প্রতারিত, নির্যাতিত মানুষগুলোর প্রতি রাষ্ট্রের এ কেমন অনাচার?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সব নিয়ম মেনে বিদেশে গিয়ে প্রতারিত এবং নির্যাতিত মানুষগুলোর পাশে যেখানে রাষ্ট্রের দাঁড়ানোর কথা, সেখানে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে!
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ক্ষমা চাইছি ভিয়েতনাম ফেরত ৮১ জন বাংলাদেশির কাছে, যারা এখন জেলে। একই সঙ্গে দ্রুত তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাইছি রাষ্ট্রের কাছে। আমি বলবো তাদের মুক্তি না দিলে এবং তাদের পাশে না থাকলে ভবিষ্যতে এই ঘটনা একটা কলঙ্ক হয়ে থাকবে। কারণ, সব নিয়ম মেনে বিদেশে গিয়ে প্রতারিত এবং নির্যাতিত মানুষগুলোর পাশে যেখানে রাষ্ট্রের দাঁড়ানোর কথা, সেখানে তাদের জেলহাজতে পাঠানো অনাচার।
হ্যাঁ, কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই শাস্তি হতে পারে। কিন্তু এর বদলে যারা অপরাধের শিকার তারা যদি মিথ্যা অভিযোগে জেলে যায় এবং যারা অপরাধী তারা যদি মুক্ত থাকে সেটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। দেখেন এজেন্সিগুলো ভিয়েতনাম থেকে কাজ আনলো, রাষ্ট্র যাচাই করে অনুমোদন দিলো, এই কর্মীদের প্রত্যেককে ছাড়পত্র দেয়া হলো, একেকজন ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করলেন, কিন্তু ভিয়েতনামে গিয়ে তারা কাজ পেলেন না। এই দায় কার?
যে কোন মানুষকে গ্রেপ্তার করতে হলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লাগে। সেগুলো আদালতে পাঠাতে হয়। কিন্তু এই ৮১ জন বাংলাদেশির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই বরং গৎবাঁধা সেই পুরনো অভিযোগ, এরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। বলা হচ্ছে, দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য সলাপরামর্শ করছিলেন।
আচ্ছা আমাকে বলেন তো, আর্মি যে কোয়ারেন্টিন সেন্টারের দায়িত্বে সেখানে তারা কী করে গোপনে সলাপরার্শ করে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে? অভিযোগগুলো পড়লে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। কেউ কি এতটুকুও তদন্ত করার প্রয়োজন বোধ করে না?
এর আগে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যারা ফেরত এসেছিলেন, তারা ছোটখাটো অপরাধে সেখানে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ভিয়েতনামের এরা কেউ জেলে ছিলেন না। বরং নিজেরাই দূতাবাসে অভিযোগ দিয়ে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু ভিয়েতনাম ফেরতদের বেলাতেও সেই একই লাইন রাখা হয়েছে, এই ৮১ জন আগে জেলে ছিলেন এবং নানা অপরাধে যুক্ত ছিলেন।
গত দেড়যুগ ধরে আমি সাংবাদিকতা করছি। অভিবাসন ও প্রবাসীদের বিষয়টা খুব কাছ থেকে দেখছি। এর আগে এভাবে প্রতারিত মানুষকে জেলে পাঠানোর ঘটনা আমি দেখিনি। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় যেভাবে প্রথম বলেছিলেন এরা দূতাবাস দখল করতে গেছে সেটা ভয়াবহ ধরনের হাস্যকর অভিযোগ।
একবার ভাবেন তো কেন এরা দূতাবাস দখল করতে যাবে? আর যদি দূতাবাস দখলের অভিযোগ সত্যই হয়, তাহলে সেই অভিযোগ প্রথমেই আনতে হবে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যারা তাদের ছাড়পত্র দিয়েছিল। কারণ ছাড়পত্র না দিলে তো তারা যেতে পারতো না। রাষ্ট্রকে বলব, অপরাধীদের বিচার করুন। কিন্তু বিনা অপরাধে কেউ যেন সাজা না পায়। কারও অপরাধ ঢাকতে নিরীহ কাউকে যেন সাজা না দেওয়া হয়।
আমি বলবো, ভিয়েতনামের ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে দালাল থেকে শুরু করে এজেন্সি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএমইটি, দূতাবাস বহুজনের ব্যর্থতার চিত্র উঠে আসবে। সেখান থেকে করণীয় ঠিক করতে পারলে দেশের ভাবমূর্তিটা অন্তত নষ্ট হবে না।
এমপি হয়ে মানবপাচার করলে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় না, তখন তারা বলেন, এখনো অভিযোগ পাননি। কিন্তু নিপীড়িত হয়ে প্রবাসীরা প্রতিকার চাইতে দূতাবাসে গেলে ভাবমুর্তি ক্ষুন্নকারী! আচ্ছা বলেন তো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা থেকে শুরু করে আজকের লুটপাট কিংবা বিদেশে টাকা পাচার। কোনদিন কোন সাধারণ মানুষ কী রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে? নাকি ক্ষুন্ন করেছেন আপনারা যারা কোন না কোনভাবে ক্ষমতায় ছিলেন!
রাষ্ট্রকে বলবো, প্রবাসীদের আমরা যথাযথ সম্মান দিতে না পারি তাই বলে জেলে পাঠানোর মতো অনাচার বন্ধ হোক। দ্রুত এই ৮১ জনকে জামিন দেয়া হোক। আর আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করা হোক। মানবপাচারের ১৫-২০ টা মামলা নিয়েও যারা ক্ষমতা দেখিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যাদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পারলে তাদের ধরুন। শুধু নিরীহ মানুষের ওপর ক্ষমতা দেখাবেন না!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন