যে ঝড় বুঝিয়ে দিয়ে গেল, দলের চেয়ে দেশ সবসময় বড়!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ক্যাপিটল হলে দল বেঁধে উগ্রপন্থীদের ঢুকে পড়ার দিনটা দিনটা ছিল আমেরিকার গত কয়েক দশকের রাজনীতির মাঝে সবচেয়ে সুন্দর দিন। এদিন আবারো আমেরিকায় গণতন্ত্রের বিজয় ঘোষিত হয়েছে। আগেই গালি দেবেন না, কথাটা শেষ করতে দিন। আপনারা তো শুধু ক্যাপিটল হলে আক্রমণ দেখেছেন। কিন্তু এর পরে কি হলো সেটা কয়জন দেখেছেন?
গতকাল, তথা যেদিন জনগণ ক্যাপিটল হলে ঢুকে পড়েছিল, সেই দিনটা ছিল আমেরিকার গত কয়েক দশকের রাজনীতির মাঝে সবচেয়ে সুন্দর দিন। সেদিন আবারো আমেরিকায় গণতন্ত্রের বিজয় ঘোষিত হলো। এই দিন এক মাইল ফলক আর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক সারা পৃথিবীর গণতন্ত্রের কাছে।
ভাই দাঁড়ান, আগে গালি দিয়েন না, কথাটা শেষ করে নেই।
আপনারা তো শুধু ক্যাপিটল হলে আক্রমণ দেখেছেন। কিন্তু এর পরে কি হলো সেটা কয়জন দেখেছেন? আমি এর পরের পুরো সিনেট অধিবেশন দেখেছি। তাই বলছি এটা গত কয়েক দশকের মাঝে আমেরিকার রাজনীতির সবচেয়ে সুন্দর দিন।
ওবামার আমল থেকেই জিনিসটা শুরু হয়েছিল। দেশের চেয়ে আমেরিকান রাজনীতিবিদদের কাছে দল বড় হয়ে গেছিল। সিনেট থাকতো দুই ভাগে বিভক্ত। দেখা যেতো ৫০- ৫১ এমন ব্যবধানে সিনেটে বিল পাশ হতো। বাংলাদেশী স্টাইলে অপরপক্ষকে বাধা দেয়াই যেন তাদের স্টাইল হয়ে যাচ্ছিলো! সবাই ভাল মন্দ বিবেচনা না করে নিজের দল যেদিকে যেত সে দলের সবাই একই জিনিস সাপোর্ট বা বিরোধিতা করতো। অথচ গণতন্ত্রের মানেই হচ্ছে দুপক্ষের মাঝে কমন গ্রাউন্ড খুঁজে বের করা, সেটা যেন হচ্ছিলোই না।
সেদিনও রিপাবলিকান সিনেটররা এসেছিল ট্রাম্পের হয়ে কথা বলতে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একেক স্টেটের ফলাফল যখন ঘোষিত হবে তখন তারা আপত্তি করে করে দেরী করিয়ে দিবে। এক স্টেটে আপত্তি উঠলে সেটার উপর দুই ঘন্টা বিতর্ক করে ভূটাভুটি করতে হয়। সেই হিসাবে রিপাবলিকানদের প্ল্যান ছিল পুরা চব্বিশ ঘন্টা বা তারও বেশী দেরী করিয়ে দেয়া একটা একটা স্টেটের ব্যাপারে আপত্তি তুলে।
কিন্তু যখন সিনেটর আর কংগ্রেসম্যান সবাই দৌড়ানি খেলো, ফিরে এসে তারা সবাই একাট্টা হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারলো তারা এত দিন যে আগুন নিয়ে খেলেছে সেটা তাদেরই জ্বালিয়ে দিবে। রাজনীতির খেলা খেলতে খেলতে আজ আমেরিকান অস্তিত্বই হুমকির মুখে পরে গেছে! ঠিক তখনই তারা সত্যিকার আমেরিকানের মত ব্যবহার শুরু করলো।
ফিরে এসে সিনেটররা যে বক্তব্য দিয়েছে তার প্রত্যেকটা বাঁধিয়ে রাখার মত। রিপাবলিকান মাইক পেন্স, মিচ ম্যাককনেল, মিট রমনি, লিন্ডসে গ্রাহাম, বেন স্যাসির কথা পারলে আমি বাঁধায়া রাখতাম। তারা শক্ত স্ট্যান্ড নিয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষে। দুই দলই তখন এই স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে বললো। আমেরিকান আদর্শের কথা মনে করায়া দিলো, মনে করায়া দিল দলের চেয়ে দেশ বড়। এতো সুন্দর কথা, সারাজীবন আমেরিকার রাজনীতি সম্পর্কে যা শুনে এসেছিলাম তেমন সব কথাবার্তা।
রিপাবলিকান সিনেটররা বললো তারা আর ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করবে না। শুধু টেড ক্রুজ, আর জেমস হাউলি দুইটা স্টেটের রেজাল্ট নিয়ে আপত্তির কথা বললো, সবাই তাদের দুয়ো ধ্বনি দিলো। যাইহোক, ওই দুইটা স্টেট নিয়ে যে ভোটাভুটি হলো তার ফলাফল হচ্ছে ৯৩- ৬। অর্থাৎ বাহান্ন জন রিপাবলিকান সিনেটরের মাঝে মাত্র ৬ জন আপত্তি জানালো, এমনটা আমার ধারণা গত এক যুগে হয়নাই। বিপুল ভোটে অনাপত্তি পাশ করলো।
কংগ্রেসেও দুই স্টেটের রেজাল্ট নিয়ে যে আপত্তি ছিল তা দুই তৃতীয়াংশ ভোটে বাতিল হলো। তাদের প্ল্যান ছিল সাত আটটা স্টেট নিয়ে আপত্তি করবে, কিন্তু ফিরে এসে বেশিরভাগ সিনেটর জানালো তারা আপত্তি করবে না। মাত্র দুইটাতে আপত্তি করলো দুই বাটপার টেড ক্রুজ আর হাউলি। যাইহোক তারা প্রচন্ড নিন্দিত হয়েছে এবং হচ্ছে এখনো।
যাই হোক, সেইদিনের ঘটনার নিন্দা করছে সকলে, একটা লোকেও এই কাজের পক্ষে দাঁড়ায় নাই। ট্রাম্পের অনেক সহযোগী প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেছে। সবাই ট্রাম্পের বিপক্ষে চলে গেছে, এত পাগলামি করা সত্ত্বেও ট্রাম্প এমন ধাক্কা আগে কখনও খায়নি। ফেসবুক টুইটার স্বৈরাচারী ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করেছে। আমি তার বেদনাটা বুঝতেছি হালকা, কারন আমিও তিন দিন ফেসবুকে ব্লক ছিলাম।
মূল ক্রেডিট রিপাবলিকান সিনেটর আর কংগ্রেসম্যানদের, তারা ট্রাম্পের কথামত কাজ করলে আমেরিকায় একটা ক্যু হয়ে যেত। দৌড়ানিটা না খাইলে হয়তো তারা আরো প্যাঁচাইতো রাজনৈতিক সুবিধার কথা ভেবে। কিন্তু একটা ঝড় এসে সবাইকে বুঝিয়ে দিলো দলের চাইতে দেশ আর আদর্শ বড়! সবাইকে এক করে দিয়ে গেল!
আশা করি দুই দলের যে আত্নোপলদ্ধি হয়েছে তা আমেরিকার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আর ভবিষ্যতের স্বৈরাচারেরাও এর থেকে শিক্ষা নিবে আমেরিকায় ক্যু করতে চাইলে কি হয়। তাই আমি সেদিনের ঘটনাটাকে বেশ পজিটিভলি নিয়েছি, অন্ধকারের পেছনের আলোতে আমার ফোকাস বেশী....