ব্রি'র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, পনেরো রকমের ধানের প্রজাতি উদ্ভাবনেও রেখেছেন অবদান। পরিচিত ছিলেন বাংলাদেশের 'ধানকন্যা' নামেও। সেই মানুষটা না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন গতকাল...
উপমহাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে কৃষির এক অমূল্য অবদান বরাবরই ছিলো। আবার এই উপমহাদেশেরই বাঙাল মুলুকের দিকে যদি তাকাই, দেখতে পাবো- কৃষির অজস্র উপকরণের মধ্যেও ধান নিয়ে মাতামাতি একটু বেশিই। 'মাছে ভাতে বাঙালী' ট্যাগ যাদের দেয়া হয়েছে, তারা ধান নিয়ে মাতামাতি করবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে স্থাপিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর কাজকর্মও এ রকমের। ধান নিয়ে গবেষণা করা, ধানের নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করা... এগুলোই মূলত তাদের কাজ। তবে আজকে কথাবার্তা ব্রি নিয়ে না, বরং এই ইন্সটিটিউট এর পরিচালক (গবেষণা) ও প্রখ্যাত ধান বিজ্ঞানী ড. তমাল লতা আদিত্য'কে নিয়ে। যিনি প্রয়াত হয়েছেন গতকাল। কর্ম জীবনের পুরোটা সময় যিনি ধান গবেষণাতেই নিজেকে রেখেছিলেন ব্যস্ত।
ময়মনসিংহের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেয়া এ মানুষটি পড়াশোনা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ প্রজনন এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ব্রি'র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে তিনি পরিচালক (গবেষণা) পদে যোগদান করেন৷ এবং এ পদেই তিনি ছিলেন শেষপর্যন্ত।
ড. তমাল লতা'র সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, তিনি তাঁর প্রশাসনিক জীবনে পনেরোটির মত ধানের জাত উদ্ভাবনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছেন। ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৮...সহ আরো বেশ কিছু প্রজাতির উদ্ভাবক তালিকায় তাঁর নাম থাকবে স্পষ্টভাবেই। বৈচিত্র্যময় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন অজস্র পুরস্কারও। ব্রি'র সেরা বিজ্ঞানী পুরস্কার পেয়েছেন, আন্তর্জাতিক ‘সেনাধিরা ধান গবেষণা পুরস্কার’ পেয়েছেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে 'জয়া আলোকিত নারী ২০২০' সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বেই ব্রি'র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ 'বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার'ও অর্জন করেছে। তাঁর লেখা অজস্র গবেষণাপত্র দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশাসনিকভাবে দক্ষ এই মানুষটি শুধুমাত্র ব্রি'র সাথে যুক্ত ছিলেন, এমন না। ব্রি'র পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, প্লান্ট ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিকস সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ব্রি সাইন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সসহ নানারকম সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ধানের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যে তাকে ডাকা হতো 'ধানকন্যা' নামেও।
এই মানুষটির প্রয়াণে দেশ যে শুধু এক অসাধারণ গবেষককে হারালো তা না। সে সাথে দেশ হারালো এক দক্ষ প্রশাসনিক কর্মীকেও। তাঁর প্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন