টনি শে ও তার কাস্টমার কেয়ার পলিসি: আমাদের যা শেখার আছে
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
একবার এক ভদ্রমহিলা সময়মত প্রোডাক্ট রিটার্ন করতে পারেননি। কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান তাঁর মা মারা গিয়েছেন। কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার ফুল পাঠালো সান্ত্বনা চিঠিসহ। তারপর...
মুহম্মদ ফজলুল করিম: টনি শে কিছুদিন আগে মারা গেলেন। তিনি মোটামুটি বিখ্যাত ছিলেন অবসেসিভ কাস্টমার কেয়ারের জন্যে। তিনি Zappos'এর সিইও ছিলেন। অবসেসিভ কাস্টমার কেয়ারের কিছু নমুনা দেই।
একবার টনি শে সহ কয়েকজন মাঝরাতে খেতে বের হলেন। কিন্তু কোন কোন রেস্টুরেন্ট খোলা আছে জানেন না। তিনি তাঁর বন্ধুকে দিয়ে তাঁরই প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ারে কল দিলেন। কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন কোন রেস্টুরেন্টগুলো এত রাতে খোলা আছে। কাস্টমার কেয়ার অপারেটর প্রথমে ভড়কে গেল। কিন্তু সামলে নিয়ে সে ইন্টারনেটে দেখে জানিয়ে দিল। তাঁরা রেস্টুরেন্টের দিকে রওয়ানা হলেন।
টনি শে বলেছিলেন তাঁদের কাস্টমার কেয়ারের সর্বোচ্চ কলের দৈর্ঘ্য ছিল ছয় ঘণ্টা। একজন ভদ্রমহিলা প্রায় শ খানেক শু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে জাস্ট একটা শু কিনেছিলেন। এটা মূলত হয়েছিল কাস্টমার কেয়ার কালচারের জন্যে। সাধারণ ব্যবসাগুলো কাস্টমার কেয়ারের পেছনে যতটুকু না করলেই চলে, ততটুকুই করে। বেশি করলে মনে করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না।
কম দামে প্রোডাক্ট হাতে পৌঁছে দিলেই বেশি বিক্রি হবে, এই ধারণা ভুল। এরকম হলে ফেরিওয়ালারা দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি করত। থার্ড ওয়ার্ল্ড ম্যানুফ্যাকচারাররাই মার্কেট লিডার হত। আমরা সবাই কস্ট লিডারশিপের স্বপ্ন দেখি। কাস্টমার কেয়ার লিডারশিপের স্বপ্ন ক'জন দেখি। Zappos যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শু বিক্রি করে সেটা কস্ট লিডারশিপ দিয়ে আসে নি। এসেছে এই অবসেসিভ কাস্টমার কেয়ারের জন্যে।
টনি শে সে স্বপ্ন দেখতেন। তিনি কাস্টমার কেয়ারের জন্যে অবিশ্বাস্য অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন। সিলিকন ভ্যালিতে কাস্টমার কেয়ারের মানুষ না পাওয়ার কারণে তিনি লাস ভেগাস শহরে তাঁর অফিস নিয়ে গেলেন। অফিস রিলোকেশনে তাঁদের মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেল। এত জায়গা থাকতে লাস ভেগাস কেন? কারণ, সেটা টুর্যিস্ট এলাকা। টুরিস্ট এলাকার লোক অতিথিপরায়ণ হয়। সো কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার হিসেবে তাঁরা ভাল করবে। অথচ অন্য কম্পিটিটিভ শু কোম্পানিগুলো ইন্ডিয়ান কল সেন্টার দিয়ে কম পয়সায় কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
কাস্টমার কেয়ার অপারেটরদের জন্যে কোন স্ক্রিপ্ট ছিল না। সময় বেঁধে দেয়া ছিল না। যাতে করে একজন কাস্টমারের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারে। তাঁদেরকে আপসেল করতে হত না। জাস্ট কথা বলতে হত একজন কেয়ারিং বন্ধুর মত। অথচ অন্য সব কাস্টমার কেয়ারে ঠিক এগুলোর উল্টো চলে। কিন্তু আজকে এত বছর পরেও তাঁরা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা তাঁদের নাম্বারে এভেলেইভল।
সবাই যখন চ্যাটবট টাইপ হাইটেক সল্যুশন বানাচ্ছে কাস্টমার কেয়ারের জন্যে, টনি শে তখন কল সেন্টারের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছেন। তিনি সবসময়ে কাস্টমার লাইফ টাইম ভ্যালুর হিসাব করতেন। একজন মানুষ কয়টা শু কিনছে এটা ব্যাপার না, ব্যাপার হচ্ছে এই মানুষটা সারাজীবনে কয়টা শু কিনবে।
একবার এক ভদ্রমহিলা সময়মত প্রোডাক্ট রিটার্ন করতে পারেননি। কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান তাঁর মা মারা গিয়েছেন। কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার ফুল পাঠালো সান্ত্বনা চিঠি সহ। টনি শে বলেছিলেন, পুরো কাজটা করতে প্রতিষ্ঠানের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে সেটা উঠে যাবে। কারণ, ভদ্রমহিলা এবার সারাজীবন শু কিনবেন।
আমাদের দেশে কালেভদ্রে কোম্পানিরা যখন এরকম করে, সবাই বলে উঠে মার্কেটিং স্ট্যান্টবাজি। মানুষের সমালোচনার ভয়ে কোম্পানিগুলোও পিছিয়ে যায়। অনেকে আবার লাভ-ক্ষতির হিসাব টেনে আনেন। কিন্তু সত্যি কথা, যারা কম দামে শু দিত, কাস্টমার কেয়ারে অপ্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করত না, তাঁরা কেউই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শু বিক্রি করতে পারেনি।
টনি শে ছিলেন একজন ভিশনারি। তাঁর আনঅর্থোডক্স অনেকগুলো বিজনেস ডিসিশন Zappos কে গড়ে দিয়েছে। অনলাইনে শত শত কোটি টাকার জুতা বিক্রি করা সম্ভব... এটা আমারই সহজে বিশ্বাস হয় না। টনি শে এরকম একটা সহজলভ্য কমোডিটি প্রোডাক্ট নিয়ে এত বড় ব্যবসা ফেঁদে বসবেন... এটা কেউই বিশ্বাস করতে পারার কথা না। তিনি বলতেন আমাদের সাইজের কোম্পানিগুলো কন্ট্যাক্ট নাম্বার ওয়েবসাইটে প্রায় লুকিয়ে রাখে। তিন চার পেজে যাওয়ার পর একটা ইমেইল পাওয়া যায়। অথচ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটেই উপরে প্রত্যেকটা পেইজে লিখে রেখেছি ... Available 24/7 at (800) 927 7671।
বড় বড় কোম্পানিগুলো বলে আমাদের লাখ লাখ কাস্টমার। এরকম চব্বিশ ঘণ্টা কাস্টমার কেয়ার কোনদিন সম্ভব না। ছোট কোম্পানি বলে এত কম কাস্টমার বেইজে এরকম কাস্টমার কেয়ার দিয়ে পোষাবে না। Zappos শুরু থেকে করেছে। আজকে বিশ বছর ধরে করেছে। তাঁদের লাভ এই বছরে প্রায় হাফ বিলিয়ন ডলার। টনি শে প্রমাণ করেছেন, এগুলো শুধুই অজুহাত। বেস্ট কাস্টমার কেয়ার ছোট বড় সব ধরণের কোম্পানি থেকেই দেয়া যায়। আর ছোট থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কালচার না গড়ে তুললে বড়কালেও কোনদিন সম্ভব না।
অনলাইন ব্যবসাগুলো এখন মধ্যসত্ত্বভোগীদের এড়িয়ে কম দামে পণ্য সোর্স করে। তাঁরা কমদামে পণ্য পোঁছে দিতে পারে। এটাই সুযোগ কাস্টমার কেয়ারের পেছনে ইনভেস্ট করার। কমদাম, ক্যাশব্যাক, ভাউচার এগুলোতো সবাই করে। কম দামে না দিয়ে স্বাভাবিক দামে বিক্রি করুক। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে কাস্টমার কেয়ারে বিনিয়োগ করুক।
টনি শে, জেফ বেজোসরা বারবার প্রমাণ করে গিয়েছেন কাস্টমার কেয়ারই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি। কাস্টমার কেয়ারে ইনভেস্ট করাটাই সবচেয়ে লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট।