কট্টরপন্থায় ভরা এই পৃথিবীতে আপনি শ্বাস নেবেন কীভাবে?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমরা যেই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, মোদি বা ট্রাম্প কিন্তু তার উল্টো। তারা এই শক্তি কোথায় পায় জানেন? তারা জানেন কট্টরপন্থী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মুখে যাই বলুন দিনশেষে এরা মোদি বা ট্রাম্পকেই ভোট দেবে...
করোনা থেকে আপনাদের একটু ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাই। বিক্ষোভে উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। কারফিউ ভেঙে চলছে বিক্ষোভ। কিন্তু আমি মনে করি ট্রাম্প বা মোদি যা করেছেন বুঝেশুনে করেছেন। ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ নিশ্চয়ই শান্তিকামী মানুষকে আশার আলো দেখায় কথা কিন্তু মোদি বা ট্রাম্প কিন্তু বোকা নন। নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথটা তারা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছেন বলেই এতো কিছু।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, করোনা শুরুর আগের ভারতের কথা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে চলছিল প্রতিবাদের ঢেউ। একদিকে পুলিশের গুলি আরেকদিকে মুসলিমদের ঘর থেকে টেনে রাস্তায় বের করে এনে পেটানো। বাড়িতে আগুন।
টানা তিনদিন ধরে কট্টর হিন্দুত্ববাদের হিংসা-বিদ্বেষের সেই আগুনে পুড়েছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সারাদেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ চলে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে জনতা। আমার মনে আছে দিল্লি যখন আগুনে জ্বলছিলো ট্রাম্প আর মোদি তখন নৈশভোজে ব্যস্ত। করোনা অবশ্য মোদিকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু করোনার মধ্যেও উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র।
পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ গোটা দেশ। কারফিউ ভেঙে চলছে মিছিল, বিক্ষোভ। কিন্তু তাতে ট্রাম্পের কী যায় আসে?
মোদি যেমন জানেন ভারতে হিন্দু জনগোষ্ঠী বেশি এবং কট্টর হিন্দুরা তাকে ভোট দেবেন একইভাবে ট্রাম্প জানেন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ বেশি। ট্রাম্প বা মোদি কেউই কিন্তু উদারতা দেখাননি। আমরা যেই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি মোদি বা ট্রাম্প কিন্তু তার উল্টো। তারা এই শক্তি কোথায় পায় জানেন? তারা জানেন কট্টরপন্থী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মুখে যাই বলুন দিনশেষে এরা মোদি বা ট্রাম্পকেই ভোট দেবে।
গুজরাট হত্যার নায়ক মোদি যেমন রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে বারবার ট্রাম্প আসলেও আমি অবাক হবো না। আমার ভয় হয়, এই বিক্ষোভের পর শ্বেতাঙ্গরা ট্রাম্পের উপর আরও বেশি আস্থা রাখবেন। কারণ দিনশেষে সংখ্যাগুরুরা এদেরই ভোট দেয়। মনে আছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আমি লিখেছিলাম এই লোক পৃথিবীতে ধ্বংস ডেকে আনবে। হয়েছেও তাই।
না, ক্ষমতায় কে এলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমি শুধু ভাবছি সেই শিশুগুলোর কথা। বড়রা না হয় বুঝতে পারে, সহ্য করতে পারে কিন্তু একবার ভাবুন তো আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর শিশু-কিশোরগুলোর মনের কী অবস্থা? তারা বুঝতে পারছে শুধুমাত্র কালো হওয়ার কারণে তাদের এই নিপীড়ন। একইভাবে ভারতের মুসলিম শিশুগুলোর কথা ভাবুন।
সারা পৃথিবী জুড়েই আজ এই অবস্থা। সারাপৃথিবীতে আজ কট্টরপন্থার জয়জয়কার। আমি জানি না কোনদিকে যাচ্ছে পৃথিবী। তবে আমার ভীষণ কষ্ট লাগে। গলায় হাঁটু চেপে ধরার পর ফ্লয়েড নিশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাতে কাতরাতে বাররার বলছিলেন, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’ আসলেই তাই। যতদিন পৃথিবীতে উদার মানুষের সংখ্যা বাড়বে ততদিন কিন্তু ট্রাম্প আর মোদিরাই কিন্তু জিতবে। আর দুনিয়াজুড়ে বাড়বে হিংসা ঘৃণা। ভাবুন তো ঘৃণা আর হিংসার এই পৃথিবীতে নিশ্বাস নেবেন কীভাবে?
আমি জানি না পৃথিবীর ভবিষ্যত কী? মিনেসোটা থেকে শুরু হওয়া যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়, আসাম থেকে যে বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল পুরো ভারতজুড়ে একইরকম বোধ দরকার সারা দুনিয়াতে। সবার আগে আমাদের মানবিক হতে হবে। মানুষ হতে হবে।
আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ধর্ম, বর্ণ, জাত, লিঙ্গ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সবকিছুর উপরে উঠে যতোক্ষণ না আমরা নিজেদের মানুষ ভাবতে পারবো ততোদিন পৃথিবীতে হত্যা আর হিংসার এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। বারবার আমাদের বলতে হবে, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’