেল জেতে সেজন্য জনমত তৈরীতে এগিয়ে আসা। কিন্তু ড. ইউনূস যেহেতু তা করছেন না, তাই রাশীদুল বারী ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন তাঁর উপরও! 

কিন্তু তাই বলে ব্রংকস কমিউনিটি কলেজে গণিতের লেকচারার ও কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গণিতের উপর ডক্টরাল করতে থাকা রাশীদুল বারীকে কিন্তু দাবিয়ে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই। ক্রমাগত তিনি ফেসবুকে সুবর্ণের ব্যাপারে লেখালেখি করে যাচ্ছেন। এছাড়াও নিজেই টাইমস অফ ইসরাইল, হাফিংটন পোস্ট প্রভৃতি ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশনে সুবর্ণের ব্যাপারে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে ফেসবুকে বলছেন, বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমও নাকি এখন চায় সুবর্ণ নোবেল জিতুক! সুবর্ণকে নিয়মিত ফেসবুক লাইভেও নিয়ে আসছেন তিনি, সবার সামনে অংক করাচ্ছেন। এমনকি ঈদের দিনও একটি ছবি দেখা গেছে, যেখানে সুবর্ণ ঈদের নামাজ চলাকালীনও হাতে খাতা-কলম নিয়ে অংক করে চলেছে! তারমানে বুঝতেই পারছেন, মাত্র ৬ বছর বয়সী একটি শিশুকে নিয়ে কী পরিমাণে বাড়াবাড়ি করে চলেছেন তার বাবা!

লোকটার হাবভাব দেখলে যে কারও মনে হতে পারে, নোবেল জেতাই যেন জীবনের সব কিছু। নোবেল না জিতলে সুবর্ণের জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে, ঠিক যেমনটি হয় আমাদের দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পিএসসি-জেএসসিতে জিপিএ ফাইভ না পেলে। একটি কথা পাঠককে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, সুবর্ণের মেধার ব্যাপারে আমাদের বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। এবং আমরা তাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিতও নই। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একটি শিশু যদি বিশ্বমঞ্চে খুব বড় কিছু করে দেখাতে পারে, এতে তো আমাদের সকলেরই গর্ব হওয়া উচিৎ। কিন্তু তাই বলে এখনই সেই শিশুটিকে নোবেল জিততে হবে, এবং তার জন্য তার বাবা রাতদিন তাকে দিয়ে অংক করাবেন আর নিজে ফেসবুকে এসে নির্লজ্জ আত্মপ্রচার চালাবেন, এমন কিছুকে আমরা মেনে নিতে পারি না। মেনে নেয়া সম্ভবও নয়। 

একটিবারের জন্য সুবর্ণের কথা চিন্তা করে দেখুন তো। মাত্র সাত বছর বয়স তার। সে কী বোঝে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের ব্যাপারে? অথচ এইসব ব্যাপারেও তাকে টেনে এনেছেন তার বাবা। নিজের বক্তব্যগুলোকে ছেলের মুখ থেকে বলিয়েছেন তিনি। অথচ এসবের কোন দরকারই ছিল না। ঠিক যেমন দরকার নেই ছেলেকে কিছুক্ষণ পরপর ফেসবুক লাইভে নিয়ে আসা বা সারাদিন বাসায় বসিয়ে রেখে অংক করানোর। আইনস্টাইন, নিউটনরাও তো ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিলেন। কিন্তু সেগুলো সবই ছিল তাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা, যেটিকে তারা একটু একটু করে যত্ন নিয়ে বিকশিত করেছেন। কই, তাদের বাবা-মা কি তাদের উপর সর্বক্ষণ নিদারুণ মানসিক চাপ দিতেন? এখনও তারা নোবেল জিতছেন না বলে ক্রমাগত হাহাকার করতেন? অথচ রাশীদুল বারী সেই কাজটি তো করছেনই, পাশাপাশি ছেলের ব্যাপারে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন,

"আল্লাহ দুনিয়াতে আসেন না, তবে নিউটন, আইনস্টাইন, সুবর্ণদের মাধ্যমে মাঝে মাঝে আমাদেরকে তাঁর শক্তি প্রদর্শন করেন।" এই স্ট্যাটাস পড়ে আপনারা হাসবেন না কাঁদবেন সে সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিন। আর ভেবে দেখুন, কোনো বাবা-মা কি পারেন তাদের মাত্র সাত বছরের ছোট্ট সন্তানের ব্যাপারে এত বড় বড় কথা বলতে! 

সুবর্ণ আইজ্যাক

রাশীদুল বারীর ফেসবুক একাউন্ট থেকে আমরা যতটুকু আন্দাজ করতে পারি, আর দশটা সাধারণ শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে তিনি বেড়ে উঠতে দিচ্ছেন না তার কনিষ্ঠ পুত্রকে। সারাক্ষণ অংক করতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছেন। সাত বছরের শিশুটির কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছেন তার সোনালী শৈশব। শিশুটি হয়ত জানেও না যে জীবনে গণিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানের বাইরেও একটি বিশাল পৃথিবী আছে। সমবয়সীদের সাথে খেলা করার, খোলা মাঠে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ানোর স্বাধীনতা আছে। সে হয়ত জানেও না যে এখন তার এমন একটি বয়স যখন তার কোথাও হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। সে শুধু জানে, তাকে ফেসবুক লাইভে আসতে হবে, অংক করতে হবে, বাবার মুখ রাখতে হবে। আর হ্যাঁ, যে করেই হোক তাকে নোবেল জিততেই হবে। 

সুবর্ণের বাবা মাত্র আট বছর বয়সেই ছেলের মাথায় একটি বিষয় খুব ভালো করে ঢুকিয়ে দিয়েছেন যে নোবেল জেতাই হলো তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। কে জানে, সুবর্ণ হয়ত একদিন সত্যি সত্যিই নোবেল জিতবে। কিন্তু এত অল্প বয়সে নিশ্চয়ই নয়। সেজন্য তাকে আরও অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে, আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, আরও অনেক বেশি পরিণত হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু সে সুযোগ কি সে আদৌ পাবে? ইতিমধ্যেই বাবার নোবেল বিষয়ক অবসেশন হয়ত তার মাথার ভিতরও জেঁকে বসেছে। সে হয়ত ভাবছে, আর কদিন পরেই নোবেল পেয়ে যাবে সে। কিন্তু বাস্তবে যখন দেখবে এত কষ্ট করেও, সকল সুখ-আনন্দকে বিসর্জন দিয়েও নোবেল জেতা হয়ে উঠছে না, তখন কি তীব্র অবসাদে ভুগতে শুরু করবে না সে? এবং অবসাদে ভুগতে ভুগতে যদি মানসিকভাবেও সে অপ্রকৃতস্থ হয়ে ওঠে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

ছোটবেলায় প্রচণ্ড প্রতিভা নিয়ে জন্মেছে, এমন বহু শিশুর কথা আমরা জানি। তাদের অনেকের নামের পাশেই বসে যায় ভবিষ্যতের আইনস্টাইন বা নিউটনের খেতাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়জন জীবনে সত্যিই সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে? এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম যে ছোটবেলায় এমন খেতাব পাওয়া শিশুরা বড় হয়েও নিজেদের সেই প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পেরেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বড় হয়ে ভীড়ের মাঝেই হারিয়ে গেছে। তার একটি প্রধান কারণ হলো, খুব অল্পবয়সে পাওয়া খ্যাতিতে মাথা ঘুরে গেছে তাদের। আর তাদের বাবা-মাও অনেক বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছেন তাদের উপর, যে চাপ তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সামলানো সম্ভব হয়নি। সে-কারণে অফুরন্ত সম্ভাবনার অধিকারী শিশুরা কিছুদিনের মধ্যেই সাধারণের কাতারে নেমে এসেছে। 

আমরা চাই না সুবর্ণের বেলায়ও তেমন কিছু হোক। আমরা চাই সে যেন সত্যিই একদিন নোবেল জেতে, বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে। কিন্তু সেসবের জন্য সবার আগে প্রয়োজন তার একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শৈশব নিশ্চিত করা, যাতে করে সে কারও চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে নয়, বরং নিজের মনের আনন্দে গণিত-পদার্থবিজ্ঞান-রসায়নের চর্চা করে যেতে পারে, আর একদিন সত্যি সত্যিই আইনস্টাইন বা নিউটনের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, তার বাবা রাশীদুল বারীর কারণে সেটি হওয়া অসম্ভব।

এই ব্যক্তির কর্মকান্ড থেকে আমরা ধারণা করতে পারি তিনি বদ্ধ উন্মাদ। তবে তিনি কী, সেটি আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং তার কারণে যে অপার সম্ভাবনার অধিকারী একটি শিশু ক্রমশ মানসিক বৈকল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত। আমেরিকার মতো একটি দেশে কেউ কি নেই যে রাশীদুল বারীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে সুবর্ণ আইজ্যাককে?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা