মোনালিসার হাসি আঁকতে মর্গে রাত কাটিয়েছেন দ্য ভিঞ্চি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
অতি সামান্য একটি তথ্যকে হাতিয়ার করেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মোনালিসার মুখে বসিয়েছিলেন এমনই রহস্যময় এক হাসি, যা হাজার বছর পরও সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষের কাছেই এক বিশাল ধাঁধাঁ হয়ে আছে।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর শিল্পকর্ম মোনালিসা। এ ছবিতে মোনালিসার মুখের হাসি যেন এক চিরন্তন রহস্য। যুগ যুগ ধরে চিত্রপ্রেমী মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে মোনালিসার রহস্যময়ী হাসি। নানাজনে নানা তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে। আর এভাবে মোনালিসার হাসিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার মিথ।
কিন্তু আসলেই যে মোনালিসার হাসির পেছনে কোন গূঢ় উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে, সে রহস্যের জট খোলেনি আজও। তবে সম্প্রতি নতুন করে এই রহস্যের আগুনে ঘি ঢেলেছেন টুলানের এক ইতিহাসের অধ্যাপক ওয়াল্টার আইজাকসন, যিনি একাধারে আসপেন ইনস্টিটিউটের সিইও, সিএনএন এর চেয়ারম্যান, এবং টাইম ম্যাগাজিনের সম্পাদকও বটে! আইজাকসন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বই ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি: এ বায়োগ্রাফি’তে দাবি করেছেন যে মোনালিসার মুখের হাসিকে যথার্থ করে তোলার উদ্দেশ্যে চিত্রকর রাতের পর রাত কাটিয়েছেন এক মর্গের গহীনে, মৃতদেহের গা থেকে ত্বক ছাড়িয়ে পরীক্ষা করেছেন নিচের পেশি ও স্নায়ু। সাইমন ও সাস্টার হতে প্রকাশিত বইটিতে আইজাকসন লিখেছেন,
‘যে সময়টায় তিনি মোনালিসার হাসিকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখন লিওনার্দো বেশ অনেকগুলো রাত কাটিয়েছেন তাঁর ফ্লোরিন্স স্টুডিওর অদূরে সান্টা মারিয়া ন্যুওভার মর্গে। তিনি একে একে প্রত্যেকটি মৃতদেহ থেকে ত্বক বিচ্ছিন্ন করে ভেতরের পেশি ও স্নায়ু বের করে এনেছেন, আর তারপর সেগুলো নিয়ে বিশদে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালিয়েছেন।’
ভিঞ্চি বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন এটি জানার জন্য যে শরীরের স্নায়ুসমূহের মধ্যে কোনগুলোর সরাসরি যোগাযোগ ছিল মস্তিষ্কের সাথে, কেননা এ ব্যাপারটি তাকে অনেকাংশেই সাহায্য করছিল মোনালিসার মুখে একটি যথার্থ হাসি ফুটিয়ে তুলতে। এবং মোনালিসার হাসিতে যে সত্যিই রহস্য লুকিয়ে আছে, তা স্বীকার করেন আইজাকসনও। তিনি বলেন,
‘আমরা যখন তাকাই, তার (মোনালিসার) মুখ মিটমিট করে। সে কি ভাবছে? আবার আমরা যখন চোখ একটু ঘুরাই, তার হাসিটাও যেন বদলে যায়। এতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। আমরা আমাদের চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিই, কিন্তু হাসিটা আমাদের মাথার মধ্যেই রয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে এই হাসি মানবসভ্যতাকে তাড়া করে ফিরেছে। লিওনার্দোর শিল্পকর্মে যেভাবে মোশন আর ইমোশন একসাথে মুখোশবন্দি হয়ে থাকে, এমনটার দেখা আর কোথাও মেলে না।’
এবং দা ভিঞ্চির মর্গে রাত্রিযাপনগুলো কিন্তু শেষমেষ ফলপ্রসূই হয়েছিল। তিনি আবিষ্কার করেন যে পেশিগুলো ঠোঁট কুঁচকাতে সাহায্য করে, সেই পেশিগুলোই আবার ঠোঁটের নিচের অংশের গঠনে ভূমিকা রাখে।
‘আপনার নিচের ঠোঁটটি ভাঁজ করুন, আপনি দেখতে পাবেন এটা সত্য। এটা নিজে নিজেই কুঞ্চিত হতে পারে, উপরের ঠোটের সাহায্য সহ কিংবা ছাড়াই। কিন্তু একা একা ঠোঁট কোঁচকানো অসম্ভব। এটা হয়ত খুব ছোট একটা আবিষ্কার ছিল। কিন্তু একজন অ্যানাটোমিস্টের জন্য, যে কিনা একইসাথে একজন শিল্পীও বটে, এটা বস্তুতই খুবই উল্লেখযোগ্য একটা তথ্য ছিল।’
এবং এই অতি সামান্য একটি তথ্যকে হাতিয়ার করেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মোনালিসার মুখে বসিয়েছিলেন এমনই রহস্যময় এক হাসি, যা হাজার বছর পরও সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষের কাছেই এক বিশাল ধাঁধাঁ হয়ে আছে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন