এই ১০টি টিপস আপনার সিভিকে করে তুলবে আরও পেশাদার
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অনেকেই এখনো নিজেদের সিভি টাও ঠিকঠাকমতো গুছিয়ে লিখতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে, তাদের সিভি তে কোনমতে চোখ বুলিয়েই অনেক চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান সেটাকে সোজা ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
আমাদের মধ্যে দেশে যারা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন, তারা ভালো ফলাফল করলেও পেশাগত ক্ষেত্রে এটি একটি হতাশাজনক সত্য যে, তাদের অনেকেই এখনো নিজেদের সিভি টাও ঠিকঠাকমতো গুছিয়ে লিখতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে, তাদের সিভি তে কোনমতে চোখ বুলিয়েই অনেক চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান সেটাকে সোজা ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
এই কারণে আজ আমরা এগিয়ে চলোর ক্যারিয়ার পাতায় জীবন বৃত্তান্ত বা কারিকুলাম ভিটা (সিভি) লেখার খুব সাধারন অথচ খুবই কার্যকর কয়েকটি টিপস নিয়ে আলোচনা করবো, যা একটি সিভিকে করবে আরও গ্রহণযোগ্য ও পেশাদার।
১) দৈর্ঘ্য:
আপনি যদি ফ্রেশার হন, তবে সর্বোচ্চ ২ পাতা হতে হবে আপনার সিভি (কভার লেটার বাদে)। আর যদি অভিজ্ঞ হন, সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ পাতা হতে পারে। সিভি বেশী বড় হলে চাকরীদাতার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। আরেকটা কথা, সিভি আর রেজ্যুমির ভেতর মূল ফারাক হলো, রেজ্যুমি এক পাতার হয়। আর সিভি হয় একাধিক পাতা।
২) ফরম্যাটিং:
পুরো সিভিতে একই ঘরানার ফরম্যাটিং ব্যবহার করুন। এমএস ওয়ার্ডে আপনার সিভিকে ফরম্যাট করার হাজারটা অপশন পাবেন, তার মানে এই না যে সবগুলোকে সিভিতে ব্যবহার করতে হবে। পুরো সিভিতে একই ফন্ট ব্যবহার করুন। আন্ডারলাইন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। দুইটির বেশী ফন্ট এবং ফন্ট সাইজ ব্যবহার না করতে চেষ্টা করুন।
৩) কোম্পানির লোগো বসান:
Work Experiences অংশে অতীতে যে সকল কোম্পানিগুলোতে আপনি কাজ করেছেন, তাদের নামের পাশে তাদের লোগোও রাখুন। এটি আপনার সিভিকে আরো বেশী প্রফেশনাল লুক দেবে। সম্ভব হলে আইকন, সাইন এসব প্লেইন টেক্সটের বদলে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার সিভি হবে অন্যদের চাইতে আলাদা এবং আর্কষণীয়। যদি সম্ভব হয়, লোগো আপনার সিভিতে ব্যবহারের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এইচআর থেকে অনুমতি নিয়ে নিন।
৪) উপস্থাপন:
ফ্রেশারদের সিভির প্রথম পাতাতেই থাকবে শিক্ষাগত যোগ্যতা। আর অভিজ্ঞদের সিভির শুরুতেই থাকবে পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা। সিভি সব সময় পিডিএফ ফরম্যাটে জমা দিবেন। যদি প্রজ্ঞাপনে আলাদা করে নির্দেশ দেয়া না থাকে তবে কখনই সিভিকে এমএস ওয়ার্ড ফরম্যাটে উপস্থাপন করবেন না।
৫) জেলার নাম উহ্য রাখুন:
নিজ জেলার নাম এড়িয়ে যান। সিভিতে জেলার নাম উল্লেখ করাটা অপ্রয়োজনীয়, বরং উল্লেখ করলে বিড়ম্বনায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের অনেকেই অনেক জেলার লোকজনকে ভালো চোখে দেখেন না, যদিও এটা একটা অপচর্চা।
আপনি হয়তো কখনই জানবেন না যে, আপনার ”হোম ডিসস্ট্রিক্ট” এর নাম জেনে চাকরীদাতা খুশী হয়েছেন নাকি আপনার প্রতি বিরাগভাজন হয়েছেন। সুতরাং, এই ধরনের রিস্ক নিবেন না। এই তথ্য চাকরীর ক্ষেত্রে একান্তই যদি দরকার হয়, তবে আপনাকে তা ইন্টারভিউতে জানতে চাওয়া হবে, আপনি তখন সেটা বলবেন।
৬) তথ্য সুবিন্যস্ত রাখুন:
সময়ের ক্রমানুসারে তথ্য দিবেন, মানে সবচাইতে সাম্প্রতিকটা আগে এবং পুরনোটা পরে। তাছাড়া, অনেকেই এচিভমেন্টও অভিজ্ঞতা অংশে উল্লেখ করেন। যেমনঃ Successful Product Launch in 2017 কিংবা Best Employee Award 2017– এইসব আপনার এচিভমেন্ট অংশে লিখবেন, অভিজ্ঞতা নয়। লিংকডইনে প্রোফাইল হালনাগাদ করে তার লিংক সিভিতে দিয়ে রাখুন।
৭) স্কিল যুক্ত করুন:
এই অংশে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ওয়ার্ডপ্রেসসহ জীবনে যত টেকনিক্যাল জিনিসপাতি শিখেছেন/জানেন, সব লিখবেন। তবে এখানে একটা জিনিস বেশীরভাগ প্রার্থীই উল্লেখ করতে ভুলে যায়, সেটা হলো আপনার টাইপিং স্পিড। এই তথ্যটা বাংলাদেশের বেশীরভাগ সিভিতেই দেখা যায় না। বেশীরভাগ সময়েই এই তথ্যটা দরকার হয় নিয়োগকর্তার। কারণ মার্কেটিং, মানবসম্পদ, বিক্রয় ও বিপনন, হিসাব রক্ষণ কিংবা ফাইনান্সিয়াল এনালিষ্ট – যে কোন পদেই এই তথ্য দরকার।
৮) শিক্ষাগত যোগ্যতা:
জীবনে যত ধরনের একাডেমিক ও নন-একাডেমিক সার্টিফিকেট পেয়েছেন বা ট্রেইনিং করেছেন, এই অংশে তার সব লিখবেন। চাকুরীর সাথে যতই অপ্রয়োজনীয় মনে হোক না কেন, কোন ধরনের যোগ্যতা প্রমান করে এমন যে কোন সনদ বা প্রশিক্ষণই সিভিতে উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে সরাসরি প্রাসঙ্গিক মনে না হলে তালিকার সবার শেষে উল্লেখ করা যায়।
৯) বাহুল্য তথ্য না দিয়ে দরকারী তথ্য দিন:
বাসার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, বাবা-মায়ের নাম, ধর্ম, জাতীয়তা, লিংগ, আকাঙ্খিত বেতন – এইসব সিভিতে উল্লেখ করার কোন দরকার নেই। বিশ্বাস করুন, সিংহভাগ চাকুরীদাতার কাছেই এইসব বাহুল্য তথ্য। ধর্ম, জাতীয়তা এবং লিঙ্গ বেশীরভাগ সময়েই প্রার্থীর নাম ও ছবি দেখেই অনুমান করা যায়। সুতরাং, এসব উল্লেখ করা অদরকারী। বরং আপনার ইন্টার পারসোনাল স্কিল কেমন, কমিউনিকেশন স্কিল কেমন, সফট স্কিলে কতটা দক্ষ– এই জাতীয় তথ্যগুলো অনেক বেশী জরুরী।
১০) বিডিজবস ডট কম এর সিভির ধরন পরিহার করুন:
দয়া করে বিডিজবস ডট কমের সিভি ফরম্যাট ব্যবহার করবেন না। আমরা অনেক চাকুরীদাতাকে চিনি, তারা বিডি জবসের একঘেয়ে সিভি ফরম্যাট দেখতে দেখতে এতটাই বিরক্ত হয়ে গেছে যে এই ফরম্যাটের কোন সিভিই তারা আর মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন না। তাছাড়া, বিডিজবসের সিভিতে প্রচুর পরিমানে অদরকারী তথ্য থাকে, যা পাঠকের জন্য বিরক্তিকর। লিংকডইন ডট কম যে অটোমেটেড সিভি জেনারট করে, সেটাও বিডিজবসের চাইতে অনেক দৃষ্টিনন্দন। অনলাইনে ফ্রি তে অনেক স্বাতন্ত্র আর চমৎকার সব সিভি ফরম্যাট পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করবেন। এমনকি MS Office এও অনেক ফ্রি টেম্পলেট পাওয়া যায়। এতে করে আপনি নিজেকে অন্যদের চাইতে আলাদা করে নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
১১) (বোনাস টিপস) চাকুরীর ধরন অনুসারে সিভি এডিট করুন:
সিভিকে কখনো পাইকারী হারে সব জাগায় ফরওয়ার্ড করতে যাবেন না। এটা চরম অপেশাদারিত্ব ও উদাসীনতার পরিচায়ক। চাকুরীদাতা কি চেয়েছেন, সিভি জমা দেবার আগে সে অনুযায়ী সিভিকে আপডেট দিতে হবে, ভুলেও কখনো এক সিভি দিয়ে সব ধরনের চাকুরীর জন্য আবেদন করবেন না। ই-মেইলে আবেদন করলে মেইলের বডিতেও কভার লেটার লিখতে পারেন, আবার আলাদা করে এটাচও করে দিতে পারেন সিভির সাথে। তবে উত্তম হলো, মেইলে কাভার লেটারের সারাংশ লিখে বিস্তারিত তথ্য কাভার লেটার হিসেবে সিভির সাথে আলাদা পাতা হিসেবে যুক্ত করা।
এছাড়াও কিছু সাধারন নিয়ম, যেমন- কমপক্ষে দুটি রেফারেন্স দেয়া, শখ ও আগ্রহতে গড়পড়তা বিষয়গুলো পরিহার করা, বানান ও ব্যকরণের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা, এসব কথা যেহেতু সবাই জানেন, সেহেতু নতুন করে আর এসব নিয়ে কথা বাড়ালাম না। ক্যারিয়ার বা পড়াশোনায় কোন ছেদ পড়লে সেটা সিভিতে উল্লেখ করে নিজের সততার পরিচয় দিতে ভুলবেন না।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন