আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আরেকজনের কল্লা কাটা নয়, আরেকজনকে গালি দেয়া নয়, আরেকজনকে নাস্তিক কাফের বলা নয় বরং নিজেকে ঠিক করাটা জরুরী। আমি বিশ্বাস করি, ইসলামের সবচেয়ে বড় জিহাদ নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। নিজের ভেতরের পাপ আর লোভকে সংবরণের জিহাদ।

মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। তাহলে বলেন তো এই যে ওয়াজ মাহফিলের নামে মিথ্যাচার হচ্ছে তার পরিনাম কী? এই যে বিল গেটস, নাসা, অক্সফোর্ডের টিচারের নামে মিথ্যাচার হচ্ছে তাতে কী ইসলামের মর্যাদা বাড়ছে? কোরান হাদিস কী বলে? মুমিন ভাইয়েরা ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমি যতোটা জানি, মিথ্যা ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও হারাম গোনাহগুলোর অন্যতম।

নিজের ন্যায়বোধ আর কোরআন হাদিস পড়ে যতোটা বুঝতে পারি, ইসলামে মিথ্যার কোন স্থান নেই। আর সবচেয়ে জঘন্যতম মিথ্যা হলো- আল্লাহ বা তার রাসূল (সা.)-এর নামে, হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে মিথ্যা বলা। এরপর জঘন্যতম মিথ্যা হলো- মিথ্যার মাধ্যমে কোনো মানুষের অধিকার নষ্ট করা। সম্পদ দখল করা। এমনকি মানুষকে হাসানোর জন্যও নাকি মিথ্যা বলা জায়েজ নয়।

কোরানে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সুরা নাহাল, আয়াত: ১০৫)। তাহলে কেন এতো মিথ্যা চারপাশে!

আমরা অনেকেই সেই ঘটনার কথা জানি। একদা এক পাপিষ্ট মহানবী (সাঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে বললো, হে রাসূলুল্লাহ! আমি সবরকম অপরাধের সাথে যুক্ত। আমি কীভাবে এ চরম পাপাসক্তি থেকে রেহাই পেতে পারি? লোকটির কথা শ্রবণ করে মহানবী (সাঃ) বুঝলেন, সত্যি সত্যি লোকটি সৎপথে আসার উপায় খুঁজছে। মহানবী (সাঃ) বললেন, তুমি আজ থেকে মিথ্যা কথা বলা ত্যাগ কর। দেখবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হলোও তাই।

ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের তো আমি মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখি না। বরং নানাভাবে অনেকেই মিথ্যা বলেন। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা পরিহার করা ও সত্য বলার বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে। একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকে। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬০৭)।

ধর্মকে ব্যবহার করে চলছে জঘন্য মিথ্যাচার!

আবারও বলছি, মিথ্যা ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও হারাম গোনাহগুলোর অন্যতম। মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। কৌতুক করেও মিথ্যা বলা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’ -তিরমিজি ও আবু দাউদ।

এবার বলুন, ওয়াজ মাহফিলের নামে প্রায়ই যেসব মিথ্যা বলা হচ্ছে তার পরিনতি কী? আর আল্লাহ বা তার রাসূল (সা.)-এর নামে, হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে মিথ্যা বলা যেখানে মহাপাপ, সেখানে কী হবে? ইসলাম প্রচারের জন্য তো মিথ্যার দরকার নেই। ইসলামে যা আছে তাই তো যথেষ্ট। কথায় কথায় যারা ইসলামের কথা বলে আরেকজনের গলা কাটতে চান তাদের তো ওয়াজ মাহফিলের নামে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখি না‌

আচ্ছা আপনারা বলেন তো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন জিনিষটা মানুষকে আকৃষ্ট করতো? নিশ্চয়ই তার আখলাক ও সত্যবাদিতা। আচ্ছা বলেন তো কথায় কথায় আপনারা যারা ইসলামের কথা বলেন বলেন তো ব্যাংকের সুদ খান কেন? আচ্ছা বলেন তো ঘুষ খাওয়া যেখানে হারাম সেখানে কেন এই দেশ ঘুষ লেনদেনে শীর্ষে? মুসলমান হয়েও কেন দুর্নীতি করেন? গীবত হারাম জেনেও কেন সারাক্ষণ গীবত করেন?

আমাকে মাঝে মধ্যেই ফেসবুকে অনেকে ইসলামের জ্ঞান দেন। আপনাদেরকে বলি, আমি সবসময় মিথ্যা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। জেনে বুঝে মিথ্যা না বলার চর্চা করি। ব্যাংক টাকা জমিয়ে সুদ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকি। সৎভাবে বাঁচার শতভাগ চেষ্টা করি। গীবত আমার দুচোখের বিষ। ধর্ম চর্চাকে আমি একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় মনে করি। তাই আপনাদের জবাব দেই না। তবে আমার মনে পড়ে না, আমি ঠিক কবে কোন ওয়াক্ত নামায বাদ দিয়েছি। তবে আমার কাছে সবার আগে মানুষ।

আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আরেকজনের কল্লা কাটা নয়, আরেকজনকে গালি দেয়া নয়, আরেকজনকে নাস্তিক কাফের বলা নয় বরং নিজেকে ঠিক করাটা জরুরী। আমি বিশ্বাস করি, ইসলামের সবচেয়ে বড় জিহাদ নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। নিজের ভেতরের পাপ আর লোভকে সংবরণের জিহাদ।

আমি তাই সবরকম অসততা, মিথ্যা, লোভ, পাপ, গীবত থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি সবাইকে ক্ষমা করে দিতে। কারণ, আমার আদর্শ রাসুলুল্লাহ (সা.)। আর আমি মুসলমান। আমি বাঙালিও। এই বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। আর আমি মনে করি সবার উপরে মানুষ। হোক সে যে কোন ধর্মের, বর্ণের বা বিশ্বাসের।

আচ্ছা বলেন তো আশরাফুল মাখলুকাতের চেয়ে বড় আর কী হতে পারে? আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বোধ দিন। আমরা যেন মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে পারি। মানুষ হয়ে আমরা যেন মানুষের সেবা করতে পারি। নয়তো যতোই ধর্মের কথা বলেন, যতো বড় ধার্মিক হোন জীবনটাই যে বৃথা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা