গ্ল্যামার দুনিয়ার আড়ালের এই গল্পগুলো অনেকেই জানে না। জানতে চায়ও না। তবুও কালের সাক্ষী হয়ে থাকে ঘটনাগুলো। যা কথা বলে সুশান্তদের হয়ে। মানবতার হয়ে।

অনেকেই বলেছিলো দ্বিতীয় শাহরুখ হবার মতো পটেনশিয়াল রয়েছে তার, অথচ ছেলেটা খুব দারুণভাবে প্রথম সুশান্তই হলো। যে গল্পটা এখনো করবো সেটার সাথে গ্ল্যামারের কোনো সম্পর্ক নেই। আছে একজন মানুষের গল্প। তার মানবতার গল্প।

সুশান্তের চলে যাবার সংবাদে যারাই খুব মনে খারাপ করেছেন, তাদের অধিকাংশই এমনটা করেছেন একজন প্রিয় অভিনেতা হারিয়েছেন বলে। এর বাইরেও এমন কেউ কেউ আছেন, যারা একজন ভালো মানুষ হারানোর কারণে শোকাক্রান্ত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে একজন নাগাল্যান্ড স্টেটের সাবেক গভর্নর পি.বি. আচার্য্য। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সে স্টেটের গভর্নর ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ভয়ঙ্কর এক বন্যার কবলে পড়ে নাগাল্যান্ডের বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রশাসন মূখ্যমন্ত্রীর ফান্ডের দিকে তাকিয়ে ছিলো সেসময়। অর্থকরি কিংবা খাবার সাহায্য সব সেখান থেকেই আসতো।

ঠিক সে সময়টায় সুশান্ত দিল্লীতে শ্যুটিং করছিলেন। বন্যার এ খবর শুনে তিনি নীরবে ছুটে গেলেন নাগাল্যান্ডের বানিজ্যিক রাজধানী দিমাপুরে। মূখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও’র হাতে তুলে দিলেন এক কোটি পচিশ লাখ রুপির চেক। তার সাথে আর কেউ ছিলো না। না কোনো সাংবাদিক, না কোনো ফ্যান ফলোয়িং।

বলা হয়ে থাকে, দান এভাবে করো যেন এক হাত দিয়ে দিলে অন্য হাতও টের না পায়। সুশান্ত ঠিক সেই কাজটাই করলেন। নিজের ডোনেশনের কোনো পাবলিসিটি তিনি করেননি। শুধু নাগাল্যান্ডেই নয়। সেবছর কেরালার বন্যার ফান্ডেও প্রায় সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই থেমে থাকেননি। নাগাল্যান্ডের কোহিমায় গভর্নরের কাছে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন।

সুশান্তের এই মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন গভর্নর সাহেব। নাগাল্যান্ডের অতিথি হবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো সুশান্তকে। সে’ও খুব উচ্ছ্বসিত ছিলো এটা নিয়ে। কিন্তু সেই বন্যা পরিস্থিতির সময় তখনই সেটা সম্ভব হয়নি। দিমাপুর থেকে কোহিমার পথ প্রায় চার ঘন্টার। তার ওপর ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি। এরই মাঝে সুশান্তকে দিল্লী ফিরতে হয় ফেলে আসা শুটিং এর কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য। 

সুশান্তের কেরালা ডোনেশনের গল্প 

সুশান্তের আর ফেরা হয়নি সেখানে। চলে গিয়েছেন জীবনের মায়া ত্যাগ করেই। তবে তার এই মানবতার গল্পটা এখনো বেঁচে আছে। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর নাগাল্যান্ড স্টেটের সাবেক গভর্নর পি.বি. আচার্য্য এর ছেলে চারুদত্ত আচার্য্য এই পুরো ঘটনার ছবিসহ বর্ননা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোষ্ট করেন। সেটা ভাইরাল হবার পরেই আমরা জানতে পারি এই ঘটনার কথা।

বলিউডের নেপোটিজমের আঘাতে জর্জরিত সুশান্তের ব্যক্তিজীবনের গল্পগুলো যখন সামনে উঠে আসছে, তখন তার এই মহানুভবতার ঘটোনাগুলো আফসোস আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত ছয় মাসে সাতটা সিনেমার কাজ হাতে পেয়েও হারিয়েছিলেন তিনি ঐ নেপোটিজমের কারণে। বলিউডের কোনো পার্টিতেই আমন্ত্রিত হতেন না, তাকে একঘরে করে রাখা হতো শুধুমাত্র তার ইন্ডাস্ট্রির পারিবারিক ব্যাকরাউন্ড নেই বলে।

অথচ মানুষের জন্য উদার মনেই এগিয়ে গিয়েছেন তিনি সবসময়। গ্ল্যামার দুনিয়ার আড়ালের এই গল্পগুলো অনেকেই জানে না। জানতে চায়ও না। তবুও কালের সাক্ষী হয়ে থাকে ঘটনাগুলো। যা কথা বলে সুশান্তদের হয়ে। মানবতার হয়ে।

আরও পড়ুন- 

 

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা