হাজার হাজার নেগেটিভিটির ভীড়ে 'ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ', এর এই উদ্যোগ সত্যিই মন ভালো করে দেয়ার...

নিউজপেপার খুললেই, টিভি অন করলেই আমরা আজকাল অজস্র ঋণাত্মক খবরের স্রোতে ভেসে যাই। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যেই সন্দেহ তৈরী হয়, এ দেশে কী মোটেও ভালো কিছু হচ্ছেনা? চারপাশে এত নেগেটিভিটি কেন? এরকম সময়গুলোতেই আবার এরকম দুয়েকটা সংবাদও আমরা পাই, মন ভালো হয়ে যায়। বিদ্যানন্দের ১টাকায় আহার, বিভিন্ন জায়গায় 'সততা স্টোর' এর সফল কার্যক্রম দেখে মনে হয়, না! দেশটা এখনো নরক হয়ে যায় নি। এখনো ভালো মানুষ আছে এ দেশে। সেরকমই ভালো কিছু মানুষের একটি উদ্যোগের কথা জানাই আজ। একটি হোটেলের কথা বলি, যে হোটেলের নাম: ভালো কাজের হোটেল। যেখানে পেট ভরে দু মুঠো ভাত খাওয়া যায়। এবং সেটি খাওয়া যায় অবশ্যই বিনামূল্যে।

তবে হোটেল বলতে আমরা যেরকম ভাবি, এ হোটেল মোটেও সেরকম না। নেই বসার চেয়াল টেবিল, নেই ক্যাশ কাউন্টার। কিছুই নেই। বসার জন্যে আছে উঁচু চাতাল এবং তার পেছনে একটি প্রশস্ত দেয়াল। সে দেয়ালে বড় বড় হরফে লেখা; ভালো কাজের হোটেল। দেয়ালের সামনে ক্ষুধার্ত, অপেক্ষমাণ মানুষের সারি। তবে এখানে খাবার ফ্রি'তে খাওয়া গেলেও একটা শর্ত আছে। খাওয়ার আগে অবশ্যই 'ভালো কাজের হোটেল' এর স্বেচ্ছাসেবকেরা জিজ্ঞেস করবেন, সারাদিনে কী কী ভালো কাজ তিনি করেছেন। যে কোনো একটা ভালো কাজ করলেই এখানে মিলবে খাবার। কী সুন্দর কনসেপ্ট। তাই না?

‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংঠনের সদস্যেরা চালাচ্ছেন এই হোটেল। আগে তারা 'ভালো কাজের বিনিময়ে আহার' প্রকল্প চালু করেছিলেন। সেখানে নিয়মিত তারা দুইশো থেকে আড়াইশো মানুষকে খাওয়াতেন। সেখান থেকেই তারা এই হোটেল করার চিন্তাভাবনা করেন। এরপরেই শুরু হলো 'ভালো কাজের হোটেল'। সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের ছয়দিন এই হোটেলে মানুষকে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো হয়। ছুটির দিনে অর্থাৎ শুক্রবারেও তারা বসে থাকছেন না। সেদিন স্বেচ্ছাসেবকেরা ছুটছেন এতিমখানাতে।  এতিমদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবারের প্যাকেট। এভাবেই সপ্তাহব্যাপী ভালো কাজের বিনিময়ে খাবার' এর ব্যবস্থা চালু করেছে 'ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ' এর এই সদস্যেরা।এভাবেই প্রতিদিন প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো মানুষকে খাওয়াচ্ছেন তারা।

তো, এবার প্রশ্ন আসতে পারে, এই যে বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করছে এই ভলান্টিয়াররা, টাকা কই থেকে আসছে? 'ডেইলি টেন মেম্বার' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ তাদের ফেসবুক পেইজে যে হাজার হাজার মানুষ আছেন, তাদের মধ্যে কিছু মানুষ নিয়মিত ১০ টাকা করে দিচ্ছেন এই সংগঠনটিকে। সেই টাকা, কিছু মানুষের এককালীন সাহায্য ও বাকিদের অদম্য ভালোবাসায় কাজ করে যাচ্ছে 'ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ' নামের এই সংগঠন। এবং তাদের ইচ্ছে, সামনের দিকে আরো ভালো কিছু করার।

যে দেশের তরুণ সমাজের অধিকাংশই বেকারত্বের সমস্যায় বিপর্যস্ত, অনেকেই হাত বাড়িয়েছে নিষিদ্ধ সব বস্তুতে, অনেকে পরিণত হয়েছে দেশের জন্য বিপজ্জনক বস্তুতে, সে সময়টিতে দাঁড়িয়ে এই তরুণদের গল্পগুলো, তাদের মানবিক কাজগুলো দেখলে প্রশান্তি আসে। মনে হয়- এরা থাকলেই দেশ ভালো থাকতে বাধ্য। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে বাধ্য।

এদের মঙ্গল হোক। মানুষের কল্যানে ছুটে চলা হোক নিরন্তর ও নিরবিচ্ছিন্ন। এটাই প্রত্যাশা। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা