এদের জীবনীশক্তি যোগাচ্ছে আমাদের মতোই সাধারণ ইউজার। যারা বুঝে কিংবা না বুঝেই তাদের ভিউ বাড়াচ্ছি, তাদের শক্তিশালী করছি দিনকে দিন। এখন এই ইনফ্লুয়েন্সারেরা চাইলেই বিলিয়ন ডলার কোম্পানির ভিত্তি নাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে।

সোশাল মিডিয়ার যুগে ইউটিউব কিংবা টিকটক এর সাথে পরিচিত নন, এমন নেটিজেন খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে, এই দুই জায়েন্ট সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিশ্বযুদ্ধ!

ফলাফল, বিলিয়ন ডলার কোম্পানি টিকটকের রেটিং গুগল প্লেস্টোরে ৪.৫ থেকে সরাসরি নেমে এসেছে ১.৩ এ। এপেল এপ স্টোরে যদিওবা রেটিং অপরিবর্তিত আছে। আসুন জেনে নেয়া যাক, এই ঘটনার পেছনের গল্প। কীভাবে কী হলো।

যেভাবে শুরু হলো ইউটিউব-টিকটক যুদ্ধ!

ঘটনার সূত্রপাত, আমির সিদ্দিকি নামের এক টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারের ভিডিওর মাধ্যমে। তিনি একটি ভিডিও পোষ্ট করে দাবী করেন- ইউটিউবারেরা তাদের ভিডিওর মাধ্যমে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। অযথাই টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যঙ্গ করে কনটেন্ট তৈরি করছেন।

এতে কিছু ইউটিউবার রেগে যায়। তারা টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের রোস্ট করা শুরু করে। সেই কফিনের শেষ পেরেকটা পুঁতে দেন ক্যারিমিনাটি খ্যাত ইউটিউবার অজয় নাগার। তিনি গত ৮ই মে ইউটিউব ভার্সেস টিকটক- দ্য এন্ড শিরোনামে একটি রোস্টিং ভিডিও পোষ্ট করেন। যেটা অল্প সময়েই চল্লিশ মিলিয়ন ভিউ প্লাস হয়, এবং লাইক পড়ে প্রায় সাত মিলিয়ন। কোনো নন মিউজিকাল ভিডিওর ক্ষেত্রে এটা ইউটিউব রেকর্ড। ভিডিওতে বেশি গালাগালি থাকায় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সেটা রিমুভ করে দেয়।  

ক্যারিমিনাটি ও আমির সিদ্দিকি 

কেন প্লেস্টোরে টিকটকের রেটিং ধসিয়ে দিচ্ছে ভারতীয়রা?

ক্যারিমিনাটির সেই টিকটক রোস্টিং ভিডিওটা গত ১৪ই মে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ডিলিট করে দেবার পর থেকেই মূলত টিকটকের রেটিং কমানোর খেলা শুরু হয়। ব্যান টিকটকের হ্যাশট্যাগে ভেসে যেতে থাকে টুইটার। বড় বড় সেলিব্রিটিরাও এর সাথে একাত্মতা জানায়। ক্যারিমিনাটির ফ্যানবেইজের সাথে যুক্ত হয় বাকীরাও, শুধু ভারতই নয়, বাইরের দেশের নেটিজেনরাও এতে সামিল হয়। পুরো ব্যাপারটা ঘটে মাত্র কয়েকদিনেই। বিলিয়ন ডলার কোম্পানিকে এভাবে এর আগে কেউ নাকানি চুবানি খাওয়ায়নি।   

ইউটিউবার আর টিকটকারদের ভিডিও পাল্টা ভিডিও চলতেছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। রোস্টিং পাল্টা রোস্টিংও বলা চলে। তবে সেটা এতোটাও সিরিয়াস ছিলো না প্রথমে। ক্যারিমিনাটির ভিডিওটি পোষ্ট এবং ডিলিট হবার পর থেকেই অনলাইন জগতে শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ!

এরই মাঝে, গত ১৮ই মে আরেক টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার ফাইজাল সিদ্দিকি যাকে সবাই ফাইসু নামে চেনে, তিনি মেয়েদের ওপর এসিড এটাক সাপোর্ট একটি ভিডিও পোষ্ট করেন। তার দুইদিন পর ২০ই মে টিকটক কর্তৃপক্ষ সেই ভিডিও ডিলিট করে ফাইসুর একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। এই ফাইসু হচ্ছে সেই আমির সিদ্দিকির ভাই। এতে করে জল আরো ঘোলা হয়। আর সেই থেকে টিকটকের রেটিং কমতে শুরু করে।

এখনো সেই যুদ্ধ চলছে...

উল্লেখ্য, ইউটিউবে প্রায়ই এরকম যুদ্ধ হতে দেখা যায়। এর আগে পিউডিপাই এবং টি সিরিজের মাঝে ফলোয়ার বাড়ানোর যুদ্ধটা নজর কেড়েছিলো নেটিজেনদের। এখানে বলা বাহুল্য, পিউডিপাই ছিলেন ইউটিউবের একচ্ছত্র অধিপতি, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাবস্ক্রাইবারওয়ালা ইউটিউব চ্যানেল। বর্তমানে যে জায়গায়টি দখল করেছে ভারতীয় প্রোডাকশন কোম্পানি টি সিরিজ। যদিও উভয়পক্ষই ছাড়িয়েছে একশো মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের মাইলফলক!

এই সেই পিউডিপাই যাকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো জায়ান্ট মিডিয়া হাউজ পর্যন্ত দমাতে পারেনি। দুষ্টুমি করে হিটলারের নাজি সাইন ব্যবহার করায়, সরাসরি সংবাদ শিরোনাম করে তাকে দুষেছিলো ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। জবাবে একটি ভিডিও পোষ্ট করে সেখানে মধ্যমা দেখি পিউডিপাই বলেছিলেন- ট্রাই হার্ডার!

২০১৯ সালে ভারত সরকার যখন টিকটক এপসটি ব্যান করে দেয়, তখন প্রাথমিকভাবে টিকটকের দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ছিলো পাঁচ লাখ ডলার। এখন হিসেব করে দেখুন, শুধু মাত্র একটা রোস্টিং ভিডিওর জন্য টিকটকের রেটিং থেকে নিয়ে শুরু করে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে।

এই হচ্ছে বর্তমানে ইউটিউবার বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষমতা। যেটা একই সাথে আশাব্যঞ্জক এবং হতাশাজনকও বটে। টিকটক এপ এর ডাউনলোড সংখ্যা দুই বিলিয়নেরও বেশি। যার মধ্যে ৬১১ মিলিয়নই ভারতীয়দের করা। এই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারেরা রীতিমত জায়েন্টে পরিণত হয়ে গিয়েছে বর্তমানে।  

আর তাদের জীবনীশক্তি যোগাচ্ছে আমাদের মতোই সাধারণ ইউজার। যারা বুঝে কিংবা না বুঝেই তাদের ভিউ বাড়াচ্ছি, তাদের শক্তিশালী করছি দিনকে দিন। এখন এই ইনফ্লুয়েন্সারেরা চাইলেই বিলিয়ন ডলার কোম্পানির ভিত্তি নাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। এখন ভেবে দেখুন, ভাবার প্র্যাক্টিস করুন। নিজের পয়সা এবং সময় খরচ করে কাদের ক্ষমতাবান বানাচ্ছেন। তারা এই দায়ভার মেটাতে পারবে তো?    

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা