উনিশ বছর বয়সে জন্মস্থান জেদ্দা থেকে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সুইডেনে। পড়াশোনা করতে করতেই ঘটনাবশত তিনি হয়ে গেলেন গায়িকা। মাত্র দুই বছরের মাথায় বিশ্বজুড়ে পরিচিত এক মুখ হয়ে গেলেন জারা! যিনি তার গান, পোশাক, কথাবার্তা নিয়ে ব্যাপক আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত, নন্দিত।

সৌদি আরবের রক্ষনশীল পরিবারে জন্ম নেওয়া একটি মেয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাড়ি জমায় সুইডেনে। প্রথম প্রথম যখন সুইডেনে আসে, সেখানকার উদার পরিবেশের সাথে সৌদি আরবের পরিবেশের ব্যাপক বৈপরীত্য দেখে কিছুটা হকচকিয়ে যায় সে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই হতচকিত ভাব কেটে যায় তার। প্রথমদিকে বন্ধুবান্ধবও ছিলো না কেউ। সারাদিন লেখালেখি নিয়েই থাকতো সে। সেখান থেকেই অ্যাক্সিডেন্টালি গানে চলে আসা।

রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে একটা গুজব আছে। অনেকেই জানেন। তাও বলছি। একবার এক ময়রা কাঁচাগোল্লা বানিয়ে সারি করে  রাখছিলো টেবিলে। এরমধ্যে একটি কাঁচাগোল্লা ময়রার হাত ফসকে পাশের ফুটন্ত চিনির শিরার কড়াইয়ের মধ্যে পড়ে যায়। শিরায় ডুবে কাঁচাগোল্লা হয়ে যায় রসগোল্লা। সেখান থেকে উৎপত্তি হয় রসগোল্লার। এভাবেই আমাদের গল্পের উনিশ বছরের মেয়েটিও একদিন সকালে বসে বসে লেখালেখি করছিলো। এরমধ্যেই পাশের কোনো একটি জায়গা থেকে বাদ্যযন্ত্রের প্রবল শব্দ শুরু হয়। মেয়েটিও কম যায় না। সেও তখন বাদ্যযন্ত্রের সাথে তাল রেখে নিজের লেখা জোরে জোরে পড়তে শুরু করে। হঠাৎ সে আবিষ্কার করে, মিউজিকের সাথে লেখার লাইনগুলো বেশ ভালোই যাচ্ছে। এরপরই সে শুরু করে গান গাওয়া।

বলছি আরব র‍্যাপার জারার কথা। অনেকেই তাকে চেনেন। অনেকে হয়তো তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টের ফলোয়ার অথবা ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার। জারার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিঙ্গেল ট্র‍্যাক '৯৬৬' সৌদি আরবে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সৌদি আরবের পাশাপাশি অনেক দেশেই জনপ্রিয় তিনি।  সবাই তাকে 'র‍্যাপার জারা' নামে ডাকে। যদিও জারা নিজের এই 'র‍্যাপার' পরিচয়ে খুশি না। তিনি নিজেকে মিউজিশিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মাত্র দুই বছরের ক্যারিয়ারে তিনি এরমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার গানের অ্যালবাম বাজারে এলেই এখন নিমেষের মধ্যে সেল হয়ে যায়! এতটাই প্রবল প্রভাব এখন তার! 

গানের পাশাপাশি ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও স্বকীয় চিন্তাভাবনা তার! 

সুইডেনে না যাওয়া হলে এরকম 'তারকা' হওয়া হতো কী না তার, জারা নিজেও জানেন না। সুইডেনে আসার পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকমের মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে। তাদের সাথে কথাবার্তা, মেলামেশা, সংস্কৃতির আদানপ্রদানের ফলশ্রুতি হিসেবেই জারার মধ্যে আলাদা একটি সত্তা গড়ে উঠেছে। নিয়মিত লেখালেখিও করতেন। এরপরের গল্প তো বললামই। উচ্চস্বরের বাদ্যযন্ত্র, জারার কলম আর শেষে এসে জারার গান দিয়ে আত্মপ্রকাশের গল্প।

জারা চার বছর সুইডেনে থাকার পরে এরপর আবার জন্মস্থান জেদ্দাতেই ফিরেছে। গানবাজনার পাশাপাশি সে এখন ফ্যাশন নিয়েও কাজ করছেন৷ নিজের ফ্যাশনের একটি নতুন স্টাইল নিয়েও কাজ করছেন তিনি; হুডজাবি। হুডি কে হিজাবের মত পড়ার স্টাইল। যদিও এই স্টাইল নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করে। তবে এসব খুব একটা গায়ে মাখেন না জারা। সৌদি আরবের সঙ্গীতজগত নিয়েও খুব একটা উচ্চাশা নেই জারার। এজন্যে তিনি চেষ্টা করছেন, সৌদির মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি'কে আরেকটু উচ্চস্থানে নিয়ে যাওয়ার। এখনকার সৌদি মিউজিশিয়ানরা যদি বিশ্বমানে যেতে চায়, তাহলে তাদের আরো অনেকদূর পরিশ্রম করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

যদিও তার গান, তার পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে সৌদি আরবে বেশ আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। নিয়মিত করা হচ্ছেও। তবে জারা এগুলোতে ভ্রুক্ষেপ করেন না। মানুষের প্রথাগত কট্টর মানসিকতা তিনি পাল্টাতে আসেননি। তিনি গান গাইতে চান৷ তিনি সেটাই করেন মন দিয়ে। তিনি চান সামনের সময়গুলোতে গান নিয়েই থাকতে। গান দিয়ে সৌদি আরবকে বিশ্বমঞ্চে তুলতে।

'জারা' শব্দের অর্থ 'সবচেয়ে ভালো।' গায়িকা ও ফ্যাশন স্পেশালিষ্ট জারা আসলে কতটা ভালো অথবা সবার মধ্যে ভালো কী না, তা সময়ই বলবে। তবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার যে এই পথচলা, সেটার জন্যে যে সাহসটুকু দরকার, তা তার আছে। এবং সেভাবেই তিনি এগোচ্ছেন। বিশ্বে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তেইশ বছরের সেই মিউজিশিয়ান, যিনি বলেন-

গান গাওয়াটা আমার কাছে অক্সিজেনের মত। এটাই করতে চাই সবসময়।

জারার জন্যে শুভকামনা রইলো।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা