অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত নির্মাতা এইবার নাটক বানিয়েছেন। শত নাটকের ভিড়ে আমার দেখা অন্যতম সেরা দশটি নাটক নিয়ে এই আয়োজন।
দুই ঈদের মতো ভালোবাসা দিবসের নাটকও জমজমাট। সংখ্যার হিসেবে অনেক নাটকই নির্মাণ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নাটক নিয়ে অনেক অভিযোগ, এইবার কিছু নির্মাতা চেষ্টা করেছেন দর্শকদের ভালো কিছু উপহার দেয়ার জন্য। চমকপ্রদ হয়েছি ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পগুলো দেখে, অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত নির্মাতা এইবার নাটক বানিয়েছেন। শত নাটকের ভিড়ে আমার দেখা অন্যতম সেরা দশটি নাটক নিয়ে এই আয়োজন:
১. মুখ ও মুখোশের গল্প: যান্ত্রিক শহরের ফাঁদে কাছের মানুষদের সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে 'মুখ ও মুখোশের গল্প'। জিসান ও নীতু এই যান্ত্রিক শহরের দম্পতি, বিয়ের সাত বছর কেটে গেছে। সুখী দম্পতির এই স্বাভাবিক সম্পর্কের মাঝেই ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, মুখের আড়ালে হয়ে উঠে যেন মুখোশের গল্প! সোশ্যাল মিডিয়া ও যান্ত্রিকতার মোহের ফাঁদে ভুল পথে পা বাড়ান। রাগ আসে, অভিমান আসে, তবে প্রতিশোধ নয়। এটাই এই গল্পের শক্তিশালী দিক, যা তৃপ্তি দেয়। মুখোমুখি বসে দুইজন নিজেদের মুখোশের আত্বহনন করছে, যা মন ছুঁয়ে গেছে।
অভিনয়ে তাহসান- তিশা জুটিকে অনেকদিন পর পুরনো রুপে পাওয়া গেছে। নির্মাতা আশফাক নিপুণকেও অভিনয়ে পাওয়া গেছে প্রায় পাঁচ বছর পর। এই ত্রয়ী দর্শকদের হতাশ করেন নি,ভালোবাসা দিবসের অন্যতম সেরা নাটক হয়ে থাকবে,বছরশেষেও থাকবে ভালো কাজের তালিকায়। ওহ হ্যাঁ বিশেষ করে বলতে হয় আরাফাত মহসিনের আবহ সংগীত,যেটা গল্পের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলে মুগ্ধ করেছে।
২. শেষটা সবাই জানে: নীরা টুকটাক মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত, তবে ক্যারিয়ার গড়তে চায় বিদেশেই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে, অন্যদিকে রাকিন পড়াশুনায় ভালো না, তবে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় কারণ যেকোনো অনুষ্ঠানে মাইকিংয়ে সুন্দর করে কথা বলার জন্য ডাক পড়ে। নবীনদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের জন্য এই অনুষ্ঠানে কাছাকাছি আসে দুইজন। এরপর?
শাহনেওয়াজ মিঠুর পাঠানো গল্পটা আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা হলেও নুহাশ হুমায়ূন বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যে বেশ জমিয়ে ছিলেন, তেমনি নির্মাতা হিসেবেও। সাফা কবির বেশ ভালো, তবে বাজি হচ্ছেন জুনায়েদ। মাসুদ রানার রিয়েলিটি শোয়ের প্রথম রানারআপ এই ছেলে দেখতে বেশ চার্মিং, অভিনয়টাও ঠিকঠাক। নিজের পরিচিতি, পরিবারের ইমোশন দৃশ্যের ভাত খাওয়া থেকে রোমান্টিকতায় বেশ সাবলীল। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু, দীপা খন্দকার ও আব্দুল কাদের (অনেকদিন বাদে অভিনয়ে দেখলাম)। গল্পের নামের মতো অসমাপ্ত সিরিজের শেষটা হয়তো সবাই জানে, তবে এখানেই রয়েছে চমক। যার কারণে এই নাটকটি দর্শকদের অনেকদিন মনে থাকবে। বেশি ভালো লেগেছে এই নাটকটি।
৩. তোমার পাশে হাঁটতে দিও: অনি পেশায় ডাক্তার। মফস্বলে আসে পেশার উদ্দেশ্যে, মাতৃভক্ত ছেলে। মফস্বলে এসে পরিচয় হয় পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়ে তটিনীর সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে সেটা রুপ নেয় প্রণয়ে, কিন্তু অনির মা সেটা মেনে নেয় না। অনি ফিরে আসে শহরে, তবে ভালোবাসার টান কি এখানেই শেষ?
আহমেদ সেজানের পাঠানো গল্পটা বেশ ভালো, ধীরগতিতে হলেও অনম বিশ্বাসের চিত্রনাট্য ও নির্মাণ বেশ ভালো। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের দৃশ্যগুলো মন ভরায়। অভিনয়ে ন ডরাই খ্যাত সুনেরাহ বিনতে কামাল, মফস্বলের মেয়ের তুলনায় আধুনিকা মনে হলেও অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল। খায়রুল বাশারকে এর আগে স্বল্প চরিত্রে দেখলেও এবারই প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন। আর এই সুযোগটাও দারুণভাবে নিয়েছেন। পুরো নাটকে পরিমিত অভিনয় এবং শেষ দৃশ্যের অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পুলক অনিলের কবিতা আর ইমন চৌধুরীর আবহ সংগীত, গান আরো পূর্ণতা দিয়েছে। আরও ছিলেন সাবেরী আলম ও মুসাফির সৈয়দ।
৪. গজদন্তিনী: গল্পের নায়ক অন্তুর গল্পকথক হয়ে প্রবেশ করেন এই নাটকে, ইচ্ছা না থাকলেও ফুফার নানান আজব কর্মকান্ডের সমাধান দিতে প্রায়ই যেতে হয় ফুফুর বাসায়। তেমনি একদিন দরজায় নক দিতেই দরজা খুলে দেয় এক অচেনা তরুণী, কথার ছলে দেখতে পান একটি বাড়তি দাঁতের। মুগ্ধ হয়ে নাম দেন- গজদন্তিনী। সেই অচেনা মেয়েটির নাম রুমকি, সম্পর্কে ফুপার ভাগ্নী। এরপর ভালোবাসা, দারুণ কিছু মুহুর্ত। তবে হঠাৎই আগমন ঘটে শাহেদের, যার সাথে বিয়ে হবে রুমকীর। এরপর?
জোবায়েদ আহসানের এই লেখাটা অনেকেরই পরিচিত। বই পোকা গ্রুপে তিনি ধারাবাহিক আকারে এই গল্পটি প্রকাশ করেছিলেন। গল্পটাই চমৎকার, দারুণ কিছু সংলাপ আর হিউমারের কারণে বেশ উপভোগ্য,কমেডিও ভালো। নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান চিত্রনাট্য ও নির্মাতা ঠিকঠাকভাবে সাজিয়েছিলেন। তবে মূল গল্পে নায়কের মাঝে হিমুর প্রবল প্রভাব থাকলেও নাটকে কেন যেন সেটা দেখা যায়নি।
তবে অভিনয়ে আফরান নিশো বেশ ভালো, তিনিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন। নাম ভূমিকায় থাকা স্নিগ্ধ মেহজাবীনের সৌন্দর্য ও হাসিতে আবার মুগ্ধ হবেন, অভিনয়টাও সাবলীল। স্বল্প সময়ে মনোজ কুমার দ্যূতি ছড়িয়েছেন, সেরা সংলাপটি তার বচনেই। অনেকদিন বাদে অভিনয়ে দেখা গেল আজিজুল হাকিমকে, এক সময়ের এই চিরসবুজ তারকার ভগ্ন শরীর দেখে খারাপ লেগেছে। শুরুর দিকে তিনিই জমিয়েছিলেন, তবে পুরো নাটকে গুরুত্ব কম। উনার স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন মুনিরা ইউসুফ মেমী। অনেক বছর পর এই দুইজনকে একসাথে পাওয়া গেল, মিজানুর রহমান আরিয়ানকে বিশেষ ধন্যবাদ। সোমেশ্বর অলির কথায় আপেল মাহমুদের সুরে বাড়তি পাওনা ছিল শাওন গানওয়ালার কন্ঠে গান।
৫. প্রতিদিন: অস্থির সময়ের রাগ-অভিমানের ভুল সিদ্ধান্তে ভালোবাসার পরিণয় রুপ নেয় বিচ্ছেদে। তবে যখন সেই ভুল ভাঙ্গে, ততদিনে ভালোবাসার মানুষটি পর হয়ে যায়। তখন ভালোবাসা যেন আরো বেড়ে যায়, প্রতিদিন তাকে দেখতেই হবে নীরবে নি:শব্দে। কিন্তু যার জন্য এই পুরনো প্রেম ফিরে আসা, সে কতটুকু অনুভব করে?
এই গল্প নিয়েই মিজানুর রহমান আরিয়ানের ভালোবাসা দিবসের নাটক 'প্রতিদিন'। গল্প ভাবনায় আরিয়ানের পাশাপাশি আফরান নিশোও ছিলেন। মূখ্য ভূমিকায় আফরান নিশোর অভিনয় সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম উজ্জল অভিনয়, মেহজাবীনের নীরব অভিনয় মুগ্ধতা ছড়ায়। এই নাটকে আরেক প্রাপ্তি মনির খান শিমুল, অনেকদিন পর অভিনয়ে দেখা গেছে তাকে। খুব বেশি করার ছিল না তাঁর, তবুও যতটুকু ছিলেন ভালোই। পুরনো অভিনয়শিল্পীদের নিয়মিত হওয়া আশাব্যঞ্জক, পার্শ্ব চরিত্রগুলো বৈচিত্র্যতা পায়। আর পরিচালক হিসেবে আরিয়ান বছরের প্রথম কাজেই সফল হয়েছেন বলা যায়। সবশেষে বলতে হয় আবহ সংগীত আর গানের কথা। মার্সেলের আবহ সংগীত অভিনয়ের পাশাপাশি এই নাটকের মূল প্রাণ, সঙ্গে মার্সেলেরই গাওয়া 'তুমি ছাড়া আমি নেই ভালো' গানটা হৃদয়ে হাহাকার জাগায়।
৬. যে শহরে ভালোবাসা নেই: বরিশাল থেকে ভাগ্য অন্বেষণের খোঁজে মাকে নিয়ে ঢাকায় আসে তিশা। সদরঘাটে পিঠা বিক্রি করে দিনযাপন করে, মা অসুস্থ। অন্যদিকে লঞ্চের দালালি করে রওনক হাসান। ঘটনাক্রমে দুইজনের পরিচয়, প্রণয়। ঢাকায় আসার প্রথমদিকে তার মায়ের অসুস্থজনিত কারণে প্রতারনার শিকার হয়, যে ঘটনার কারণে দুইজনের দূরত্ব বেড়ে যায়! যান্ত্রিক শহরে সুখের আশায় আসে অনেক মানুষ, তবুও কুচক্রীদের কারণে তাদের সেই সুখ আর সয় না। ফিরে যেতে হয় নিজের পুরনো ঠিকানায়। মেজবাহউদ্দিন সুমনের রচনায় আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় এই ভালোবাসা দিবসের অন্যতম সেরা নাটক 'যে শহরে ভালোবাসা নেই'। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তিশা ও রওনক হাসানের অনবদ্য অভিনয় সঙ্গে টুনটুনি আপা।
৭. ডিভোর্স ফটোগ্রাফি: আজকাল সবকিছুতেই ফটোগ্রাফির আয়োজন থাকে বিশালভাবে। উন্নত বিশ্বে বিচ্ছেদের ফটোগ্রাফিও হয়, বাংলাদেশের জন্য অভিনব এই ঘটনা নিয়ে মুরসালিন শুভর নাটক 'ডিভোর্স ফটোগ্রাফি'। বাংলাদেশে এই গল্প নিয়ে এটাই প্রথম নাটক। সাইদুর রহমান রাহির গল্পে এই নাটকের বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য করেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। মুখ্য ভূমিকায় তিনিই আছেন, অভিনয়টা তো দারুণ করেন। পাশাপাশি বিচ্ছেদী দম্পতির ভূমিকায় থাকা তাসনিয়া ফারিন ভালো করলেও মিশু সাব্বির এই নাটকে সুবিচার করতে পারেননি।
৮. অবুঝ দিনের গল্প ২: প্রথম কিস্তির বেশ জনপ্রিয়তার পর দ্বিতীয় ভাগের গল্প বলা হয়েছে 'অবুঝ দিনের গল্প ২ এর পর্বে। তানজিন তিশা এই পর্বে কৈশোর পেরিয়ে এখন তরুণী, আর অপূর্ব তাকে নিয়ে এখনো দ্বিধায় থাকেন। সবশেষে সিদ্ধান্তে আসলেও চমক আসে যা দেখানো হবে তৃতীয় কিস্তিতে। শিহাব শাহিনের এই নাটক প্রথম পর্বের মতো মন ছুঁয়ে যায়নি, মনে হয়েছে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। অভিনয়ে তানজিন তিশাকে অনেকদিন পর ভালো লেগেছে,সবশেষ শিহাব শাহিনের আরেকটি টেলিফিল্মেই ভালো লেগেছিল। এই ভালোবাসা দিবসে অনেক নাটকের ভিড়ে অপূর্বের এই নাটকটিই বেশি আলোচনায় এসেছে, অভিনয়েও ভালো।
৯. পরিপূরক: "এই আত্বকেন্দ্রিক সময়ে কাউকে হারানো অনেক সহজ, কিন্তু কাউকে জিতে নেয়া কঠিন। এই কঠিন জয় হউক আমাদের পরিপূরক"। ভালোবাসতে কী লাগে? দুইজনের মধ্যে ভালোবাসা থাকা লাগে। বেশ কিছুদিন আগে এক অন্যরকম দম্পতির ভালোবাসার গল্প আমাদের সামনে এসেছিল। না কোনো ফিকশনের গল্প নয়, একেবারে বাস্তব কাহিনী। তারা আর সবার মতো স্বাভাবিক নয়, দূর্ঘটনায় পা হারিয়ে দুইজনই পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী। দুইজনেরই দেখা হয় সাভারের সি আর পি, যেখানে তাদের নির্মল আশ্রয় স্থল।
দূর্ঘটনার প্রথমদিকে সেই দু:সহ দিনগুলিতে তারা কাছাকাছি এসেছেন, বিয়ে করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কোনোদিন সন্তান আসবে না জেনেও একে অপরকে ছেড়ে যায়নি। জীবনকে নিজেদের মতো রাঙিয়ে নিয়েছেন,নিঃশেষ হতে দেয়নি। একজন আরেকজনের হয়ে উঠে পরিপূরক,তাদের নাম সজল ও পারভিন। এই দুইজনের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ভালোবাসা দিবসের নাটক 'পরিপূরক'।
বাস্তব এই গল্পকে নাটক সাজিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা শাফায়েত মনসুর রানা। যেকোনো উৎসবে উনার নাটক থাকে দর্শকদের আগ্রহের তালিকায়। মূল এই কাহিনীর সাথে তিনি যুক্ত করেছেন এক নারী সাংবাদিকের ব্যক্তিজীবন। যে অসুখী দম্পতি, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এই দুইজনের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় ভালোবাসার এক নতুন অনুভূতি খুঁজে পান।
মূল চরিত্রে ছিলেন এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি আফরান নিশো-মেহজাবীন। মেহজাবীনের সাথে আগে কাজ করলেও নিশোর সঙ্গে এবারই প্রথম কাজ করেছে। তাই দর্শকদের আগ্রহ আরো বেড়েছে। এই জুটির শত চিরাচরিত কাজের ভিড়ে এই নাটক অবশ্যই বিশেষ হয়ে থাকবে। তারা নিজেরাও এই চরিত্রকে যথাযথ ফুটিয়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
সত্যি বলতে নিশোকে বেশ প্রাণোচ্ছল লেগেছে এই নাটকে। মুখ ভর্তি দাড়ির বিপরীতে ক্লিন শেভ দেখতে ভালো লেগেছে। আরো আছেন তানভীর-নাজিবা বাশার। গান একটি ছিল, সেটি রানার কথায় আয়োজন করেছে রাফা। সাভারে দৃশ্যধারণ করা হয়েছে নাটকটি, ক্যামেরায় ছিলেন হৃদয় সরকার। মূল কাহিনী যেহেতু সত্যকাহিনী অবলম্বনে, তাই সেখানে চিত্রনাট্যতে বাড়তি কিছু যোগ করতে চাননি বা তাদের নিষেধ ছিল। ঠিক যেমন কাহিনী, তেমনি পর্দায় এসেছে। ডকুমেন্টারি টাইপ হলেও দেখার পর একটা ভালো অনুভূতির সৃষ্টি হবে। আরেকটু সময় নিয়ে কাজ করলে চিত্রনাট্যটা আরও গভীর হতে পারতো। দর্শকদের শাফায়েত মনসুর রানার কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকে, সেই প্রত্যাশা মিটেছে বলব না, তবে অনেক কাজের ভীড়ে এটি মনে রাখার মতো কাজ। অন্যান্য ধারায় সেরাটা দিলেও ভালোবাসার নাটক বানাতে শাফায়েত মনসুর রানা কিছুটা পিছিয়ে বা তিনি উপভোগ করেন না সেটাও একটি কারণ হতে পারে।
১০. রেহনুমা: প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহেদের কাছে সুচিস্মিতা নামক একটি মেয়ের চিঠি আসে, পরে জানা যায় সে অন্ধ ভক্ত। দশ বছর ধরে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে মারা গেছেন রেহনুমা। প্রথমদিকে স্বাভাবিকতা দেখালেও পরবর্তী ক্ষোভের কান্না প্রকাশ পায়। রেহনুমার দেওয়া হলুদ পাঞ্জাবী অনেকদিন পরে বের করে আবার পড়েন, ফিরে যান স্মৃতির জগতে। দশ বছর আগে, ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন শাহেদ সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী- এই নিয়েই বন্ধুদের বুঝাচ্ছে।
এর মাঝেই সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস নিয়ে যুক্তি তুলে কথা বলেন রেহনুমা। প্রথম দেখাতেই চমকে যান শাহেদ। ধার্মিক রেহনুমার সঙ্গে প্রণয় ঘটে শাহেদের। শাহেদের চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ অসম্মান না দেখালেও উৎসাহ দিত না রেহনুমা। বেশকিছু শর্টফিল্ম বানিয়ে পরিচিতি শাহেদের কাছে ভক্তদের চিঠি আসতে থাকে, তাদের একজন সুচিস্মিতা। একদিন এক দুর্ঘটনার পর দুইজনের বিচ্ছেদ ঘটে, শাহেদ শতবার চেষ্টা করেছে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কিন্তু রেহনুমা আর দেখাই দেয়নি। কেন?
সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের প্রতি গল্প নিয়ে ভিকি জাহেদের ওয়েব ড্রামা 'রেহনুমা'। আপাতদৃষ্টিতে গল্প এই হলেও গভীরতা আছে। তিনি বিশ্বাস করিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা আছে, মনে প্রাণে একীভূত হয়ে ডাকলে তাকে পাওয়া যায়। যার কারণে মৃত মানুষ বেঁচে যায়, জন্মগত খোঁড়া মানুষের পা ঠিক হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানকে প্রশ্নের মুখে তুলে দিয়েছেন, বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দিয়েছেন। হয়তো সেটা মিরাকল!
গল্প শেষে বিশ্বাসের জয় হয়েছে, তবে অবিশ্বাসের গল্পও জোরালোভাবে আনেননি, হয়তো সেটা উদ্দেশ্য ছিল না। গল্পের মূল বক্তব্য নিয়ে বিভাজন হতে পারে। পুরো নাটকে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেছেন। ভিকি জাহেদের নির্মাণে প্রভাব না থাকলেও লেখা বা দর্শনে প্রভাব লক্ষ্যনীয়। ভালোবাসা দিবসে অন্যরকম এক ভালোবাসার গল্প বলেছেন ভিকি জাহেদ, অভিনয়ে মেহজাবীন বেশ ভালো, তৌসিফ মাহবুবের উন্নতির চেষ্টাকে শুভেচ্ছা।