টিএসসি থেকে শিশু জিনিয়াকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো অজ্ঞাত একাধিক মহিলা। এই ঘটনার পরেই জিনিয়াকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নেমে পড়ে এক তরুণ, যার প্রচেষ্টাতেই পুলিশ এত দ্রুত জিনিয়াকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে...

গত বেশ কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছিলো একটি ছোট্ট শিশু হারিয়ে যাওয়ার গল্প। শাহবাগ থেকে এক সকালে হারিয়ে যায় ফুলবিক্রেতা জিনিয়া। পত্র-পত্রিকা বা টিভিতে জিনিয়াকে নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি না করা হলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় অজস্র মানুষজন এই ঘটনাটি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। জিনিয়া হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক মানবিক মানুষই আক্ষেপ করছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত লিখছিলেন। স্বস্তির ব্যাপার, শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার সপ্তাহখানেক পরেই আবার ফিরে আসে মায়ের কোলে। 

জিনিয়া'কে উদ্ধারের ক্ষেত্রে পুলিশের যে অবদান ও তৎপরতা, সেটিকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হবে। সে সাথে আরেকটি তথ্যও জেনে রাখতে হবে- জিনিয়া উদ্ধার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলো একজন তরুণের নামও। বলতে গেলে যাকে আমরা কেউই চিনি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত চৌধুরী। যখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন শিশু জিনিয়া নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে, তখন তিনি তার মত অনুসন্ধান শুরু করেন, নিজের তাগিদেই।

টিএসসি এলাকা সংলগ্ন সিসিটিভি ফুটেজগুলো চেক করেন তিনি। স্থানীয় মানুষজনদের সাথে কথাবার্তা বলেন। অনেকরকম ডিটেইলস জোগাড় করে তিনি পুলিশের কাছে যান। তাদের কাছে সব তথ্য সরবরাহ করেন। পুলিশ এই তথ্যের সাথে তাদের নিজেদের কিছু তথ্য যোগাড় করে এরপর জিনিয়া'কে খুঁজে পেতে সক্ষম হন।

এখন এই ঘটনাকে অনেকেই হয়তো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাববেন না। কোনো একটা বাচ্চা নিখোজ হওয়ার পরে একজন তরুণ সেই নিখোজ বিষয়ক কিছু তথ্য জোগাড় করেছে এবং তা পুলিশকে দিয়েছে। এটা অতটা অভূতপূর্ব  কোনো ঘটনাও না। এরকম প্রতিদিনই হচ্ছে। তবে যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে, সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে, নিজের পরিশ্রমে এই কাজটি আরাফাত করেছে। অনেকটা 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ' তাড়ানোর মত করে বলা যায় বিষয়টিকে। কিন্তু আরাফাত ঠিক এখানেই সবার থেকে পৃথক। সবাই যেখানে ফেসবুকে একটা লেখা লিখেই 'দায়িত্ব শেষ' ভেবে চলে গিয়েছেন, আর কোনো চিন্তা করেননি জিনিয়ার উদ্ধারের ব্যাপারে। সেখানে আরাফাত নিজে নিজে অনেক কিছুই করেছেন। অনেক তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করেছেন। নিজে যতটুকু পারেন, একা একা ঠিক সেটুকুই করে গিয়েছেন তিনি। কে কী করবে সে আশায় বসে না থেকে, দায়িত্ববোধ নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তিনি।

তাছাড়া যেখানে পুলিশ থাকে, সে স্থান থেকে একশো হাত দূরে থাকা আমাদের অভ্যাস। সেখানে এই তরুণ লেগেই ছিলেন পুলিশের সাথে। সারাক্ষণই যেভাবে পারেন তথ্য দিয়ে গিয়েছেন। পুলিশও স্বীকার করেছেন- আরাফাত থাকাতেই জিনিয়া'কে তাড়াতাড়ি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পুলিশ চান, তাদের কাজে মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিয়মিত বাড়ুক। একসাথে মিলেই ভালো কাজ করতে চান সবাই।

আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা ও ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের তরুণসমাজ নিয়ে আমাদের আক্ষেপও বরাবরই বেশি। সেরকম সময়ে দাঁড়িয়ে আরাফাত চৌধুরীর গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এদেশের তরুণেরা যদি সংকটে শক্তপোক্ত হয়ে দাঁড়ান, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অনুপ্রেরণা ও মানবিকতার বার্তা দেন, তাহলেই দেশের ও দশের মঙ্গল, এটা তো দিনের আলোর মতই ধ্রুব সত্য।

আরাফাত চৌধুরীর এই কাজের প্রশংসা করা উচিত আমাদের প্রত্যেকের। এভাবেই আমাদের ছোট ছোট উৎসাহ ও প্রশংসায়,  ভালো কাজে মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমশই বাড়বে, মানুষে মানুষে সম্প্রীতিও বাড়বে। পৃথিবী হবে পারস্পরিক সাম্যাবস্থার এক মহা মিলনক্ষেত্র।

ধন্যবাদ, আরাফাত চৌধুরী। স্রোতের বিপরীতে হাঁটার জন্যে। মানবিক হবার জন্যে।

ছবি ও তথ্য কৃতজ্ঞতা- বিবিসি বাংলা

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা