৮০ বছর আগে, ১৯৪০ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করলেও এখনো শিশুদের পছন্দের কার্টুন তালিকায় শীর্ষেই আছে টম অ্যান্ড জেরি। আজ প্রিয় এই দুই চরিত্রের জন্মদিন।
টম অ্যান্ড জেরি। এই দুটো নাম সবার এত পরিচিত, এতটা আপন যে আলাদা করে পরিচয় না দিলেও চলবে। সেই চল্লিশের দশক থেকে এখন পর্যন্ত ছেলে, বুড়ো, তরুণ, যুবা কিশোর-কিশোরী, দল-মত-বয়স নির্বিশেষে সবাইকে যে দুটো ক্যারেক্টার ক্লান্তিহীনভাবে আনন্দ দিয়ে চলেছে, মন খারাপের মুহূর্তগুলোতে একটু হলেও মলিন মুখে হাসি ফুটিয়েছে, খিলখিল করে হাসতে হাসতে যাদের হুড়োহুড়ি জ্বলজ্বলে চোখে দেখেছি, তারা হচ্ছে এই টম এন্ড জেরি। টম এন্ড জেরি কোনো রক্ত মাংসের মানুষ নয়, দ্বিমাত্রিক এনিমেশনের জগতের দুটি চরিত্র। অথচ আপনি যাকেই এই দুজনের কথা বলবেন, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য হলেও এক লহমায় সে তার শৈশবে ফিরে যাবে, যেতে বাধ্য! আমাদের সবারই ছোটবেলার অকৃত্রিম বন্ধু যে এই দুইজন। দুজনের পোস্ট মর্টেম করা যাক এবার।
টমঃ
টম হচ্ছে একটি বিড়াল। কোনো কোনো সময় দেখা যায় , সে অতি ভদ্র, কারো সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। আবার কোনো কোনো সময় দেখা যায় দুষ্টের একসের। প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছ। সর্বক্ষন জেরি নামক পুঁচকে ইঁদুরটাকে জালিয়ে মারে, কিন্তু বেশি সুবিধা করতে পারে না। প্রায়ই জেরির সাথে পাঙ্গা নিতে টমের হাড্ডি মাংস এক হয়ে যায়!
এই টম আবার যেনতেন বিড়াল নয়, রীতিমত প্লেবয় টাইপের! কাছেপিঠে সুন্দরী বিড়ালি দেখলেই তার রোমিও মনটা অকস্মাৎ তাহার ওপর ক্রাশ খেয়ে যায়। নাওয়া-খাওয়া হারাম করে সেই মেয়ে বিড়ালটির মন পাওয়ার জন্য নানা রকম হাস্যরসাত্নক কান্ডকীর্তি করতে থাকে। যদিও প্রায়ই মাঝখানে বেরসিকের মতো নাক গলায় জেরি! টমের বেশিরভাগ চেষ্টাই নস্যাৎ হয়ে যায় জেরির কারণে।
জেরিঃ
জেরি হচ্ছে পুঁচকে একটা ইঁদুর, অথচ তার কর্মকান্ড দেখলে তাকে পুঁচকে বলার কোনো সুযোগই নেই। প্রায় সময়ই টমকে টিজ করে! জেরির প্রিয় কাজ হচ্ছে- বাসার ফ্রিজ খুলে ধুমধাম খাবার হাপিস করা। প্রিয় খাবার হলো মাখন।
ছোট্ট জেরির কাছে হুলো টাইপের টম প্রায় সময়ই বিভিন্ন ভাবে নাস্তানাবুদ হয়। প্রায় সময়ই জেরির পিচ্চি বাসার সামনে কায়দা করে ইঁদুর মারার কল রেখে দেয় টম, কিন্তু জেরি ছলে বলে যে করেই হোক, সবসময় সেই ইঁদুর মারার কল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়! টমের কোনো বন্ধু তেমন দেখা না গেলেও জেরির দুজন বন্ধু প্রায় সময়ই বিভিন্ন ভাবে দেখা যায়। ছোট্ট হলদে একটা হাঁসের ছানা আর বাসার ছোট জারে রাখা গোল্ডফিশ। দুজনের সাথেই বেশ মহব্বত থাকে জেরির। দুষ্টু টমের প্রায় সময়ই মতলব থাকে হাঁসের বাচ্চা বা গোল্ডফিশটাকে দিয়ে নিজের উদর পূর্তি করা। কিন্তু জেরির জন্য কখনো তার মনের খায়েশ পূর্ণ হয় না। ঠিকই টমের হাত থেকে সবসময় দুজনকে বাঁচিয়ে নেয় জেরি। এমনিতে টম আর জেরির পিছু ধাওয়াধাওয়ি সবসময় চললেও বিপদের সময় দুজনকেই একাত্মা হয়ে বিপদ মোকাবিলা করতে দেখা যায়।
এবার টম এন্ড জেরির পেছনের আদ্যোপান্ত একটু জেনে নেওয়া যাক।
১৯8০ সালে, উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা দুজন কার্টুনিস্ট MGM cartoon studio'তে যোগ দেন। তাদের দুজনের প্রথম প্রজেক্ট থাকে Captain and the Kids নামে একটা এনিমেশন শো। কিন্তু দর্শকমহলে সেটা তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। দুজনেই চিন্তা করতে থাকেন দর্শককে ইউনিক কী দেওয়া যায়!
