নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ান, নিপীড়ককে ঘৃণা ও প্রতিহত করুন।

নারী ও নিরাপত্তা, এ শব্দ দুটি একইসাথে একই লাইনে যেতে চাইবে না লজ্জায়। কারণ, সে পরিবেশটাই এখন আর নেই।

ঘরে বাইরে নারীরা কতটুকু নিরাপদ বোধ করেন?

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড তাদের এক জরিপে বলছে, বাংলাদেশের ৮০% এর বেশি নারী রাস্তায় চলার পথে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এদের একটি বড় অংশ নিরাপত্তাহীনতার কারণে গণপরিবহন এড়িয়ে চলেন। ব্যুরো অফ ষ্ট্যাটিসটিকসের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৭০% এর বেশি নারী নিজ পরিবারেই স্বামীর নির্যাতন সহ নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার হয়ে নীরাপত্তাহীন জীবন যাপন করেন। সাথে রয়েছে নিকটাত্মীয়র কাছে যৌন নির্যাতনের ঘটনা। অথচ, মাত্র ২% শতাংশ নারী আইনের দ্বারস্থ হোন। বিচার এবং প্রতিকার তো টাইম ট্রাভেলের মতো জটিল ব্যাপার। লিঙ্গ বৈষম্য আর অশিক্ষার কারণে ঘরে বাইরে কোথাও বাংলাদেশের নারীরা এখন আর নিরাপদ নয়।  

প্রতিদিন হাজারো প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এগিয়ে চলেছে নারী

নারীর জন্য গণপরিবহণ কতটা নিরাপদ? 

এক্ষেত্রে মেয়েদের বিশেষ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন লোকাল বাসে গায়ের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ানো। বাসের ভিতর হেল্পারের খারাপ ব্যবহার। চলতি পথে ইভটিজিং। এরকম অনেক ঘটনাই ঘটে। প্রতিবাদ করতে গেলে লোকজন বলে মেয়েটাই খারাপ। এজন্য কিছু না বলে চুপ করে থাকা ছাড়া নারীদের কিছু করারও থাকে না। নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় শহরে চলাচলেই সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তারা। ইদানিং গণপরবহণে ধর্ষণের প্রবণতা প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আমাদের নারীরা কোথায় নিরাপদ?

এই প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর, কোথাও না। পথে ঘাটে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে- কোনো জায়গাতেই না। ভাবছেন, নিজের পরিবারে? ভুল! উন্নয়নকর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড় উৎস নিজের পরিবার। কিন্তু তা স্বত্বেও তারা কিন্তু অনেক কিছু গোপন করে যায়। কারণ তাদের ভিতরে কিছু আশংকা কাজ করে যে যদি কিছু বলে তাহলে স্বামী তাকে ছেড়ে দেবে বা বাচ্চার কাস্টডি পাবে না। সংসারে ছেড়ে দিলে সে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবে? এই আশ্রয়হীনতায় তারা নির্যাতনের কথা বেশিরভাগ সময় চেপে যায়।

নারী নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের ভাবনা কী? 

এ নিয়ে আমাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই। আমরা সবকিছু চাপিয়ে দিতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এই চাপিয়ে দেয়া সমাজের কুৎসিত চেহারা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে। সামাজিক গণমাধ্যমে নারীর ‘মি টু’ আন্দোলনও এ সমাজের মুখোশ খুলে দিয়েছে। যেকোনো নারী আন্দোলনে প্রথম বিশ্বের নাগরিক সমাজ যতোটা সোচ্চার, আমরা ততোটা নই। কারণ সমাজের আরোপিত মূল্যবোধ নারীর কথা বলার অধিকারকেও সীমিত করে দিয়েছে। আমাদের মা বোনদের কথা ভাবলে কিছুক্ষণের জন্যে মন খারাপ হলেও, পরক্ষণেই আমরা সব ভুলে যাই। এরপর আমাদের আর কোনো ভাবনা নাই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা