কি করে মেয়েদের দমাবেন বলেন? ফতোয়া দিবেন? এসিড মারবেন? পতিতা পল্লিতে ফেলে দেবেন? আগুনে পোড়াবেন? ট্রল করবেন?
জীবনে প্রথম টিকটক বিষয়টা আমার পছন্দ হয়েছে। একটা ভিডিও দেখলাম যেখানে, একটা এসিড দগ্ধ মেয়ে, হিন্দি গানের সাথে ঠোট মিলিয়ে অভিনয় করছে! সেই অভিনয় ‘ছেলে মানুষী’ টাইপের সরল, অথচ চোখ ভেজানো সুন্দর। মেয়েটার নাম ‘লক্ষ্মী আগারওয়াল’
দীপিকার নতুন সিনেমা ‘ছপাক’, এর রিয়েল লাইফ হিরো, এই ‘লক্ষ্মী আগারওয়াল'। মাত্র ১৫ বছরের মেয়েটাকে এসিড থামিয়ে দিতে পারেনি। ঝলসানো মুখে, ঝলমলে হাসি লেপ্টে সে বলেছিল, “লোকটা আমার উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে , আমার স্বপ্নের উপরে তো নয়।’'
আসলেই তো তাই! লক্ষ্মীর স্বপ্ন ছিল, ভারতে প্রকাশ্যে এসিড বিক্রি বন্ধ হবে। সেই লক্ষ্যেই ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল #স্টপসেলএসিড। সেই ক্যাম্পেইন এবং তার করা পিটিশনের উপর ভিত্তি করে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট রুলস জারি করে, ভারতে প্রকাশ্যে এসিড বিক্রি বন্ধ করেছে।
নাহিদ আফরিন, ১৬ বছরের মেয়েটার বিরুদ্ধে ৪৬ টা ইসলামিক এক্ট্রেমিষ্ট গ্রুপ ফতোয়া জারি করেছিল, ‘হয় গান ছাড়ো অথবা মেরে ফেলব।’ নাহিদ সেই মোল্লাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল , 'গানের মধ্যে আমি আমার ‘খোদা’ কে খুঁজে পাই , আমি তো গান গাওয়া ছাড়ব না।' নাহিদ গান ছাড়েনি, এরই ধারাবাহিক সাফল্যে, বর্তমানে ভারতীয় সিনেমায় তার গান যথেষ্ট জনপ্রিয়। অনেকেই মনে করেন, আমির খানের ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ সিনেমার ইন্সপারেশন হল, নাহিদ আফরিন ।
হাজেরার বয়স তখন ১০, যখন তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে লেখাপড়া শেখা শুরু করেন, তারপর পতিতাবৃত্তি ছেড়ে এনজিও তে কাজ নেন। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু হাজেরা বেগম শুধু নিজের কথা ভাবেননি, ভেবেছিলেন অন্য যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের কথা। সেই বাচ্চাদের জীবন যেন তাদের মায়েদের মত না হয়, সেটা ভেবেই একটা আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ইতিমধ্যে হাজার খানেক বাচ্চার জীবন গড়ে দিয়েছেন তিনি, পথ তো আরও অনেক বাকি।
‘পরিবেশ বাঁচাও, নইলে পৃথিবী বাঁচবে না’
এই কঠিন সত্যতা অনুভব করে ১৬ বছরের গ্রেটা থানবার্গ, একাই একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সুইডিশ পার্লামেন্ট এর সামনে বসে গিয়েছিল। এখন সারা পৃথিবী হাঁটছে তার পেছনে। অথচ এই পিচ্চি মেয়েটা কে ট্রল করেছে স্বয়ং ট্রাম্পও।
আচ্ছা আর কত নাম বলব? মালালা, নাদিয়া মুরাদ? ইতিহাস এর দিকে তাকাতে বলবেন? সেখানে আছে রাণী লক্ষ্মী বাঈ, রানী ব্যুদিক্বা, জোয়ান অফ আর্ক, হাইপেশিয়া, আনা ফ্রাঙ্ক... কি করে মেয়েদের দমাবেন বলেন? ফতোয়া দিবেন? এসিড মারবেন? পতিতা পল্লিতে ফেলে দেবেন? আগুনে পোড়াবেন? ট্রল করবেন?
লাভ নাই। টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি দিয়ে, পেট্রিয়ার্কিক সোশ্যাল ম্যানিপুলেশন দিয়ে কিংবা এক্সট্রিমিজম এর দাবানল দিয়েও দমাতে আসলে পারবেন না। মেয়ে হিজাব পরেও গান গাইবে, নাচবে, গীটার বাজাবে। ঘরে আটকে রাখবেন? সে ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ হয়ে দেখিয়ে দেবে। এসিডে ঝলসে দেবেন? হাসতে হাসতে বলবে, পারলে আমার স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। ঋতুস্রাব, স্যানিটারি প্যাড নিয়ে ট্রল করবেন? করুন। মেয়েদের সেন্স অফ হিউমার সেই লেভেলের ভালো। তখন তারা মুচকি হেসে বলবে, 'আমাদের স্যানিটারি প্যাডেও ‘উইংস’ আছে, কি করে আমাদের উড়ে যাওয়া থামাবেন!'