হঠাৎ করেই বারবারার মনে খেলে যায় টম চরিত্রটির কথা, কালবিলম্ব না করে উইলিয়াম হান্নার সাথে আইডিয়াটা শেয়ার করেন তিনি। উইলিয়াম হান্না বারবারার আইডিয়া শুনে তাৎক্ষনিকভাবে কিছু কমিক স্ট্রিপ তৈরী করে ফেলেন। ব্যাস, এভাবেই শুরু। জোসেফ বারবারার কাজ ছিল মূলত আইডিয়া ক্রিয়েট করা আর উইলিয়াম হান্নার কাজ ছিল সেই আইডিয়াকে রিয়েলিটিতে পরিণত করা। ইঁদুর এবং বিড়ালকে নিয়ে করা এই কার্টুন স্ট্রিপটি দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
পরবর্তীতে MGM cartoon studio এর প্রযোজক ফ্রেড কুইম্বি, হান্না এবং বারবারাকে পরামর্শ দেন টম এন্ড জেরির ক্যারেক্টার দুটো কাগজের পাতা থেকে এনিমেশনের দুনিয়ায় নিয়ে আসার জন্য। ফ্রেড কুইম্বির একান্ত সহযোগিতায় পরবর্তীতে টম এন্ড জেরি কার্টুনটি একটি এনিমেশন সিরিজ হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।
টম এবং জেরির উল্লেখযোগ্য বিবর্তন আসে ষাটের দশকে। MGM cartoon studio টম এন্ড জেরির কপিরাইট বিক্রি করে দেয় ইউরোপিয়ান এনিমেশন স্টুডিও Rembrandt Film এর কাছে। এই স্টুডিওটি টম এবং জেরিকে নিয়ে ১৩ পর্বের একটি কার্টুন সিরিজ তৈরী করে। এই সিরিজগুলোতে টমের আকার আকৃতি একটু বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং জেরির ফাজলামো দুষ্টুমির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯৭৫ এর দিকে উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা আবারো একত্রিত হয়ে টম এন্ড জেরি কার্টুন শোটির কপিরাইট কিনে নেয়। তারপর শুধু এগিয়ে যাবার পালা। আশির দশকে টম এন্ড জেরিকে এনিমেশন সিরিজ থেকে নিয়া আসা হয় মুভির দুনিয়াতে। ২০০৬ সালের দিকে ওয়ার্নার ব্রুস টম এন্ড জেরির কপিরাইট কিনে নেয়। তারপর তারা the tom & jerry tales নামে নতুন সিরিজ শুরু করে। ওয়ার্নার ব্রুস দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার সুবিধার্থে কার্টুনগুলোর ডিউরেশন বাড়িয়ে দেয়।
এনিমেশন সিরিজের পাশাপাশি টম এন্ড জেরির অব্যাহত জনপ্রিয়তার কারণে বেশ কিছু মুভিও বানানো হয়। যেমন, Tom and Jerry: The Movie (1992), Tom and Jerry: The Magic Ring (2002), Tom and Jerry: Blast Off to Mars (2006), Tom and Jerry: The Fast and the Furry (2006), Tom and Jerry Meet Sherlock Holmes (2010), Tom and Jerry and the Wizard of Oz।
আরও অনেকগুলো দিন এই দুজন তাদের ফাজলামি খিচড়ামির মাধ্যমে দর্শককে বিনোদিত করে যাক সেই প্রত্যাশাই করি। শুভ জন্মদিন টম অ্যান্ড জেরি।