মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর নির্দেশ এলো, মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, আক্রান্ত ও বিদেশফেরত যারা, তাদের সবার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মাঠে থাকতে হয়েছে আমাকে, এবং নিয়মিত অফিসও করতে হয়েছে।
একই সময়ে মুজিববর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পঞ্চাশ লক্ষ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচির আওতায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পঞ্চাশ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য গঠিত তালিকা যাচাইয়ের কাজটা আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করেছি। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গরীব ও দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। অসাবধানতাবশত কখন, কিভাবে, কার মাধ্যমে সংক্রমিত হলাম বুঝতেই পারিনি।
যখন দেখলাম শরীরে হালকা জ্বর, সর্দি, কাশি অনুভূত হচ্ছে তখনই দেরি না করে করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল পাঠালাম। ১৬ই মে রিপোর্ট এলো, করোনা পজিটিভ। তারপর থেকে হোম আইসোলেশনে ছিলাম। রিপোর্ট হাতে আসার পরে একরকম হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছিল। একটানা ৫-৬ দিন ১/২ ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারিনি। বার বার মনে হয়েছে ঘুমিয়ে পড়লেই না জানি কি হয়ে যায়। যেহেতু রোগটা নতুন, আর এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক নেই, একারণেই মূলত আতঙ্কটা জন্ম নিয়েছিল।
তবে সময়ের সাথে সাথে সেই আতঙ্ক ঝেয়ারে ফেলেছি, নিজেকে শক্ত করেছি, সাহস সঞ্চার করেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মনোবলটা সবচেয়ে বেশি দরকারী। আমার করোনা জয়ের প্রথম হাতিয়ার ছিলো নিজের মনোবল। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিয়মিত বেশ কয়েকটি ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি ভিটামিন সি ও ডি যুক্ত খাবার খেয়েছি। সাথে ছিল গরম পানি।
ঔষধ বা গরম পানির বাইরে আমি কিছু ঘরোয়া টেকনিক অবলম্বন করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ঔষধের চেয়েও এই ঘরোয়া টেকনিকটা বেশি ইফেক্টিভ মনে হয়েছে। আমার মনে হয় করোনায় আক্রান্ত হলেই নয়, সুস্থ অবস্থায়ও আমাদের সকলকেই নিম্নোক্ত টেকনিকগুলো অনুসরণ করা উচিত। আপনাদের সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করলাম, যদি কেউ উপকার পান, সেটাই আমার সার্থকতা-
তিনবার করোনা পরীক্ষার পরে গত ২৮শে মে আমার করোনা নেগেটিভ ফলাফল এসেছিল। করোনার সঙ্গে সপ্তাহ দুয়েকের এই জার্নিতে আমার যেটা মনে হয়েছে, কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মনে সাহস রাখলেই করোনাকে জয় করা সম্ভব। সত্যি কথা বলতে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, করোনা একটা আতঙ্ক ছাড়া কিছুই না। আতঙ্কিত হলেই সমস্যা। আমি আবারও বলছি, কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
দেখুন, করোনা এখন দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে, উপসর্গহীন প্রচুর রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে, বিধিনিষেধ মানছে না অনেকেই। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে যে কেউই। কিছু ব্যাপার আমাদের সবার তাই মেনে চলা উচিত। নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন, হাঁচি ও কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জরুরী দরকার না থাকলে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যে এগুলোর কোন বিকল্প নেই।
দেশের জন্য কাজ করব বলে সরকারী চাকুরিতে এসেছিলাম, ৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় চাকরী শুরু করেছিলাম। করোনা বা অন্য কোন দুর্যোগ আমার ভেতর থেকে মানুষের জন্য কাজ করার নেশাটাকে দূর করতে পারবে না। এখন সুস্থ আছি, আবারও নতুন উদ্যোমে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করতে পারাটা গর্বের বিষয়, আনন্দের বিষয়। এই মিশনে আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসা আমার সঙ্গে থাকবে, এটাই আমার চাওয়া...