
চলুন আজ একটা ছবি আঁকি। কীসের ছবি আঁকা যায়? সুখী একটা ছবি! হু...প্রথমে কোন রঙ দেয়া যায়? নীল? নীল কেন? বেদনার রঙ বলে? তাহলে সুখী ছবি হবে কীভাবে? এ তো বড় মুসিবত! সুখী ছবি আঁকতে গিয়ে কেন বেদনার রঙে রাঙবো? কারণ আমাদের সুখগুলো বেদনাতেই মোড়ানো থাকে। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না, আবার আমাদের সিদ্ধান্তও।
একজন মানুষের গড় আয়ু কত? ৬০ বছর ধরলাম। এই ৬০ বছরে কী কী করি আমরা? যা যা করি তার কয়টি নিজেদের ইচ্ছায় করি? আর কয়টি অন্যদের ইচ্ছায় অথবা তাদের ইচ্ছায় প্রভাবিত হয়ে করি? রেশিও যদি আদতেই কেউ বের করতে পারে, তাহলে তাজ্জব বনে যেতে হবে। নিজেদের জীবনের শতকরা ৫ ভাগ কাজও হয়তো আমরা নিজেদের ইচ্ছায় করতে পারি না, অন্যভাবে বলা যায় করতে দেয়া হয় না। এমনকি আমাদের অক্সিজেন নেয়া ও কার্বন অক্সাইড ছাড়াটাও আমাদের অজান্তেই হয়ে যায়। জীবনের শুরু থেকেই অন্যদের নেয়া সিদ্ধান্তে শেইপ হতে থাকে আমাদের জীবন।
এটা ওর হাতে দিও না, ওদের সাথে মিশো না, ওই স্কুলে যেতে হবে না, ওই সাবজেক্টে পড়তে হবে না, ওই স্যারের কাছে পড়তে হবে, ওই কোচিং এ যেতে হবে, বাইরে খেলা যাবে না, টিভি দেখা যাবে না, আইসক্রিম খাওয়া যাবে না, আউট বই পড়া লাগবেনা, ওই মেয়ের/ছেলের সাথে কী কথা এত, ওই কলেজে পড়তে এত গড়িমসি কেন, জিপিএ পাঁচ পাওনি এবার নিজেই ভুগো তবে, ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার না হলে পেছনে পড়ে রবে,
এই দেখো ছেলে বিদেশে থাকে, এই দেখো মেয়ের বয়স কম,
একেই বিয়ে করতে হবে, কিছু বললে নেই লাজশরম,
বাচ্চা নাও না কেন এখনো সময় তো হল মেলা,
একটা সঞ্চয় করো এখনই, নইলে সামনে পড়ন্ত বেলা,
বুড়ো হয়েছ বোঝো কি তুমি, আমরা যা বলি তাই সই,
শেষ নিঃশ্বাসের আগে ভাবি আমার জীবন আমার কই?
অন্যদের নামে করে দেয়া জীবন নিয়ে একটা সিনেমা বের হয়েছিল ৪ বছর আগে। কারও সহ্যই হল না। ভেদ আর তারার কথা মাথাতেই ঢুকলো না। ভেদের এলাকায় থাকা সেই গল্পকারটাই কে? এতো অদ্ভুত কথা কেন বলে সে? কল্পনায় কী না কী দেখায়, পাগলের কথা আর মানে কে? সবকিছু ছেড়েছুড়ে ভেদ যায় করসিকায়, তারার সাথে দেখা হয় সেখানে। দুজনের নাম দুজন জানে না, জানে না কে কোথায় থাকে। চুক্তি হয় করসিকায় যা হবে, তা করসিকাতেই রয়ে যাবে। কিন্তু আবেগের বাঁধ মানে না বাঁধা। দুজন দুজনের ভালোবাসায় মত্ত কিন্তু ফিরে যেতে হবে যে আবার গৎবাঁধা জীবনে।
আবার দেখা হয় বাস্তব দুনিয়ায় তাদের, এ যেন অন্য মানুষ, রোবট নাকি? তারার বিশ্বাস হয় না, ভেদ একটা ভাঙা মন আর ভাঙা জীবন নিয়ে রোবটিক তার জুড়ে দেয় তাতে। তারাও কিছু ভিন্ন নয়, তবুও সে ভেঙ্গে পড়ে। জীবনের কাছে হার মেনে নেয়, ভালোবাসার কাছেও। তারা কাঁদে, ভেদ হাসে।
ভেদের জীবন যে তার ছিল না কখনো। সে পারছে না তাই সকল বাঁধা ভাঙতে। সামনের টুলে জীবনকে বসিয়ে চোখে চোখ রেখে বলতে পারছে না- আজ থেকে তুই আমার কথামতো চলবি। আমি যাকে ভালবাসবো, তাকে ভালোবাসবি। আমি যাকে বিয়ে করতে চাইবো, তাকে বিয়ে করবি। আমার যে জব করতে ইচ্ছা করবে, সেই জব করবি। আমার যেখানে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হবে, সেখানে ঘুরতে যাবি। কারও কথা শুনবি না, কেবল আমার কথা শুনবি। আমি মুখে যদি বলিও কিছু ভিন্ন, তবুও আমার মনের কথা শুনবি। কিন্তু তাই বলে ভেদ হার মেনে নেয় না, সে একদিন ঠিকই পারে। সিদ্ধান্ত নেয় যে তার জীবন কেবল তারই হবে। তার গল্পের গল্পকার হবে সে নিজেই।
তামাশা নামটার একটা অর্থ সারকাজম হতে পারে, একটা অর্থ নাটক হতে পারে। জীবন তামাশা করে মানুষের সাথে। জীবন নাটকে মানুষের নিজের সত্তা থাকে পার্শ্বচরিত্রে, মূল চরিত্রে অন্যের ইচ্ছা। পুরো নাটক চালিয়ে যাই আমরা সারাটি ক্ষণ, বিনিময়ে অতৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই পাবার থাকে না। সে অতৃপ্তি আর অপূর্ণতা নিয়েই একটা তামাশা করেছিলেন ইমতিয়াজ আলী তার 'তামাশা' সিনেমায়। যে সিনেমা দ্বিতীয়বার দেখার সাহস হয়নি আর আমার।