কেমন হতো, যদি বইমেলার এই মাসে শুধু বই কেনার জন্যে কয়েক হাজার টাকা কেউ ধার দিতো আপনাকে? সেই টাকাটা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগও থাকছে!
সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বাক্যটা ভাবার্থের জন্যে ঠিকই আছে, কিন্ত আক্ষরিক দিক থেকে দেখতে গেলে, এই যুগে বইমেলা থেকে মোটামুটি তিন-চারটা বই কিনলেই মধ্যবিত্তের মানিব্যাগ ফাঁকা হয়ে যায়। কাগের দাম, প্রচ্ছদ, লেখকের রয়্যালিটি, প্রকাশনার খরচা, স্টলের খরচ- সবকিছু মিলিয়ে বইয়ের দামটা একটু বেশিই পড়ে যায়। আর তাই বই কিনতে গিয়ে মধ্যবিত্ত পাঠকের হয় দফারফা অবস্থা। সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধনটা হয়ে ওঠে না ঠিকঠাক।
কেমন হতো, যদি বইমেলার এই মাসে শুধু বই কেনার জন্যে কয়েক হাজার টাকা কেউ ধার দিতো আপনাকে? সেই টাকাটা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগও থাকছে- এমন অফার পেলে বইপ্রেমীরা লুফে নেবেন নিঃসন্দেহে। এই প্রজন্মের পাঠকদের জন্যে এমনই একটা দুর্দান্ত সুযোগ নিয়ে এসেছে বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। বইমেলা উপলক্ষ্যে পাঠকদের তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেবে সংস্থাটি, একদমই বিনা সুদে। তিনটি আলাদা আলাদা কিস্তিতে তিন মাসের মধ্যে এই ঋণ শোধ করার সুযোগ থাকছে।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে বই পড়ার আগ্রহ ফিরিয়ে আনতেই ‘‘সুবোধ’’ নামে অফারটি চালু করেছে আইপিডিসি। এই অফার উপভোগ করা যাবে বইমেলার পুরো সময়জুড়ে। “নতুন বইয়ের ঘ্রাণে, সুবোধ জাগুক প্রাণে”- এটা হচ্ছে তাদের স্লোগান। পাঠক আর নতুন বইয়ের মধ্যেকার দূরত্ব ঘোচানোর চমৎকার একটা প্রয়াস এটা।
এমনিতেই বইমেলার ক্রেতাদের একটা বড় অংশ থাকে ছাত্র, যাদের অনেকেরই মাসিক আয় প্রায় শূন্যের কোঠায়। কয়েক মাস ধরে টাকা জমিয়ে কেউ হয়তো বইমেলার জন্যে সঞ্চয় করে, কেউবা টিউশনির টাকা থেকে একটু একটু করে আলাদা করে রাখে ফেব্রুয়ারী মাসে নতুন বইয়ের ঘ্রাণটা প্রাণভরে উপভোগ করবে বলে। এই বিশাল পাঠকশ্রেণীর জন্যে দারুণ একটা সুযোগ হতে যাচ্ছে এটা।
আইপিডিসির এই ঋণ সুবিধাটা পেতে হলে আগ্রহী পাঠককে সঙ্গে করে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যেতে হবে। তার মুঠোফোনে থাকতে হবে মোবাইল ওয়ালেট সার্ভিস বিকাশ-এর অ্যাপটি। মেলায় আইপিডিসি’র বুথে ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও, তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ পাওয়ার সুবিধাও থাকছে বুথটিতে।
মেলায় বই কেনার জন্য প্রত্যেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা ঋণ পাবে। যা পরিশোধ করতে হবে তিন মাসের কিস্তিতে। ঋণের এই টাকাটা সর্বোচ্চ তিনটি লেনদেনের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। এখানে বলে রাখা ভালো, ঋণের টাকাটা কিন্ত বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে, হাতে হাতে নয়। আরও বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে বইমেলায় আইপিডিসি সুবোধের ১২৭ নম্বর স্টলে, অথবা তাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করলেও তথ্য পাওয়া যাবে।
আমাদের দেশে বাড়ি-গাড়ি কিনতে, এমনকি বিয়ে করতেও লোন দেয়া হয়, মোবাইল অপারেটরগুলো তো ইন্সট্যান্ট রিচার্জের জন্যে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নামের জরুরী সার্ভিস নিয়ে এসেছে অনেক আগেই। অথচ বইয়ের মতো প্রয়োজনীয় একটা জিনিস কেনার জন্যে যে পাঠকদের ঋণ দেয়া উচিত, সেটা এদেশে এর আগে কেউ ভাবেনি সম্ভবত।
দেরীতে হলেও শুরুটা করে দেয়ার জন্যে আইপিডিসিকে ধন্যবাদ, আশা করি তাদের দেখানো পথ ধরে আরও অনেকেই বইয়ের জন্যে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চালু করবে, টাকার অংকটাও খানিকটা বাড়বে। হিংসা আর হানাহানির এই পৃথিবীতে যে মানুষগুলো বইয়ের মাঝে একটু শান্তির ছোঁয়া খুঁজে পায়, তাদের পাশে দাঁড়ানোটা যে এখন খুব দরকার…