মহিলাটির ভাষ্যমতে উনার হাবি আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছে তাই প্রায়ই তাকে মারধর করতো। আর আজ তার পেটে লাথি দিয়েছে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য!
মাকসুদুল হাসান হৃদয়: দরজা ভেঙ্গে দেখতে পেলাম টাইলসে থকথকা কিছু তাজা রক্ত আর জুতার বক্সের পাশে সন্তানসম্ভবা মহিলাটি ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তার হাবি সজোরে তার পেটে লাথি দেয় আর সাথে সাথেই তার ব্যাথা শুরু হয়।
পরপর দুইরাত না ঘুমিয়ে ডিউটি করার পরে এটা ছিলো আমার তৃতীয় রাত। এডিসি স্যার এর নাইট রাউন্ড শেষে মাত্রই একটু চোখ টা লেগে এসেছে আর সাথে ছিলো তীব্র মাথা ব্যাথা। ততক্ষণে ডিউটি অফিসার ৯৯৯ কন্ট্রোল কে আমার নাম্বার দিয়ে দিয়েছে৷ ৯৯৯ এর ফোন থেকে জানতে পারি শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারে রক্তাক্ত অবস্থায় এক মহিলা পরে আছেন।
তৎক্ষনাৎ কিউ আর টি গাড়ি নিয়ে ওখানে যাই। অনেক বার দরজা নক করার পরেও খুলতে পারে নি অথচ ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। অতঃপর দরজা খুলে এরকম রক্তাক্ত অবস্থায় উনাকে দেখতে পাই। আর সাথে সাথেই উনার হাজবেন্ড এসে আমার কাছে কম্পলেইন করতে থাকে মহিলা খারাপ ব্লা ব্লা ব্লা। অথচ তাকে হস্পিটালে নেবার কথা ছিলো৷ সাথে সাথেই ৯৯৯ এ এম্বুলেন্স এর জন্য ফোন দেই। উনারা এম্বুলেন্স সার্ভিস কে আমার নাম্বার দিলে জানতে পারি বাড্ডার ড্রাইভার ঘুমায়।তেজগাঁও থেকে আরেকটা আসছে। ভয় হচ্ছিলো রক্তক্ষরণ দেখে। যাক আমাদের গাড়ি ই ভরসা।
পাশে আরো ৪ টা ফ্ল্যাট ছিলো। ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য সবাইকে ডেকেছি।জানেন সবাই দরজা খুলেছে কিন্তু কাউকেই হেল্প করবে একটু জাস্ট ধরবে সে জন্য ডেকে পাই নি। কেউ অসুস্থ, কারো অফিস সকালে, কেউ একা বাসায়। হাজার বাহানা। ইভেন তার হাজবেন্ড ও চেঞ্জ করবে না। অতঃপর সজোরে কয়েকটা থাপ্পড় দেবার পরে উনি চেঞ্জ করা শুরু করে।
ভোর ৪:৩০ এর দিকে এই ঘটনা ঘটে। মহিলাটির ভাষ্যমতে উনার হাবি আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়েছে তাই প্রায়ই তাকে মারধর করতো। আর আজ তার পেটে লাথি দিয়েছে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য!
বাড্ডা জেনারেলে নিয়ে গেলে উনারা জানায় এখানে সম্ভব নয়। মা ও শিশুতে নিয়ে গেলাম উনারাও ফিরিয়ে দিলো। অতঃপর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে উনাকে ব্লাড দিয়ে অক্সিজেন দিয়ে কিভাবে কিভাবে সুস্থ করে তুলল। আজ ফোনে জানতে পারলাম উনাকে ডিসচার্জ দিয়েছে। বেশ সুস্থ আছেন। জিজ্ঞাসা করলাম মামলা করবেন না। উনার উত্তর টা চমৎকার ছিলো। 'আমারই তো স্বামী। আপনাদের কি? আমি মামলা করবো না। ওকে আমি ঠিক করে ফেলবো।'
যাবার পথে আকিক পরিবহন রাস্তা আটকে যাত্রী তুলছিলো। তাই ভিক্টিম নিয়ে হসপিটালে যাবার পথে সামনে সারা রাস্তা ফাকা পরে থাকলেও শুধু ঐ গাড়ি টাই জ্যাম করে রেখেছিলো। তাই গাড়ি থেকে নেমে ৬ টা গাড়ী পার হয়ে দৌড়ে ওকে প্রচুর মারলাম। পেপার্স ও নিয়ে আসলাম৷ যাত্রীগুলা কত যে অভিশাপ দিলো আমাকে। টাকা খাওয়ার ধান্দায় পেপার্স নিয়ে গেছি। পরদিন সকালে দিয়ে দিছি যদিও। তবে আরো কিছু মাইর দিছি। ও আর জীবনেও রাস্তা আটকাবে না।
সবার কাছে ভালো হওয়া আসলে কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর হতেও চাই না। নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকাটাই পরম আনন্দ মনে হয়।
যাই হোক৷ বাংলাদেশ পুলিশে ভরসা রাখতেই পারেন। বিপদে আপন ভাই কে পাশে না পেলেও ৯৯৯ -এ একটা ফোন দিয়েন শুধু। আমার মত হাজার হৃদয় রাত জেগে বসে আছে শুধু আপনার দরজায় খুব অল্প সময়ে পৌছুবার অপেক্ষায়।
সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা!
লেখক- মাকসুদুল হাসান হৃদয়, সাব ইন্সপেক্টর, বাংলাদেশ পুলিশ