মাঝে মাঝে কল্পনা করতে ভালো লাগে। ভালো লাগে ভাবতে তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর বেঁচে আছেন আজও...

লস এঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে চিন্তিত মুখে বসে আছেন মিশুক মুনীর। আড়চোখে দেখে নিচ্ছেন রজার ডিকিন্সকে, মিশুকের দিকে চোখ পড়তেই রজারের মৃদু সম্ভাষণ; লিপ রিড করে মিশুক বুঝতে পারলেন রজার বলছেন- দারুণ কাজ করেছ, টেনশন করো না। মিশুক সৌম্য একটা হাসি দিয়ে বুঝি কপালের ভাঁজ লুকালেন। পাশে তারেকের হাসিখুশি মুখ দেখে বোঝারই উপায় নেই যে একটু পরেই বেস্ট পিকচারের অস্কার ঘোষণা করা হবে। বোঝা গেল যে তারেকের সেটা নিয়ে কোন চিন্তাই নেই। তারেকের হাত শক্ত করে ধরে থাকা ক্যাথরিনের চেহারায় অবশ্য চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।

এবারের অস্কারের হোস্ট হিউজ্যাকম্যান বেস্ট পিকচার অস্কার ঘোষণা করবার জন্য মঞ্চে ডাকলেন স্টিভেন স্পিলবার্গকে। মঞ্চে উঠে আসলেন স্পিলবার্গ, একে একে নমিনেশন ভিডিওতে আসতে লাগলো ক্লিন্ট ইস্টউড, দেল তরো, ইনারিতুর সিনেমার নামগুলো। সবার শেষে তারেক মাসুদের সিনেমা "The Unfinished War" এর অংশবিশেষ দেখাতেই সিনেমার কলাকুশলীরা চিৎকার করে উঠলো। তারেকের অবশ্য তখনো বিকার নেই। স্পিলবার্গ এনভেলপ খুলতেই তারেক একটু ঘাবড়ে গেলেন যদিও। এবার ইনারিতুই হয়তো পেয়ে যাবেন বলে আগেভাগেই তাগাদা দিলেন নিজেকে। স্পিলবার্গ আমেরিকান একসেন্টে কী বললেন প্রথমে বোঝা গেল না! মিশুকের ঝাঁকুনি খেয়ে তারেক বুঝতে পারলেন কী বলেছেন তিনি। এন্ড দ্য অস্কার গোজ টু- The Unfinished War...

সিনেমার কলাকুশলীরা আগেভাগেই দৌড় লাগালেন। মিশুক কোথা থেকে যেন একটা বাংলাদেশের পতাকা যোগাড় করে আনলেন। তারেক আর মিশুক সেটা জড়িয়ে মঞ্চের দিকে রওয়ানা হলেন। স্পিলবার্গের হাত থেকে অস্কার দেবী হস্তগত হতেই পুরো থিয়েটারজুড়ে করতালি আর চিৎকার। ক্যাথরিনের চোখে আনন্দ অশ্রু, অশ্রু সদ্য ভোর হতে দেখা দেশে থাকা প্রতিটি বাঙালির চোখেও। তারেক মাসুদ মাইকের সামনে গিয়ে বাংলায় তার সিনেমার একটা ডায়ালগই বলতে পারলেন কেবল- আমরা পুনর্জন্ম নিয়েছি বিজয় ছিনিয়ে আনবার জন্যেই।

মাঝে মাঝে কল্পনা করতে ভালো লাগে। ভালো লাগে ভাবতে তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর বেঁচে আছেন আজও। এরই মাঝে তাদের একটা সিনেমা মুক্তি পেয়ে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে, অস্কারে ফরেইন ক্যাটাগরিতে প্রাইমারি নমিনেশনও পেয়েছে। তবে সবার আশা পরের সিনেমাটা নিয়েই, আশা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারেক মাসুদের এই সিনেমাটি অস্কার ঘরে তুলবেই। অবাস্তব হতো না এসব কিছুই, যদি আজ তারা দুইজন থাকতো। পত্রিকায় লেখা হয়েছিল সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরের মৃত্যু। লেখা হয় নি-বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সমৃদ্ধ মস্তিষ্কের, চিত্রগ্রহণে নতুনের আবাহনের আর কোটি কোটি বাঙালির চলচ্চিত্রস্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা