বিগত তিন দশকের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় অভিনেতা টম হ্যাংকস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ৯ জুলাই। করোনাজয়ী এই অভিনেতার অনেক সিনেমাই আমরা দেখেছি, মুগ্ধ হয়েছি তার অভিনয়ে। ফরেস্ট গাম্প, ক্যাপ্টেন ফিলিপস, কাস্ট এওয়ে, সেভিং প্রাইভেট রায়ানসহ সর্বকালের সেরা কিছু সিনেমা দিয়ে টম হ্যাংকস আমাদের সিনেমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তি টম হ্যাংকস সম্পর্কে কতোটুকুই বা জানি আমরা। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক টম হ্যাংকসের ৭টি অজানা তথ্য, প্রতিটি তথ্যই আপনাকে চমকাতে বাধ্য করবে।

টম হ্যাংকস যখন বাদামওয়ালা

হ্যাঁ, হলিউডের অন্যতম হাইয়েস্ট পেইড এই এক্টর কিশোরবেলায় অনেক অড জবসও করেছেন। ওকল্যান্ড এয়ারপোর্টে লাগেজ ক্যারি করা থেকে শুরু উইকেন্ডে ওকল্যান্ড কলাসিয়ামে বেসবল ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের কাছে পপকর্ন আর বাদামও বিক্রি করেছেন। অভিনয় দক্ষতা ও তারকাখ্যাতির জন্য পাওয়া অঢেল অর্থের মূল্য তাই একসময় অর্থকষ্টে থাকা টম খুব ভালোভাবেই জানেন।

টম হ্যাংকসের রাজকীয় রক্ত

অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের মায়ের নাম ছিল ন্যান্সি হ্যাংকস। নাম শুনেই আন্দাজ করা যাচ্ছে তবুও বলে দেয়াই ভালো যে টম হ্যাংকস নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনের দূরসম্পর্কের আত্মীয়, কাজিন অথবা ইন লজের দিক দিয়ে। শুধু তাই না টম হ্যাংকসের অভিজাত রক্ত হলিউডের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতাও শেয়ার করেন। জর্জ ক্লুনিও টম হ্যাংকসের দূরসম্পর্কের কাজিন হন। তাহলে বুঝুন!

টাইপিস্ট টম হ্যাংকস

মানুষের অনেক ধরণেরই তো শখ থাকে। কেউ ডাকটিকেট সংগ্রহ করে, কেউ ট্রাভেলিং পছন্দ করে, কারও লাইব্রেরীতে থাকে শতবছরের পুরনো বই। কিন্তু টম হ্যাংকসের শখটা সবার চেয়ে আলাদা। তার ইচ্ছা টাইপরাইটার সংগ্রহ করার। এই ইচ্ছের শুরুটা হয় তার অভিনয়জীবনের আগেই, ১৯৭৮ সালের দিকে। যখন টমের নিজের একটি টাইপরাইটার অকেজো হয়ে যায় এবং মেকানিক জানায় যে এটি ঠিক করে কী লাভ, বাজে জিনিস। তখন থেকেই টমের শখ টাইপরাইটার সংগ্রহ করার। টাইপরাইটারের ক্যাডিলাক বলা হয় যাকে সে হারমিস ২০০০ও তার সংগ্রহে আছে। এখনো তার কাছে প্রায় ৮০টির বেশি টাইপরাইটার আছে। সে টাইপরাইটার কেবল সাজিয়েই রাখেন না টম, ব্যবহারও করেন নিয়মিত।

টাইপিস্ট টম হ্যাংকস

ও ক্যাপ্টেন মাই ক্যাপ্টেন!

টম হ্যাংকস তার অভিনয় জীবনের ৫টি সিনেমায় ক্যাপ্টেন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সবার তো মনে আছে ফরেস্ট গাম্পের আর্মি ক্যাপ্টেনের কথা। এরপর সেভিং প্রাইভেট রায়ানেও আর্মি ক্যাপ্টেন ছিলেন। এপোলো থার্টিনের এস্ট্রোনট জেমস লোভেলও ছিলেন ক্যাপ্টেন। আবার ক্যাপ্টেন ফিলিপ্সে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সালিতে প্লেনের ক্যাপ্টেন ছিলেন। আর আমাদের দেশে আমরা ক্লাস ক্যাপ্টেন হলেই খুশি।

ব্যাক টু ব্যাক অস্কার

একটি অস্কার পেতেই অভিনেতাদের সারাজীবন অপেক্ষা করতে হয়। কতো বড় বড় অভিনেতা, দুর্দান্ত সব অভিনেতা অস্কারের গোল্ডেন লেডিকে হাতে না পাবার আক্ষেপ নিয়েই চলে গেছেন। কিন্তু টম হ্যাংকস তো টম হ্যাংকস। তিনি পরপর দু বছর সেরা অভিনেতার অস্কার বাগিয়ে নিয়েছিলেন ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৩ সালে ফিলাডেলফিয়া ও ১৯৯৪ সালে ফরেস্ট গাম্পের জন্য সেরা অভিনেতার অস্কার জেতেন তিনি। অস্কারের ইতিহাসে এর আগে কেবল স্পেন্সার ট্রেসি এই কীর্তি গড়তে পেরেছিলেন। তাও প্রায় ষাট বছর আগের কথা। টমের এই রেকর্ড সামনে কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনেও হয় না।

ব্যাক টু ব্যাক অস্কার

ওজন কেবল সংখ্যা

অভিনয়ের দিক থেকে টম হ্যাংকস নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন অনেক আগেই। কিন্তু অভিনয়ের সাথে সাথে শারীরিক ট্রান্সফরমেশনেও তিনি কার্পণ্য করেন নি। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন বারবার। ফিলাডেলিফিয়া সিনেমায় এইডস রোগী হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য ১৫ কেজির মতো ওজন কমিয়েছিলেন। এর আগের বছরই লীগ অফ দেয়ার ওউনের জন্য ওজন বাড়িয়েছিলেন ২৫ কেজি। তবে সবচেয়ে বড় ট্রান্সফরমেশনটা করেছিলেন কাস্ট এওয়ের জন্য। এই সিনেমার জন্য টম হ্যাংকস ৩০ কেজির মতো ওজন কমিয়েছিলেন। এই না হলে অভিনেতা!

আকাশেতে লক্ষ তারা, টম হ্যাংকস কিন্তু একটা রে!

টম হ্যাংকস সবসময়ই স্পেসবাফ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল এস্ট্রোনট হবার। পুলের পানিতে জিরো গ্র্যাভিটিতে থাকার অভ্যাসও করতেন তিনি তখন। এখনো স্পেসে যাবার স্বপ্ন তিনি দেখেন। সে স্বপ্নের কিছুটা পূরণ করতে পেরেছিলেন ‘এপোলো ১৩’ সিনেমায় অভিনয় করার সময়। কিন্তু টম হ্যাংকসের স্বপ্ন পূরণ না হলেও নাসা তার হয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করেছিল তার পরের বছরই। ১৯৯৬ সালে নাসা তাদের আবিষ্কৃত একটু গ্রহাণুর নাম দেয় টম হ্যাংকসের নামে। হয়তো কখনো স্পেসে গেলে দেখে আসা যাবে –‘১২৮১৮ টম হ্যাংকস’ নামের গ্রহাণুটিকে।

অনন্য সাধারণ এই অভিনেতা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন আরও অনেক বছর। অসাধারণ সব সিনেমা উপহার দিয়ে আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখুক এটাই কামনা।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা