এমন দিন আসুক, যখন আত্মহত্যার খবরে জান্নাত জাহান্নামের হিসাবের বাইরে গিয়েও মানুষ একটু ভিন্ন ভাবনা ভাববে। সে মরে গিয়ে ভুল করেছে এভাবে না ভেবে কোন কোন ভুল আচরণ তাকে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে সেই উল্টো সাইডটাও লোকে দেখবে।

আত্মহত্যা বিস্ময়কর না। এই শতাব্দীতে তো না-ই। বিশেষ করে পাবলিক ফিগারদের জন্যে যে একটা বিষাক্ত পরিবেশ আমরা তৈরি করে রেখেছি! প্রত্যেকটা মুহুর্তে জাজমেন্ট করি। তিলকে তাল বানিয়ে এমনভাবে সোশ্যাল মিডিয়া শেমিং করা হয় একেকজন পাবলিক ফিগারকে ধরে, খোদা জানে ওই রাতগুলো তারা কিভাবে সারভাইব করে! কিভাবে এই নেগেটিভিটি ওভারকাম করে কে জানে।

আমরা সেলিব্রেটিদেরকে সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা করে ভাবি, মনে হয় ওরা প্রিভিলেজড বলে ওদের জীবনে বোধহয় ডিপ্রেশন বলে কিছু নেই৷ মনে করি, সে যেহেতু পাবলিক ফিগার তাকে যা খুশি বলা যেতেই পারে। এপ্রিশিয়েশন দলবদ্ধভাবে না করলেও কাউকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে নামানোর আদিম বুনো উল্লাসে আমরা ঠিকই একত্র হয়ে যাই।

ব্যক্তিগত গন্ডিতেও শুধু এমপ্যাথির অভাবে একটা মানুষ কতটা ব্যাকফুটে চলে যায়, কতটা চুপসে যায় এটা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। এমন একটা সোসাইটি আমরা বিল্ড করছি, যেখানে ইমোশন দেখানো দূর্বলতা কিংবা সাম কাইন্ড অফ আনস্মার্টনেস। নিজের কুলনেস জোর করে ধরে রাখতে হলেও ফেইক একটা মানুষ হয়ে সবার সামনে আসতে হবে। খারাপ লাগাটা প্রকাশ করা যাবে না। শুনতে হবে, সেন্টিখোর জাতীয় খোঁচা।

মৃত মায়ের সাথে ছবি কোলাজ করে শেষ পোষ্ট করেছিলেন ইন্সটাগ্রামে



আরো অবাক লাগে যখন মানসিক অস্থিরতাকে কেউ বুঝতে চেষ্টা না করে গায়ে পড়ে গৎবাঁধা সমাধান দিয়ে যায়। প্রায়ই দেখি কোথাও কেউ মনের অবস্থা জানিয়ে কি করা উচিত জিজ্ঞেস করে সাহায্য চাইলে কিছু মানুষ এসে বলে, নামাজ পড়ুন ঠিক হয়ে যাবে। কোরান পড়ুন ঠিক হয়ে যাবে। কেউ এসে শান্তনা দেয় এভাবে, অন্তত মা বাবার কথা ভাবুন। কেউ বলে আরো ভয়ংকর কথা। বলে, দেখো তোমার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে কত মানুষ, তাদের দিকে তাকাও।

আমি মনে মনে হাসি। মানুষের মন এভাবে কাজ করে না। হয়ত যারা ওভাবে সাজেশন দেয় ভালর জন্যেই দেয়, কিন্তু ওগুলো একদমই প্রি জাজমেন্টাল সলুশন। দোষ দিচ্ছি না নির্দিষ্ট কারুর, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাপারটা এখনো প্রায় ট্যাবুর মতো অনালোচ্য ব্যাপার, সেখানে এর চেয়ে বেশি আশা করা মুশকিল। হয়ত উন্নত হবে পরিস্থিতি। সময় লাগবে।

এমন দিন আসুক, যখন আত্মহত্যার খবরে জান্নাত জাহান্নামের হিসাবের বাইরে গিয়েও মানুষ একটু ভিন্ন ভাবনা ভাববে। সে মরে গিয়ে ভুল করেছে এভাবে না ভেবে কোন কোন ভুল আচরণ তাকে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে সেই উল্টো সাইডটাও লোকে দেখবে।

একেকটা আত্মহত্যার খবর খুব নিরবে একটা মেসেজও দিয়ে যায়, এমপ্যাথির প্র‍্যাকটিস করো মানুষ। আমরা বরাবরই এই মেসেজটাকে ইগনোর করে যাই। কারণ তা না হলে আমাদের ভুলের মাশুলগুলোকে ঠিকঠাক ঢাকা যায় না...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা