একটা মৃত্যুকে ঘিরে কত নোংরা পলিটিক্যাল গেম খেলা সম্ভব, অপপ্রচার চালিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালে যে কাউকে ন্যাশনাল ভিলেন বানানোটাও যে বাম হাতের খেল- সেটা সুশান্ত মারা না গেলে জানা হতো না...

ফ্যাক্ট বাদে এই লেখার সব অনুসিদ্ধান্তই লেখকের উর্বর মস্তিস্কপ্রসূত, কারো দ্বিমত থাকতেই পারে। আমি সেটাই লিখছি, যেটা গত দুই মাস ধরে দেখছি। একটা মৃত্যুকে ঘিরে কত নোংরা পলিটিক্যাল গেম খেলা সম্ভব, সেটা সুশান্ত সিং রাজপুত মারা না গেলে জানা হতো না। আমার চোখে পুরো ঘটনাটা নানা ইস্যু থেকে মানুষের নজর সরাতে একজন নারীর বিরুদ্ধে একটা রাষ্ট্রযন্ত্রের উঠেপড়ে লাগা, একজন মানুষের (তিনি অপরাধী হতেও পারেন, নাও হতে পারেন, বিচারের দায়িত্ব আদালতের) বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল সাজিয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া কিংবা রাজনৈতিক ফায়দার আশায় কোটি কোটি মানুষের চোখে নির্দিষ্ট একজনকে জাতীয় খলনায়ক সাজিয়ে তার জীবন এবং পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তোলা- এই ব্যাপারগুলোকে আমি অপরাধ বলেই মনে করি। 

এক নজরে ঘটনাক্রম

১৪ই জুন সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত মৃতদেহ আবিস্কার হয় মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাসভবন থেকে। এরকম একজন তরুণ সেনসেশনের মৃত্যু কেউ মানতে পারবে না, স্বাভাবিক ব্যাপার; হত্যা নাকি আত্মহত্যা- ওই প্রশ্ন তাই উঠলোই। প্রথমে বলিউডের নেপোটিজমকে ধুয়ে দেয়া হলো, জনগণের রিয়্যাকশন দেখে মনে হলো করণ জোহর বুঝি ফাঁসির দড়িটা বেঁধেছেন, আর সালমান খান এসে বডিটাকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এরপরে সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর নাম এলো, ছেলেকে হত্যা ও টাকাপয়সা মেরে দেয়ার অভিযোগে বিহারে রিয়ার নামে মামলা করলেন সুশান্তের বাবা। এদিকে সালমান-করণদের নামেও এক উজবুক উকিল মামলা করে বসলো ফুটেজের আশায়, যথারীতি সেই মামলা খারিজও হলো। 

বিহার পুলিশ রিয়াকে গ্রেপ্তার করে সেখানে নিয়ে যেতে চাইলো, এদিকে মুম্বাই পুলিশ তদন্তের অধিকার ছাড়তে রাজী হলো না। দুই রাজ্যের সরকারের মধ্যে শুরু হলো চাপান-উতোর। আদালতের নির্দেশে মামলা গেল সিবিআইয়ের হাতে, যেটার আর্জি রিয়া নিজেও করেছেন। এর মাঝে রিয়াকে খুনী বানিয়ে ফেলার সব দায়িত্ব তো ইন্ডিয়ান মিডিয়া নিয়েই নিয়েছে, হাওয়া থেকে তথ্য এনে প্রমাণ সেরেও ফেলেছে। সুশান্তের বাবার করা 'অর্থ পাচার' অভিযোগের তদন্ত করতে হাজির হলো এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সিবিআইয়ের জেরায় উঠে এলো মাদক সংক্রান্ত তথ্য, সেটার তদন্তের জন্য আবার হাজির হলো নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্ট। তারাই গতকাল হেফাজতে নিয়েছে রিয়াকে, এর আগে একই বিভাগের হেফাজতে ঠাঁই পেয়েছেন রিয়ার ভাই সৌভিকও। মোটাদাগে এই হচ্ছে টাইমলাইন। এবার আমার পর্যবেক্ষনগুলো বলি। পয়েন্ট আকারেই তুলে ধরছি। 

সুশান্তের মৃত্যু ও নেপোটিজম যোগ

বলিউডে নেপটিজম আছে, এটা দিনের আলোর মতো সত্যি। নেপোটিজম কোথাও থাকা উচিত নয়, এটাও সত্যি, কিন্ত নেপোটিজম সব জায়গায় ছিল, আছে থাকবে- এটা বাস্তবতা। সুশান্তের মৃত্যুর পরদিন থেকে নেপোটিজমের নামে তথাকথিত 'বলিউড মাফিয়া'দের বিরুদ্ধে জনগন যেভাবে অনলাইন যুদ্ধে নেমে তাদের বয়কটের ডাক দিলো, সেটা ভীষণ হাস্যকর। নেপোটিজম কখনও, আই রিপিট কখনোই সুশান্তের মৃত্যুর কারণ ছিল না, হতেও পারে না। করণ জোহর কাকে নিয়ে সিনেমা বানাবে, সালমান খান তার সিনেমায় কাকে নেবে- এগুলো তাদের নিজস্ব ব্যাপার। ভালো না লাগলে দর্শক সিনেমা দেখবে না, সেই অপশন খোলা আছে। সুশান্তকে নিয়ে অনুরাগ কাশ্যপ সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন, অনুরাগকে ডেট না দিয়ে সুশান্ত নাম লিখিয়েছে করণের 'ড্রাইভ' সিনেমায়। অনুরাগকে রিজেক্ট করে এমন আবর্জনা টাইপের সিনেমা করার পরেও যদি কেউ সুশান্তের মৃত্যুতে নেপোটিজম ইস্যু খুঁজে পায়, তার জন্য এক বালতি সমবেদনা ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই। 

জীবন যদি আপনাকে নেপোটিজম উপহার দেয়, আপনি নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী হয়ে দেখান, মনোজ বাজপাই হয়ে জ্বলে উঠুন, পঙ্কজ ত্রিপাঠী হয়ে দেখিয়ে দিন। ফট করে দড়িতে ঝুলে পড়লে তো সমস্যা! আর হ্যাঁ, ইন্সটাগ্রামে করণ-আলিয়াকে আনফলো দিলেই নেপটিজম চলে যাবে না। মাথায় রাখতে হবে, বক্স অফিসে সবচেয়ে সফল সুপারস্টার আমির খান, সবচেয়ে বেশিবার ফিল্মফেয়ার জয়ী অভিনেত্রী কাজল, এবং এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা দুই অভিনেতা অভিনেত্রী রনবীর-আলিয়া কিন্ত নেপোটিজমেরই ফল। এক মুখে নেপোটিজমকে গালি দেবেন, অন্যদিকে অনন্যা পান্ডের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঢুকে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে- এমন দ্বিচারিতা নিয়ে যুদ্ধ হবে কি করে? তবুও জনগণ গালি দিলো, কারণ গালি দেয়ার জন্য একটা অপশন দরকার ছিল তাদের। কখনও সেটা করণ জোহর হলেন, কখনও আবার মহেশ ভাট। 

কঙ্গনা রনৌত (পার্ট ওয়ান)

এই অভদ্রমহিলাকে নিয়ে আমি গোটা একটা বই লিখতে পারব। বলিউডে খারাপ মানুষ অজস্র এসেছে, সন্দেহ নেই। তবে কঙ্গনার মতো পিকিউলিয়ার লেভেলের হিপোক্রেট এবং আবেগ ব্যবসায়ী আর কেউ যে ছিল না- এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সুশান্তের মৃত্যুর পরদিন থেকে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন তার পুরনো শত্রু করণ জোহরদের বিরুদ্ধে। সরাসরি তিনি 'মুভি মাফিয়া'দের দায়ী করেছেন সুশান্তের মৃত্যুর জন্য, অভিযোগ এনেছেন, সুশান্তকে একের পর এক সিনেমা থেকে বাদ দেয়ায় তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বলিউডে সিনেমা থেকে বাদ পড়াটা একটা কমন কালচার, প্রত্যেকের জীবনে এটা ঘটে, রোল হাতছাড়া হয়, সিনেমায় অভিনয় করেও অনেকে এডিটিংয়ে বাদ পড়ে যায়। যারা টিকে থাকে, তারাই ইতিহাস লেখে। এগুলোকে কারো মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করাটা স্থুলবুদ্ধির উদাহরণ। 

সেন্ট্রাল পলিটিক্স

সুশান্তের ইস্যুটা এতদিন ধরে সগৌরবে টিকে আছে কেন জানেন? সুশান্ত তারকা অভিনেতা ছিলেন বলে নয়, প্রমিজিং সুপারস্টার ছিলেন বলেও নয়, আমি যতদূর বুঝেছি, এই ইস্যুটাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে শুধু এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আশায়। সেটা কিরকম? কেন্দ্রীয় রাজনীতি দিয়ে শুরু করা যাক। ভারতের অর্থনীতি এই মুহূর্তে ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। ডিজেলের দাম সর্বোচ্চ, রূপির দাম বাংলা টাকার পর্যায়ে নেমে এসেছে। দেড় কোটি লোক বেকার হয়েছে শুধু মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে। অটো ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে গেছে একরকম, নতুন কর্মসংস্থানের কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। মানুষ টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছে, সেই টাকা তুলতে পারছে না, কারণ ব্যাংক ফাঁকা হয়ে আছে। এদিকে চীনা সেনারা ভারতের ভেতর ঢুকে বসে আছে লাদাখ সীমান্তে, নরেন্দ্র মোদি জবাব হিসেবে একের পর এক চায়নীজ অ্যাপ ব্যান করে চলেছেন শুধু। 

এতসব থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে হলে কি করতে হবে? সুশান্ত না মরলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা একটা লাগতো, আমি নিশ্চিত। এখন যেহেতু ইস্যু তৈরির কাজটা সুশান্তই করে দিয়েছেন, সেটাকে জিইয়ে রাখার দায়িত্ব বিজেপি নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিলো। বিজেপির আইটি সেলের প্রতি আমার একটা আলাদা ভক্তি আছে, এরা চাইলে সূর্যের বুকেও প্রাণের অস্তিত্ব আবিস্কার করে ফেলতে পারবে শুধু চাপার জোরে। সুশান্ত ইস্যুতে অনলাইন এবং অফলাইনে একের পর এক গুজব রটেছে গত দুই মাসে। কোটি কোটি রূপি খরচা করা হয়েছে ফেসবুক-টুইটার আর ইউটিউবে সেসব পোস্ট বুস্ট করার জন্য। নোংরামির চূড়ান্ত করতে একটু দ্বিধা করেনি এরা, কখনও করেও না অবশ্য। মহেশ ভাটকে রিয়ার 'সুগারড্যাডি' বানানো হয়েছে, কঙ্গনা রনৌতকে বানানো হয়েছে সুপার হিরোইন। 

মহারাষ্ট্রের রাজনীতি

সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে পলিটিক্যাল অ্যাঙ্গেল খুঁজতে গেলে আপনাকে ভারতের দুটো রাজ্যের রাজনীতি সম্পর্কে একটু ধারণা রাখতে হবে। প্রথমেই মহারাষ্ট্র, অর্থাৎ মুম্বাই নগরীটা যে রাজ্যে অবস্থিত। মহারাষ্ট্রে বিজেপির একনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল শিবসেনা, এরা বিজেপির চেয়েও বড় কট্টরটবাদী। কিন্ত গত নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে বিজেপির সাথে এদের ক্যাঁচাল হলো, ফাঁকতালে কংগ্রেস এবং এনসিপির (একটা লোকাল পার্টি) সঙ্গে জোট গড়ে এরা সরকার গড়ে ফেললো। সেই থেকে বিজেপি নেতৃত্ব ভীষণ ক্ষ্যাপা এদের ওপর। শিবসেনা এবং জোট সরকারকে ফাঁদে ফেলার এমন কোন চেষ্টা নেই যেটা বিজেপি করছে না। 

সুশান্তের মৃত্যুটাকেও একটা ইস্যু বানানো হয়েছে এখানে, প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে, এক পার্টিতে নাকি শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরের (যিনি আবার মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রীও) সঙ্গে সুশান্তের ঝগড়া হয়েছিল, সেকারণে সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে যোগ আছে আদিত্যের। আজগুবি একটা গুজব এমনভাবে ছড়ানো হয়েছে যে, আদিত্যকে টুইট করে ক্ল্যারিফাই করতে হয়েছে যে, সুশান্তের সঙ্গে তার কোনদিন ঝগড়া হয়নি! গত কয়েকদিন ধরে কঙ্গনা যে একের পর এক শিবসেনা নেতা এবং মুম্বাই সরকারকে গালাগাল করে যাচ্ছেন, মুম্বাইকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বলছেন, এটাও প্ল্যানের অংশ। কঙ্গনার সরকারবিরোধী অবস্থান দেখে তাকে ক্রান্তিকারী ভাবার কোন কারণ নেই, মহারাষ্ট্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে তিনি এখন নাক ডেকে ঘুমাতেন। 

বিহার ইলেকশন

বিহারের পলিটিক্সটাও আপনাকে বুঝতে হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় সমীকরণ এখানে। সুশান্ত নিজে বিহারের সন্তান, সেখানকার ক্ষমতায় এখন যে দলটা আছে, সেই জনতা দল (জেডি) এর সহযোগী হিসেবে আছে বিজেপি। আগামী ইলেকশনে (যেটা নভেম্বরে হবে) জোট বেঁধে লড়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিহারে কংগ্রেস-বিজেপি দুই পক্ষই খুব বেশি শক্তিশালী নয় (স্টেট পলিটিক্সে), কাজেই লোকাল দলগুলোর সাথে জোট বাঁধা ছাড়া উপায়ও নেই তাদের। ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া জেডি-বিজেপি সুশান্ত ইস্যুটাকে যে কোন মূল্যে কাজে লাগাতে তৎপর। নিচের ছবিটার দিকে তাকান। হিন্দিতে সুশান্তের ছবির ওপর লেখা 'না ভুলেঙ্গে, না ভুলনে দেঙ্গে' (তোমাকে ভুলব না, ভুলতে দেবোও না)। 

সুশান্তের মৃত্যু এখন ভোটের রাজনীতির অংশ হয়ে গেছে

সুশান্তের মৃত্যুটাকে কিভাবে ভোটের প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে, এটা তার ছোট্ট একটা নমুনা। মনে করিয়ে দিই, সুশান্তের ছবি কেদারনাথ বয়কটের আহবান জানিয়েছিল এই বিজেপিরই সহযোগী সংগঠন হিন্দু মহাসভা, বজরং দল; কারণ সেখানে এক হিন্দু মেয়ে একটা মুসলমান ছেলের প্রেমে পড়ে। 'লাভ জিহাদ মানি না' ধুয়া তুলে এরাই সুশান্তের ছবি বয়কট করতে চেয়েছিল তখন। আজ সুশান্তের জন্য দরদ দেখে মুখ ফুটে গালি আসে। 

রাজ্য হিসেবে এমনিতেও বিহারের অবস্থা খুব খারাপ, ভারতের সবচেয়ে অনুন্নত রাজ্য এটা, কিছুদিন আগে বন্যায় ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার লকডাউনের ফাঁদে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যে আটকা পড়ে যেসব শ্রমিক ভুক্তভোগী হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বিহারি। এসব থেকে নজর সরানোর বড়সড় একটা উপায় পাওয়া গেছে, তার নাম সুশান্ত। বিহারের ভোটের সমীকরণ এমনিতেও খুব জটিল। জাতপাত-ব্রাহ্মণ-দলিত প্রচুর কাহিনী। এখন বিচারের নাম করে কাউকে মাস তিনেক আটকে রাখা গেলেই কেল্লাফতে। রাজপুত ভোট পুরোটাই পাওয়া যাবে, মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট ধরা যাবে, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা যাবে। তাই বলির পাঁঠা বানাও কাউকে!

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নগ্ন নৃত্য

ইন্ডিয়ান মিডিয়া (দিল্লি ও মুম্বাইভিত্তিক টিভি চ্যানেল) নিয়ে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যেতে পারি। যে তামাশার সার্কাস এরা চালাচ্ছে ছয় বছর ধরে, আমি দেখি আর মুগ্ধ হই, মিডিয়া কিভাবে এমন পক্ষপাতী আচরণ করতে পারে, কিভাবে দাঙ্গা বাঁধাতে পারে, সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বিষবাস্প ছড়াতে পারে। এক এনডিটিভি ছাড়া সবগুলো চ্যানেল স্রোতে গা ভাসিয়েছে, গোঁড়া হিন্দুত্ববাদ আর বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতির পদলেহনে ব্যস্ত হয়েছে। এনডিটিভির সাংবাদিক রবীশ কুমার এসব মিডিয়ার নাম দিয়েছেন গোদি মিডিয়া। গদিতে থাকা দলের পা চাটাই এদের কাজ।

সারা বছর এরা ব্যস্ত থাকে হিন্দু-মুসলমান ইস্যু নিয়ে। ভারতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, এরা ডিবেট করে মোদি রাত নয়টায় থালা-বাসন বাজাতে বলেছেন, এটা নিয়ে। শত শত মাইল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে শ্রমিকেরা মরছে অসহায়ভাবে, গোদি মিডিয়া তখন ব্যস্ত রামমন্দির নিয়ে। সুশান্ত মারা যাওয়ায় এদের হাতে নতুন টপিক এসে হাজির হলো। চীনের আক্রমণে ভারতীয় সেনা মারা যাচ্ছে, এরা খবর করছে 'রিয়া নে কিয়া সুশান্ত কো কালা জাদু' (সুশান্তের ওপর কালো যাদু প্রয়োগ করেছেন রিয়া), বেকারত্বের হার বাড়ছে, এরা তখন ব্যস্ত মরার আগে সুশান্ত শেষবার কোন ফলের জুস খেয়েছেন, তার গলায় ফাঁসের দাগ কতটা গভীর, কিংবা সুশান্তের মৃত্যুতে তার বাবা কতটা দুঃখ পেয়েছেন, দুনিয়াকে সেটা জানানোর কাজে। কেউ কেউ তো ন্যাশনাল টেলিভিশনে প্ল্যানচেট করে সুশান্তের আত্মাকে ডেকে আনছিলেন লাইভ শো-তে! কল্পনা করতে পারেন অবস্থাটা? 

সুশান্তকে নিয়ে আলোচনা হবে, তার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে টেলিভিশন ডিবেটও হবে। কিন্ত একটা মাসের আঠাশটা দিন যদি কেউ সুশান্তের মৃত্যু নিয়েই ঘ্যানঘ্যান করে, সেটার পেছনে যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে, এটা বুঝতে কষ্ট হয় না। ভারত সরকার করোনার মধ্যে জোর করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে, ছাত্রদের তুমুল আপত্তি, প্রতিবাদ, কিছুই ধোপে টেকেনি। অথচ মিডিয়ায় এসব আসে না। বিজেপির দুই পোষা 'উপস্থাপক' অর্নব গোস্বামী আর সুধীর চৌধুরী নিজ নিজ চ্যানেলে সারাদিন ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো চেঁচাতে থাকে সুশান্তের নাম নিয়ে!

মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছেন রিয়া ও তার পরিবার

এই মিডিয়াই রিয়া চক্রবর্তীকে তদন্তের আগে অপরাধী বানিয়ে দিয়েছে, তার এবং তার পরিবারের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। রিয়ার বাবা থেকে শুরু করে বাসার দারোয়ান, সবাই শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছে মাইক্রোফোন হাতে থাকা কিছু দোপেয়ে জন্তুর হাতে। এক ফুড ডেলিভারি বয় ওই বিল্ডিংয়ে পিজ্জা ডেলিভারি দিতে ঢুকেছিল, তাকে যেভাবে ঘিরে ধরে কার বাসায় গেছো, কি অর্ডার ছিল, কে করেছে অর্ডার টাইপের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে চ্যানেলগুলো, সেটা দেখে ভারতের লোকজনের জন্য খারাপই লেগেছে। মব লিঞ্চিং ছাড়া এটা আর কিছুই না। মিডিয়াকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, ভারত নামের চেয়ারটার চার নম্বর পায়াটা তো নেই বললেই চলে। আফসোস, ইন্ডিয়ান মিডিয়া যদি রিয়ার বাবা বা বাসার দারোয়ানের মতো ভারতের অর্থমন্ত্রীকেও জিডিপি নিয়ে প্রশ্ন করতে পারতো, অমিত শাহকে সেনা হত্যার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস রাখতো! 

কঙ্গনা রনৌত (চ্যাপ্টার টু)

সুশান্তের মৃত্যুর পরে ইমোশনাল সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটা ভিডিও বানিয়ে ফেলেছিলেন কঙ্গনা। তারপর সুশান্তের বাবার আইনজীবির বক্তব্যে আমরা জানলাম, সুশান্তের পরিবারের সঙ্গে নাকি একবারও যোগাযোগ করেননি তিনি। আইনজীবি পরামর্শ দিলেন তাকে চুপ থাকার জন্য। কিন্ত বেশিদিন চুপ করে থাকা কঙ্গনার কাজ নয়, তিনি এবার লাগলেন মহারাষ্ট্র সরকার আর শিবসেনাকে নিয়ে, যেটার কথা আগেই বলেছি। বললেন, 'খান গ্যাং' নাকি বলিউড নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের জন্য মেধাবীরা জায়গা পায় না। আরও বললেন, মুম্বাইকে তার কাছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বলে মনে হয়, বলিউডের ৯৯% সেলিব্রেটিই নাকি ড্রাগে আসক্ত, ব্লা ব্লা ব্লা। 

কঙ্গনার এই বক্তব্যগুলোকে অগোছালো কথাবার্তা বা পাগলের প্রলাপ ভাবলে অনেকেই ভাবতে পারেন, আমার চোখে এগুলো প্ল্যানমাফিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন। কঙ্গনা ক্ষেপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মহারাষ্ট্র সরকারকে। তারা ক্ষেপে গিয়ে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে লোক পাঠিয়ে কঙ্গনার অফিসের জায়গা অবৈধ দাবী করে ভাঙচুর চালিয়ে এসেছে। দিনশেষে সিম্প্যাথি কিন্ত কঙ্গনাই পাচ্ছেন। নেপোটিজমের বিরুদ্ধে এত কথা বলা কঙ্গনা কাদের ঘাড়ে চড়ে ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টা পার করেছেন, সেসব কথা অনেকের মনে নেই। অপমৃত্যু নিয়ে কঙ্গনার এত বেদনা থাকলে জিয়া খানের মৃত্যুর সময় কঙ্গনা কেন চুপ ছিলেন? কারণ জিয়ার মৃত্যুর পর যার দিকে অভিযোগ উঠেছিল, সেই সুরজ পাঞ্চোলির বাবা অদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে কঙ্গনার তখন তুমুল প্রেম। 

কঙ্গনা আজ মাদক নিয়ে কথা বলেন, অথচ চার বছর আগেই তার সাবেক প্রেমিক অধ্যয়ন সুমন এক সাক্ষাৎকারে দাবী করেছিলেন, কঙ্গনা নাকি পার্টিতে তাকে জোর করে কোকেন খাইয়েছিলেন! তদন্ত তো সেটারও হওয়া উচিত, তাই না? কঙ্গনা নেপোটিজমকে ধুয়ে দেন, তিনি কেন মুকেশ আম্বানীকে জিজ্ঞেস করেন না যে, কিসের যোগ্যতাবলে মুকেশ তার ছেলেকে জিও'র ডিরেক্টর বানিয়ে দিয়েছেন? কিংবা অমিত শাহ'র ছেলে হওয়া ছাড়া জয় শাহ'র এমন কি যোগ্যতা আছে যে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারির পদ পেলেন? এই মহিলাকে কিছু মানুষ নারীবাদের প্রতীক, দ্রোহের প্রতিমা মনে করে, এদের দেখলে করুণা হয়। 

রিয়া চক্রবর্তী: স্কেপগোট অব দ্য সেঞ্চুরী?

সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটা নাকি সবার শেষে রাখতে হয়। সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে রিয়ার সংযোগের শুরুটা সুশান্তের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগ ছিল, রিয়া নাকি সুশান্তের একাউন্ট থেকে পনেরো কোটি রূপি সরিয়ে ফেলেছেন- যার কোন প্রমাণ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পায়নি। কয়েক দফা তদন্ত হয়েছে, জেরা হয়েছে, ব্যাংক ট্রানজেকশন চেক করা হয়েছে, কিছুই পাওয়া যায়নি। রিয়া গোল্ডডিগার হতে পারেন, সুশান্তের টাকায় ফুর্তি করেও বেড়াতে পারেন, নিজের খরচ সুশান্তের ক্রেডিট কার্ড থেকে চালাতে পারেন- কিন্ত সেটার শাস্তি মিডিয়া ট্রায়াল বসিয়ে, তাকে দেশের এক নম্বর ভিলেন বানিয়ে তার প্রাণ সংশয়ে ফেলা হতে পারে না। সুশান্ত যদি রিয়ার পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেও থাকেন, সেটা তিনি রিয়াকে ভালোবাসতেন বলেই করেছিলেন। 

এরপরে এলো মাদক সংযোগ। মূলত এই অভিযোগেই রিয়া এবং তার ভাইকে হেফাজতে নিয়েছে নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্ট। যদিও এই গ্রেপ্তার নিয়ে আমার একটা আলাদা পারসেপশান আছে। আগে হোক, পরে হোক- রিয়া গ্রেপ্তার হতেনই। তবে সম্ভবত সাংবাদিকদের শারীরিক আক্রমণ থেকে বাঁচাতেই দ্রুত রিয়াকে হেফাজতে নিয়েছে নারকোটিক্স। একেকদিন রিয়া জবানবন্দি দিতে এলে যেভাবে মাইক্রোফোনওয়ালারা তাকে ঘিরে ধরতো, ক্ষুধার্ত হায়েনারাও এভাবে শিকারকে ঘিরে ধরে না। যারা রিয়াকে হেফাজতে নেয়ার ঘটনাতেই 'সুশান্ত জাস্টিস পেয়ে গেছে' রব তুলছেন, তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে রিয়ার জড়িত থাকার কোন আলামত এখনও পাওয়া যায়নি। রিয়া নারকোটিক্সের হেফাজতে আছেন শুধুমাত্র ড্রাগ ট্র‍্যাফিকিংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে। 

রিয়ার হোয়াটসএপ ম্যাসেজ থেকে জানা গেছে, জনৈক ড্রাগ ডিলারের কাছ থেকে মারিজুয়ানা কিনেছিলেন তিনি। আরেকজন হোয়াটসএপেই তাকে পরামর্শ দিয়েছেন কিভাবে কয়ফোঁটা পানির সঙ্গে মিশিয়ে কোন ঔষধটা খাওয়ালে কাউকে ঘুম পাড়ানো যাবে। রিয়ার দাবী, তিনি সেই মাদক কিনেছিলেন সুশান্তের জন্যেই। সুশান্ত কেদারনাথের শুটিং চলাকালীন সময় থেকেই ড্রাগে এডিক্ট ছিলেন বলে দাবী রিয়ার। গ্রেপ্তারের পর রিয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে, তার দেহে কোন মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ নিজে মাদক না নেয়ার যে দাবী রিয়া করেছেন, সেটা মিথ্যা নয়। রিয়ার দাবী, ঘুমের ঔষধও সুশান্তেরই। সুশান্ত যে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, সেটা সত্যি। তিনি মনোবিদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন- সেটা রিয়া যেমন দাবী করেছেন, তেমনই সিবিআইও সত্যতা পেয়েছে। 

সুশান্তকে রিয়া কেন মাদক দিতেন, এই প্রশ্নের জবাব জানা জরুরী। তবে সেটা তদন্তের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসুক। রিয়ার লিক হওয়া হোয়াটসএপ মেসেজ থেকে জানার আগ্রহ আমার নেই। প্রতিটা মানুষের প্রাইভেসি থাকে, একজন খুনীরও থাকে। রিয়ার হোয়াটসএপ কনভার্সেশন যেভাবে একশো ত্রিশ কোটি ভারতীয়'র সামনে খুলে দিয়েছে গোদি মিডিয়া, সেটা ন্যাক্কারজনক। আর হ্যাঁ, ড্রাগ নেয়ার বা ড্রাগ দেয়ার কারণ জানার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা জিনিস জানিয়ে যাই- সুশান্ত ৩৪ বছরের তাগড়া যুবক ছিলেন, ষোলো বছরের ইমোশনাল কোন টিনেজার নন, যে কেউ তাকে প্রভোক করেই মারিজুয়ানা বা কোকেন খাওয়াতে পারবেন। রিয়া ছাড়াও সুশান্তের আরও কয়েক বন্ধুও যে সুশান্তকে মাদকের সাপ্লাই দিতো, সেই তথ্যও তো নারকোটিক্সের কাছে আছে। বসিত পরিহার এবং স্যামুয়েল মিরান্ডা নামের দুজন আটকও হয়েছেন, শেষের জন সুশান্তের ম্যানেজার ছিলেন। 

আমার কথাটা পরিস্কার। অপরাধকে ঘৃণা করি, প্রয়োজনে অপরাধীকেও ঘৃণা করি, কিন্ত তারচেয়ে বেশি ঘৃণা করা উচিত কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপরাধী বানানোটাকে, মিডিয়া ট্রায়াল করে কাউকে দাগী আসামী বানানোকে। এভাবে মব লিঞ্চ করার অধিকার মিডিয়াকে কেউ দেয়নি। রিয়ার বিচার করার জন্য ভারত সরকারের তিনটা বাঘা বাঘা সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে, এদের ছাপিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের নামে এই নোংরামিটা অসহ্য। কলকাতায় অনেক বছর আগে এভাবেই ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি নামে এক গরীব দারোয়ানকে মিডিয়া ট্রায়ালের চাপে ধর্ষক বানিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল আদালত, তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে অজস্র প্রশ্ন থাকা স্বত্বেও বেনিফিট অফ ডাউট পায়নি ধনঞ্জয়। আজ জাতীয় ইস্যু আড়াল করা, ভোটের রাজনীতি আর গোদি মিডিয়ার বাড়াবাড়ির কারণে অন্য কাউকে যেন সেই পরিণতি বরণ করতে না হয়- সেটাই আমি চাইবো।

আর হ্যাঁ, নিচের ছবিতে যে টুইটটা দেখছেন, এটা রিয়ার করা। এবছরের শুরুতে যখন জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে এবিভিপির ক্যাডাররা (বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) হামলা চালিয়েছিল বামপন্থী ছাত্রদের ওপর, পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ঐশির, তখন হাতেগোনা দুয়েকজন বলিউড সেলিব্রেটির মধ্যে রিয়া একজন ছিলেন, যিনি প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে এত ক্ষোভের এটাও একটা কারন কিনা জানা নেই। অপ্রাসঙ্গিক, তবু মনে করিয়ে দিলাম, রিয়ার কিন্ত বিজেপি বিরোধী একটা অবস্থান আছে। 

জেএনইউতে হামলার পরে রিয়ার টুইট

জন ও গণকে নিয়ে অল্প কিছু কথা: 

চন্দ্রিল ভট্টাচার্য বলেছিলেন, জনগণ হচ্ছে সে, যে মাথা দিয়ে ভাবে না, হুজুগে দৌড়ায়। আমার চোখে গণ হচ্ছে বুদ্ধিবিবর্জিত একদল জোম্বি। এদের গালি দেয়ার জন্য একটা কমন অপোনেন্ট লাগে। একদিন সেই অপোনেন্ট করণ জোহর হয়, একদিন সালমান খান তো আরেকদিন রিয়া চক্রবর্তী। এরা হ্যামেলিনের ইঁদুরের মতো বাঁশিওয়ালার পেছন পেছন দৌড়ায়, দৌড়ের উদ্দেশ্য না জেনেই। গণ হচ্ছে সে, যে নেপোটিজমকে খতম করার জন্য সড়ক-২ আর গুঞ্জন স্যাক্সেনাকে ওয়ান স্টার রেটিং দেয়, আর সুশান্তের গার্বেজ টাইপের সিনেমা দিল বেচারাকে আইএমডিবির ইতিহাসের টপ রেটেড সিনেমা বানানোর চেষ্টা করে। এই গণ'র মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়াটা দুনিয়ার সবচেয়ে সহজ কাজ, এবং সুশান্ত ইস্যুতে সেটাই চলছে শুরু থেকে...

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা