হয়তো বিশ্বরেকর্ড করতে পারেননি, তবে বিশ বলে ত্রিশ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন আপনি। হয়তো আপনাকে খুব একটা মনেও পড়বে না, তবে ঐ তৃপ্তি দেয়া পারফর্মেন্সগুলোর প্রতি মুগ্ধতা কখনো বিন্দুমাত্র কমবে না।

নামের শেষে রাজপুত থাকলে, সেই নাউন তখন অ্যাডজেক্টিভ পার হয়ে এমনিতেই অ্যাডভার্ব হয়ে যায়। যে মানুষটা নিজের সাথে করে এমন পার্ট অফ স্পিচ নিয়েই ঘুরেছেন, তাকে নিয়ে স্পিচ লিখতে হচ্ছে। না, নিয়তির নির্মম পরিহাসের ওপর দোষ চাপিয়ে কোনো দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। সেসব সিনেমা দেখে প্রচন্ড তৃপ্ত হয়েছি, তন্মোধ্যে আপনার অভিনীত সিনেমাও ছিলো। সেই দায় মেটানোর জন্য হলেও এই অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করছি।

আমার দেখার দরকার নেই আপনি কোন দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ থেকে এসেছেন। যেটুকু জানা দরকার, সেটা হচ্ছে- জীবনের কোনো এক বিষন্ন সময়ে আপনি আপনার মেধা ও প্রাণশক্তি দিয়ে অবসাদ দূর করেছিলেন আমার। ব্যাস, আমি কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি। আপনি কেন এভাবে চলে গেলেন, কী এমন হয়েছিলো, কী হতে পারতো, সেই পোস্টমর্টেম করবার অধিকার আমার নেই। আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইছি মাত্র।

কাই পো চে, সোনচিড়িয়া ও ছিচোড়ে সিনেমায় সুশান্ত 

আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম কিভাবে একটা নবাগত ছেলে এতোটা সুন্দর করে তার অভিনীত চরিত্রের সাথে মিশে যেতে পারে। কাই পো চে-তে রাজ কুমার রাও ছিলো, অথচ নজর কেড়েছিলেন আপনি। ধোনির বায়োপিক দেখেই বুঝেছিলাম, আপনার ভেতর মেথড অ্যাক্টিং এর দুর্দান্ত কিড়া আছে। যেটা এই উপমহাদেশে বিরল। বলিউডের মতো ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে গ্ল্যামারে গা ভাসাতে হবেই। ঐ মশলাটাও কীভাবে মাখাতে হয় সেটাও আত্মস্থ করেছিলেন।

সোনচিড়িয়াতে মনোজ বাজপেয়ী, রনভীর শোরে, আশুতোষ রানার মতো ডাকসাইটে অভিনেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করেছেন। আপনি যে মেধাবী সেটা প্রমাণ করবার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। ঢোল পিটিয়ে জানানোর দরকার নেই যে পুরো ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় সপ্তম হয়েছিলেন আপনি। ফিজিক্সের ন্যাশনাল অলিম্পিয়াড জিতেছিলেন। স্ট্যানফোর্ডে ডাক পেয়েছিলেন, সেসব ছেড়ে কেন এসেছিলেন, সেটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানবে না।

দ্য আনটোল্ড স্টোরি... 

আমি শুধু এইটুকুন জানি, হয়তো বিশ্বরেকর্ড করতে পারেননি, তবে বিশ বলে ত্রিশ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন আপনি। হয়তো আপনাকে খুব একটা মনেও পড়বে না, তবে ঐ তৃপ্তি দেয়া পারফর্মেন্সগুলোর প্রতি মুগ্ধতা কখনো বিন্দুমাত্র কমবে না।

আপনাকে দেখার শেষ ইচ্ছে নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আপনার মা। লেখাপড়ার জন্য ভিন্ন শহরে থাকায় সেটাও পূরণ করতে পারেননি। আজীবন বয়ে বেড়িয়েছেন সেই কিশোর বয়সের ট্রমা। তাইতো মায়ের কাছে যাবেন বলে বিনা হুইসেলে আগেভাগেই উঠে পড়লেন ট্রেনে। সেই ট্রেনের সামনে লাল কাপড় উঁচিয়ে দেখাবার সাধ্য কার আছে বলুন।

শেষ ছবি পোষ্ট করেছিলেন মায়ের সাথে কোলাজ করে 

ছিঁচোড়ে সিনেমায় বাঁচতে শিখিয়েছিলেন। তাই দর্শকেরা আপনার এই জীবন ছেড়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। অনেকের অভিযোগ, পিকে সিনেমার সরফরাজ তাদের ধোঁকা দিয়েছে। আমি বলি কী, না ভাই। সরফরাজ ধোঁকা দেয়নি। সরফরাজেরা ধোঁকা দিতে জানে না। যে ধোঁকা দেয়, সে অন্যের জীবন ধ্বংস করে, নিজের না।

আরও পড়ুন- 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা